শীত বেশ জাঁকিয়েই পড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমে উঠেছে বাংলার মেলা সংস্কৃতি। উপলক্ষ ভিন্ন ভিন্ন হলেও উদযাপনের
রীতি কিন্তু সর্বত্রই এক। ভিড়ে ভিড়ে ছয়লাপ পশ্চিম বাংলার কিছু মেলার খবর উসকে দিক উত্সবের শীতার্ত মেজাজটাকে।
|
কল্পতরু উৎসব • কলকাতা
ভোর থেকেই শুরু হয়েছিল ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা আরও বেড়েছে। ১ জানুয়ারি সারাদিন এমনই ছিল দক্ষিণেশ্বর ও কাশীপুরের চিত্র। প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগমের মধ্য দিয়ে দু’জায়গাতেই মহাসমারোহে পালিত হল কল্পতরু উৎসব। ভোরের আলো ফোটার আগেই দক্ষিণেশ্বর ও কাশীপুর উদ্যানবাটীর গেটের সামনে দর্শনার্থী ও ভক্তদের ভিড় জমতে শুরু করে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ও কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বিকেল ৪টের সময়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের ভিড় ছিল। কাশীপুর উদ্যানবাটীতেও ভক্তের সংখ্যা ছিল ভালই। রাতে তা পৌঁছয় ২ লক্ষে। ভোর সাড়ে ৪টেয় মঙ্গলারতি দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এর পরে চলে শ্রীরামকৃষ্ণের বিশেষ পূজা ও হোম। পাশাপাশি, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উদ্যানবাটী প্রাঙ্গণে ভক্তিগীতি, ভজন, ধর্মসভা, নাচ, গান অনুষ্ঠিত হয়।
|
‘রং-মাটি-মানুষ’ মেলা • পশ্চিম মেদিনীপুর
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছিল ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমির ছবি ও কারুকলা বিষয়ক বার্ষিক প্রদর্শনী ও মেলা-‘রঙ-মাটি-মানুষ’। ২৪তম বর্ষে এ বার মেলার বিষয়: ‘লোকশিল্প’। ওই দিন সকালে ঝাড়গ্রাম শহরে প্রভাত ফেরিতে যোগ দিয়েছিলেন কয়েক হাজার শিল্পপ্রেমী। বিকালে শহরের ঘোড়াধরায় অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে সাতজন চিত্রশিল্পী একসঙ্গে ২৪টি প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রদর্শনী ও মেলার উদ্বোধন করেন। সংস্থার নিজস্ব রামকিঙ্কর গ্যালারিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে এ বার স্থান পেয়েছিল সংস্থার শিক্ষার্থীদের আঁকা লোকশিল্প বিষয়ক ৭০০টি ছবি এবং শিক্ষার্থীদের তৈরি কাজ। উৎসব উপলক্ষে প্রতিদিনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল নানা কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর্ট অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্র বলেন, “লোকশিল্প আমাদের শিকড়। এই শিকড়কে বাঁচিয়ে রাখার আর্তিই আমাদের উৎসবের মূল সুর।” তিনি আরও জানিয়েছেন, উৎসব উপলক্ষে কলকাতা থেকে আসা চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি সুলভ দামে বিক্রি করে সেই টাকায় শহরের ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০০ জন খুদেকে এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী দেওয়া হবে।
|
পৌষমেলা • বীরভূম
সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হল ১১৮তম পৌষমেলা। চার দিন ধরে বিশ্বভারতীর এই পৌষ উৎসবে সামিল হয়েছিলেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন পর্যটক ও রবীন্দ্রনুরাগীরা। তিন দিনের পৌষ উৎসব অন্যান্য বারের মতো এ বারও এক দিন বাড়িয়েছিলেনন উদ্যোক্তারা। বিনোদনমঞ্চে লোকসংস্কৃতির আসর ভাঙার পর বাউল, ফকিররা ফিরেছেন অন্য ঠিকানায়। যুব প্রজন্মের চেতনা জাগাতে বেদ্যবাটি উৎসব মেলা কমিটি ‘রবীন্দ্রনাথ ও নেতাজি সুভাষ’ বিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। কমিটির পক্ষে নরেন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “মণীষীদের আদর্শ যুব প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। পৌষমেলা উদ্যোক্তাদের পক্ষে বিশ্বভারতী কর্মিমণ্ডলীর যুগ্ম সম্পাদক সৌগত সামন্ত বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এ বারের উৎসব থেকে কিছু বিষয় আমাদের সামনে উঠে এসেছে। আগামী উৎসবের সময়ে ওই সব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
