বকেয়ার চাপে উৎপাদন বন্ধ করল হিমুল
র্থিক সঙ্কট ছিলই। এ বার বন্ধ হয়ে গেল হিমুল। কবে খুলবে, কী করে উৎপাদন স্বাভাবিক হবে, তা স্পষ্ট নয়। ফলে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় দুধ সরবরাহ সংস্থার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। চলতি মাসে হিমুল কর্মী-অফিসারদের বেতন মিলবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। পাহাড় ও সমতলের দুধ উৎপাদকরা কবে তাঁদের বকেয়া টাকা পাবেন, তাও বোঝা যাচ্ছে না।
কেন বন্ধ হল তিন দশকের পুরনো এই সরকারি দুগ্ধ সমবায়? হিমুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভাল মানের দুধ মিলছে না। দুধের মধ্যে জল, চিনি, ছানার জলের পরিমাণ বেশি থাকছে। তাই উৎপাদনকারীদের কাছে দুধ ফেরত দিয়ে, দুধ প্যাকেটজাত করার কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে হিমুল, জানিয়েছেন সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও) পেম্বা শেরিং ভুটিয়া। গত সপ্তাহেও দিনে ১৩-১৫ হাজার লিটার দুধ প্যাকেটজাত করেছে হিমুল। গত শনিবার থেকে উৎপাদন শূন্য। দুধ উৎপাদকদের প্রশ্ন, হিমুলের বাতিল-করা দুধ বেসরকারি ডেয়ারিগুলো কিনে নিচ্ছে কী করে? তাঁদের অভিযোগ, ওই ডেয়ারিগুলির সঙ্গে হমুলের কিছু অসাধু কর্মীর যোগসাজশেই দুধ বাতিল হচ্ছে। বেসরকারি ডেয়ারিগুলো যেখানে ৩০ টাকা লিটার অবধি দর দিয়ে দুধ কেনে, সেখানে হিমুলের বাতিল-করা দুধ তাদের ২২-২৪ টাকা লিটার দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন উৎপাদকরা। তাঁদের প্রশ্ন, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সুবিধে পাইয়ে দিতেই কি চালু সরকারি সমবায়কে উঠে যেতে হল?
পেম্বা শেরিং ভুটিয়া অবশ্য অসাধু যোগসাজশের অভিযোগ খারিজ করে বলেছেন, “এমন কোনও দুর্নীতির কথা জানি না। গত এক সপ্তাহ ধরে যে দুধ আসছিল, তার মান ভাল ছিল না।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, খোলা বাজারে দুধের দাম বেশি বলে উৎপাদকরা ভাল মানের দুধ সেখানে বিক্রি করে, জল-মেশানো দুধ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে সরকারি সংস্থাকে।
হিমুলের দুধ সরবরাহ সমিতির সভাপতি নারায়ণচন্দ্র দাস বলেন, “খোলা বাজারে দুধের দাম অনেক বেশি। সরকারি সমবায়ে দুধ সরবরাহ করলে সরকার থেকে বিনা পয়সায় পশু টিকা, গোখাদ্যে ভর্তুকির মতো নানা সুবিধা মেলে। সেই জন্যই আমরা দুধ হিমুলে দিচ্ছিলাম।” তবে গত দু’বছরে হিমুলের কাছে দেড় কোটি টাকারও বেশি বকেয়া পড়ে রয়েছে দুধ উৎপাদকদের।
ওয়েস্ট বেঙ্গল কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ফেডারেশনের অধীনস্থ হিমুল সমবায়টি অনেক দিন ধরেই ধুঁকছে। ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারকে দিয়ে হিমুলের সমীক্ষা করায়। সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়, হিমুলকে বাঁচাতে যৌথ উদ্যোগ মডেলে চালাতে হবে, না হলে বিক্রি করে দিতে হবে। এর পরে ২০১২ সালে ‘পিপিপি মডেল’ অনুসারে হিমুল গড়া হবে বলে ঘোষণাও করেন তৎকালীন প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমান মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বৃহস্পতিবার বলেন, “দফতরের আধিকারিকদের একটি রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি। তা জমা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। হিমুলের চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেন, “হিমুলের উৎপাদন আপাতত বন্ধ রয়েছে। আমরা সরকারকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছি।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত মাসে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সচিব রাজীব কুমার হিমুল পরিদর্শন করেন। সেই সময় সংস্থার তরফে তাঁর কাছে আর্থিক সাহায্যের কথা বলা হয়। দুধ উৎপাদকদের বকেয়া মেটানোর জন্য ২ কোটি টাকা ছাড়াও পুনরুজ্জীবনের জন্য ২০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ চাওয়া হয়। এর আগেও অবশ্য সরকারি সহায়তা পেয়েছে হিমুলে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর বকেয়া মেটানোর জন্য ৫ কোটি টাকা এবং বৈদ্যুতিক কাজের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে ৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।
এখন ডান-বাম দুই কর্মী সংগঠনই চায়, দ্রুত সরকার উত্তরবঙ্গের এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুক। সিটুর হিমুল ডেয়ারি ফার্ম মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক বিজয় প্রধান বলেন, “আমরা চাই, সরকার এখনই এগিয়ে আসুক। নইলে হিমুল বাঁচবে না।” আর তৃণমূলের আইনটিটিইউসি জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ বলেন, “আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী, হিমুলের সিইও-র সঙ্গে কথা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।”
১৯৯১ সালে দুধের অভাবে প্রায় দু’মাস হিমুল বন্ধ ছিল। তার পর বিহারের বরৌনি থেকে নিয়মিত দুধ আনার ব্যবস্থা করে ফের হিমুল চালু করা হয়েছিল। কিন্তু ৫২ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ায় বরৌনির দুগ্ধ সমবায় মাস চারেক আগে থেকে দুধ সরবরাহ বন্ধ করেছে। প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকা বাকি থাকায় পাহাড়ের উৎপাদকরাও এখন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সমতলের উৎপাদকরা দুধ বাতিল হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বাইরেই বিক্রি করছেন বেশি। ফলে দুধের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। এখন কী করে আবার উৎপাদকদের আস্থা ফিরে পাবে হিমুল, তা-ই এখন চ্যালেঞ্জ এই সরকারের সামনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.