|
বিভূতি মেলা • উত্তর ২৪ পরগনা
আট দিনের ‘বিভূতি মেলা’ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল গোপালনগরের হরিপদ ইনস্টিটিউশনের মাঠে। মেলার আয়োজক, স্থানীয় বিভূতিভূষণ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি। প্রথম দিন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা থেকে পাঠ, তাঁর মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে মেলার সূচনা হয়। উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার। মেলা এ বার ১৯ বছরে পড়ল। ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিভূতিভূষণ সম্পর্কে আলোচনা ও স্মৃতিচারণা, বাউল গান, ম্যাজিক শো, সঙ্গীত, যাত্রা, সাহিত্যবাসর, গুণিজন সংবর্ধনা-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছিল গোবরডাঙার নাট্যসংস্থা ‘নকশা’র নাটক ‘ইচ্ছাপূরণ’। বিভূতিভূষণ মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায় ও আশিস বসু বলেন, “বিভূতিভূষণের ১১৯তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করতে এই মেলার আয়োজন। আমরা চাই, সাহিত্যিকের সৃষ্টি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাক।”
|
শুশুনিয়া মেলা • বাঁকুড়া
শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে এক আদিবাসী পরব এ বছর ১৭ বছরে পা দিল। পাহাড়ের গায়ে শিউলিবোনা গ্রামেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মেলার স্থানীয় নাম ‘খেরওয়াল তুকৈ’ অর্থাত্ মানুষের মেলা। আদিবাসী সংস্কৃতির নানা দিক তুলে ধরতেই এই আয়োজন। প্রতি ইংরেজি বছরের শেষ দিন এই মেলা শুরু হয়। প্রথম দু’দিন মেলাকে ঘিরে মূল উত্সব ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। আদিবাসী নৃত্য, গান, পুরুলিয়ার ছো-এর সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁশাই ও বীরভূমের বহুরূপীদেরও দেখা মেলে এই মেলায়। মেলার একটি প্রদর্শনীতে সাঁওতালদের ইতিহাস, তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির নানা দিক তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে মেলায় অজস্র দোকানে চলে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের বিকিকিনি। তার মধ্যে রয়েছে টেরাকোটা, বাস্তার শিল্প নিদর্শন, চুনা পাথর কেটে বানানো বিভিন্ন মূর্তি ও ঘর সাজানোর সামগ্রি। এই শুশুনিয়া মেলা বাঁকুড়া জেলার অসংখ্য দরিদ্র মানুষের রুজিরুটিও বটে।
|
পরিবেশ মেলা • পশ্চিম মেদিনীপুর
সম্প্রতি ‘পরিবেশ মেলা ২০১২’ অনুষ্ঠিত হল ঝাড়গ্রামে। শহরের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের মাঠে দু’দিন ব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছিল ‘ভূগোল ও পরিবেশ বিকাশ কেন্দ্র’। মেলার উদ্বোধন করেন পরিবেশবিদ ও বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ ভাবনা বিষয়ক পোস্টার প্রদর্শনী, বসে আঁকো, ক্যুইজ, বিভিন্ন সেমিনার, মডেল প্রদর্শনী, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও পরিবেশ বিষয়ক নাটকের আয়োজন করা হয় মেলায়। এ ছাড়া উষ্ণায়নের প্রভাবে পৃথিবীর এবং জঙ্গল ধ্বংসের ফলে পরিবেশের কী ক্ষতি হচ্ছে তাও মডেলের সাহায্যে প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা করা হয়। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই মেলা।
|
ময়নাপুর কৃষিমেলা • বাঁকুড়া
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর টাউন থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ময়নাপুর গ্রাম। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে এখানে কৃষিজাত ফসলের প্রদর্শনী ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার সঙ্গে মিলিয়ে এই মেলার নাম ময়নাপুর কৃষি মেলা। এ বছর মেলা শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি। শাকসব্জি-সহ বিভিন্ন গাছের দেখা যেমন মেলে, তেমনই স্থানীয় মানুষের বানানো নানা কৃষিজ সামগ্রী, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, মুখোরোচক টুকিটাকি খাবারদাবার, বাচ্চাদের খেলনা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এ এক পরিপূর্ণ মেলা। স্থানীয় মানুষের উত্সাহে এবং পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। এ ছাড়াও এই মেলায় পাওয়া যায় বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটার বাহারি খেলনা-সহ ঘর সাজানোর জিনিসপত্রও। যার নকশা ও কারুকার্য সবার নজর কাড়ে।
|
লোকসংস্কৃতি উৎসব • পূর্ব মেদিনীপুর
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে দু’দিন ব্যাপী জেলা লোকসংস্কৃতি উৎসব হল কাঁথিতে। কাঁথি টাউন হলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসবের সূচনা করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারি। ছিলেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন, বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারি, কাঁথির মহকুমাশাসক সুমিত গুপ্ত, পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারি, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কথা দাস, মহকুমা আধিকারিক সন্তু বিশ্বাস প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জেলা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত মণ্ডল। শিশিরবাবু বলেন, “পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ লোক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এই উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য।” উৎসবে টুসু ভাদুর গান থেকে পটের গান, সঙের গান, চণ্ডীমঙ্গল, বাঁশের বাঁশি, ললিতা পালা, আদিবাসী নৃত্য নন্দনাচ, বাউল গান-সহ একাধিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
|
তাম্রলিপ্ত মেলা • পূর্ব মেদিনীপুর
সাত দিন ব্যাপী তাম্রলিপ্ত জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও কুটীরশিল্প মেলা অনুষ্ঠিত হল তমলুক রাজ ময়দানে। মেলার উদ্বোধন করেন রাজ্যের জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতর মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন তমলুকের পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি, প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ। মেলা কমিটির সম্পাদক তথা তমলুকের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় জানান, এই মেলায় জনস্বাস্থ্য, ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনাসভা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির আয়োজিত হয়েছে। সুভাষচন্দ্র বসুর তমলুক শহরে আগমনের ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে রাজবাড়িতে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনও করা হয়েছিল। পাশাপাশি, কৃষি ও গ্রামীণ কুটীর শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
|
দামোদর মেলা • হাওড়া
আমতার রসপুরে দামোদরের তীরে বসেছিল দামোদর মেলা। শান্ত দামোদরের চরে মনকাড়া পরিবেশে জমে উঠেছিল সেই মেলা। কচিকাঁচাদের হৈ-হুল্লোড়, পসরা সাজিয়ে বসা সন্তুষ্ট দোকানির হাসিমুখ, নদীবাঁধ থেকে চরের দিকে আসা অবিরাম জনস্রোত— মেলা হয়ে উঠেছিল হরেক কিসিমের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। মেলার উদ্যোক্তা স্থানীয় কলিকাতা গ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান যেমন ছিল অন্য দিকে তেমনি ছিল বাউল, ছো নাচ। যাত্রার মতো গ্রামীণ বাংলার লোক সংস্কৃতিতে জমে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এ ছাড়াও ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের স্টলে মূর্তি ও মডেলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ এবং জীবজগতের বিবর্তনের কথা। বাল্য-বিবাহ, শিশু ও নারী পাচার প্রথা প্রতিরোধ নিয়ে ছিল আলোচনাসভাও।
|
রাসমেলা • কোচবিহার
এ বছর কোচবিহারের রাসমেলায় আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল হস্তশিল্পের স্টলগুলি। পাটজাত সামগ্রী থেকে কাঠের সামগ্রী, ব্যাগ, শীতবস্ত্র কোনও কিছুই বাদ ছিল না। ক্রেতারা জানান, “এক ছাদের নীচে এত কিছু সব সময় মেলে না।” মেলায় ছিল বইয়ের প্রচুর স্টলও। লক্ষ্মীর পাঁচালি থেকে ঠাকুরমার ঝুলি সবই মিলছে সেখানে। ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের বই সংগ্রহ করেছেন। নজর কেড়েছে ‘লাইটিং বার্ড’ও। প্লাস্টিকের তৈরি ওই পাখিদের শরীরে আলো জ্বলছে। খুদেরা ওই পাখি কিনেছে উত্সাহের সঙ্গে। দর্শনার্থীদের রাতে বাড়ি ফেরার জন্য উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম-এর পক্ষ থেকে মেলা স্পেশাল বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিগম সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই দিনগুলিতে দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, আলিপুরদুয়ার ছাড়াও কোচবিহার শহরের লাগোয়া বিভিন্ন রুটে ওই বাসগুলি চালানো হয়েছে। নানা রঙের হাওয়াই মিঠাইয়েরও পসরাও ছিল রাসমেলায়।
|
নন্দিনী মেলা • পূর্ব মেদিনীপুর
সাত দিন ব্যাপী নন্দিনী মেলা অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি দিঘার দিশারি মাঠে। রামনগর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির যৌথ উদ্যোগে এই মেলা আয়োজন করা হয়। রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত দাস জানান, স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্য বিপণনের ব্যবস্থা ও দিঘার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই দিঘায় নন্দিনী মেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল এই মেলায়।
|
মিলন মেলা • পূর্ব মেদিনীপুর
সাত দিন ব্যাপী মিলন মেলা ও প্রদর্শনী হল বাজকুল কলেজ মাঠে। মেলার আয়োজক ছিল বাজকুল ইউনাইটেড ফোরাম। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রসারের এই মেলার মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা শিবির। শুধু তাই নয়, আলোচনা সভা, বস্ত্র বিতরণ ও দুস্থ অথচ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনোর নানা উপকরণ দিয়ে সাহায্য করা হয় অনুষ্ঠানে।
|
দাসপুর উৎসব • পশ্চিম মেদিনীপুর
দাসপুর সবুজ সঙ্ঘ ক্লাবের হীরক জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল দাসপুর উৎসব ও মেলা। মেলার উদ্বোধন করেন সুরথপুর মঠের অধ্যক্ষ ধ্যানানন্দ গিরি। দাসপুর শহরের নারায়ণ ললিত স্মৃতি ফুটবল মাঠে এই মেলা আয়োজিত হয়। মেলা উপলক্ষে হরেক রকমের স্টল ছিল সেখানে। এ ছাড়া প্রতি দিনই কলকাতা ও স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভার আয়োজনও করা হয়। মেলা শেষে উদ্যোক্তাদের তরফে পুলক দাস ও অরুণ কুমার বাঙাল বলেন, “চেষ্টা করব যাতে এ বার থেকে ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছরই এই মেলা করা যায়।”
|
বিদ্যুৎ মেলা • নদিয়া
হুকিং বন্ধ করার পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দিনভর হরিণঘাটার বিরহীতে অনুষ্ঠিত হল গ্রাহক সংগ্রহ মেলা। মদনপুর বিদ্যুৎ বন্টন কেন্দ্র আয়োজিত ওই মেলায় আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েকশো মানুষ এসেছিলেন। ওই কেন্দ্রের আধিকারিক সত্যরঞ্জন রায় বলেন, “মেলায় আগত অনেকে বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের শ্রীঘ্রই সংযোগ দেওয়া হবে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুয়ায়ী আগামী দিনে আরও এ রকম মেলা অনুষ্ঠিত হবে।”
|
লিটল্ ম্যাগাজিন মেলা • দার্জিলিং
শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অষ্টম লিটল্ ম্যাগাজিন মেলা। মেলার উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। প্রাবন্ধিক অশ্রুকুমার শিকদার, নেপালি ভাষার লেখক ইন্দ্র বাহাদুর রাই, লেপচা ভাষার লেখক পিটি লেপচাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ‘এবং বিকল্প’ এবং ‘ডেগর’ লিটল ম্যাগাজিনকেও সংবর্ধিত করা হয়।
|
বইমেলা • বীরভূম
১১ জানুয়ারি সাঁইথিয়ায় বইমেলা শুরু হল, চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলার স্থান স্থানীয় শশীভূষণ দত্ত বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠ। প্রথম থেকেই ওইখানে হয়ে আসছে মেলাটি। সাঁইথিয়ায় পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারখ বলেন, “এ বার তৃতীয় বর্ষে পড়েছে এই মেলা। কলকাতার বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা হাজির হয়েছে এই মেলায়।”
|
বইমেলা • হুগলি
শেষ হল দ্বাদশ উত্তরপাড়া বইমেলা। উত্তরপাড়া স্টেশন-সংলগ্ন মনমোহন উদ্যানে ওই মেলার আয়োজন করেছিল ‘সমন্বয়’। মেলার উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন। উপস্থিত ছিলেন কবি বীথি চট্টোপাধ্যায়-সহ সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টজনেরা। সমন্বয়ের সম্পাদক দিলীপ যাদব জানান, ৭২টি বইয়ের স্টল ছিল। লিটল্ ম্যাগাজিনেরও স্টল ছিল। এ ছাড়াও সংস্কৃতি চর্চার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং কম্পিউটার সংস্থা স্টল দিয়েছিল। মেলা চত্বরে শিল্পীরা ছবি আঁকেন। গিটার বাজিয়ে চলে সান্ধ্য-আড্ডা। দিলীপবাবুর দাবি, “প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।” বইয়ের বিকিকিনি ছাড়াও মেলার মঞ্চে প্রতিদিন হরেক রকম অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এই সব অনুষ্ঠানের তালিকায় ছিল গান, নাচ, আবৃত্তি, ক্যুইজ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ প্রভৃতি।
|
কৃষ্ণসায়র উৎসব • বর্ধমান
৪ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধমানে অনুষ্ঠিত হল কৃষ্ণসায়র উৎসব। পরিবেশকাননের একটি বৈঠকে সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার ও মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়-সহ কৃষ্ণসায়র অছি পরিষদের সদস্যেরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। উৎসব উপলক্ষে হস্তশিল্প মেলা, পুষ্প-প্রদর্শনী, নৌকা বাইচ-সহ নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
|
লোক উৎসব • পূর্ব মেদিনীপুর
লুপ্তপ্রায় লোক সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে লোক উৎসব ও মেলা আয়োজন করা হয়েছিল হলদিয়ার মহিষাদলে। বাসুলিয়া গণমৈত্রী ময়দানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাম্রলিপ্ত লোক সংস্কৃতি উন্নয়ন সমিতি। অনুষ্ঠানের ৮ম বর্ষ উপলক্ষে এলাকার হাসপাতাল মোড় থেকে রথতলা পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। লোকবাদ্য সহযোগে এই শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল জগঝম্প, বহুরূপী ও রণ-পা নৃত্য। পাঁচ দিন ব্যাপী এই উৎসবে লোক সংস্কৃতির নানা আঙ্গিক ফুটিয়ে তোলা হয়। কবিগান থেকে তরজা, লোকনাটক থেকে লোকসঙ্গীত পরিবেশিত হয় উৎসবে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল, ট্রেনের গায়ক হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার লোকসঙ্গীত শিল্পী গোপীনাথ মণ্ডলের গান, মুর্শিদাবাদের সনাতন হাজরার পাতার বাঁশি, মুর্শিদাবাদের বুলবুল আলকাপ গোষ্ঠীর আঞ্চলিক নাটক ইত্যাদি। মেলার শেষ দিনে ছিল হারিয়ে যাওয়া পিঠে পুলির প্রদর্শনী।
|
বসিরহাট মেলা • উত্তর ২৪ পরগনা
বসিরহাট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হল ১৬ তম ‘বসিরহাট মেলা’। এই উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা পরিক্রমা করে গোটা শহর। মেলার উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক অমর মিত্র। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার-সহ বিশিষ্ট জনেরা। উদ্যোক্তারা জানান, মেলায় ৯৮টি স্টল ছিল। শিশু-কিশোরদের জন্য নাগরদোলা-সহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। পাশাপাশি আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
|
বিদ্যাসাগর মেলা • পূর্ব মেদিনীপুর
সম্প্রতি উদ্বোধন হল ১৮তম বিদ্যাসাগর মেলার। পটাশপুর ২ ব্লকের প্রতাপদিঘি বাজার লাগোয়া মেলা ময়দানে আয়োজিত এই মেলার উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। ছিলেন পটাশপুরের বিধায়ক জ্যোতির্ময় করও। মেলা কমিটির তরফে সীতারাম পাহাড়ি জানান, এলাকায় শিল্প-সংস্কৃতি প্রসারের লক্ষ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ের স্টল, প্রদর্শনী, আলোচনাসভা, সচেতনতাসভা, লোকসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রক্তদান শিবির, চিকিৎসা শিবির, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও আয়োজন ছিল মেলায়।
|
রবীন্দ্র মেলা • পূর্ব মেদিনীপুর
বছরের শুরুতেই রবীন্দ্র মেলা অনুষ্ঠিত হল এগরা ১ ব্লকের বালিগেড়িয়া হাইস্কুল মাঠে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী রেখা প্রধান প্রমুখ। কর্মকর্তা ইন্দ্রভূষণ প্রধান জানান, মেলায় রাজ্য সরকারের কয়েকটি দফতরের স্টল ও প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল।
|
বোল্লা কালী পুজো মেলা • দক্ষিণ দিনাজপুর
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে বোল্লা গ্রাম। উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ বোল্লা কালী পুজো এখানেই হয়। প্রতিবারের মতো এ বারেও পুজোকে ঘিরে শুরু হয়েছিল মেলা। মন্দিরে গভীর রাত অবধি প্রায় পাঁচ হাজার মানতের পাঁঠা বলি দিয়ে শুরু হয় সাড়ে সাত হাত উঁচু বোল্লা রক্ষা কালীর পুজো। মেলা কমিটির পক্ষে অতীন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের জমানো ভক্তদের মানতের সোনার টিপ, দুল ও নথ গলিয়ে এবারে ৪৫ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনার মালা বানানো হয়েছিল দেবীর জন্য। প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য মেনে পাঁঠা বলির পাশাপাশি ভক্তরা এখানে দেবীকে কয়েকশো কুইন্টাল চিনির খাজা, বাতাসা, কদমা পুজো দেন। পায়রাও উৎসর্গ করেন। মেলাকে ঘিরে লক্ষাধিক মানুযের সমাবেশ ঘটে বলে এ বারেও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মেলায় পুতুল নাচ, নাগরদোলা, সার্কাস, জাদু-সহ খাবার, খেলনা ও মণিহারির পসরা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন। মেলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল মিষ্টির দোকানগুলিতে তৈরি ১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৬ ইঞ্চি লম্বা ল্যাংচা, চমচম, বিশাল চিনির কদমা ও খাজা। |
|