খবর এক মুঠো
গত ১৬ জুন থেকে সাতশো বছরের একটি ‘ভ্যাম্পায়ার’-কঙ্কালের প্রদর্শনী হল বুলগেরিয়ায়। রাজধানী সোফিয়ার ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে এই কঙ্কালটি দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু কৌতূহলী মানুষ। জুনের গোড়ায় এ ধরনের দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছিল কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী শহর সোজোপোল-এর একটি মঠে। এর পর থেকেই সাড়া পড়ে যায় সংবাদমাধ্যমে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের খুঁজে পাওয়া কঙ্কাল দু’টির হৃদপিণ্ডের অংশে গাঁথা ছিল একটি করে লোহার রড। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেই সময়কার গ্রামীণ লোকগাথা অনুযায়ী সমাজের পক্ষে ‘ক্ষতিকর’ মানুষরা যাতে মৃত্যুর পর ভ্যাম্পায়ার হয়ে ফিরে না আসে সেই ভয়ে তাদের মৃতদেহের বুকে একটি লোহার রড গেঁথে দেওয়া হত। ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ডিরেক্টর বি দিমিত্রোভ জানিয়েছেন, ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় বলকান দেশগুলিতে এই ধরনের কুপ্রথার প্রভুত প্রচলন ছিল।

ফের এলভিস আসছেন মঞ্চ কাঁপাতে! না, কল্পকথা নয়, সত্যি! তবে তফাত হল এই এলভিস রক্তমাংসের নন, প্রযুক্তির ফসল। ডিজিট্যাল প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁকে দর্শকদের সামনে হাজির করবে ‘দ্য ডিজিট্যাল ডোমেন মিডিয়া গ্রুপ’ নামে এক মার্কিন সংস্থা। স্কট রস ও স্ট্যান উইনস্টনের সঙ্গে মিলিত ভাবে ১৯৯৩ সালে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ‘টাইটানিক’ ও ‘অবতার’ খ্যাত হলিউডের বিখ্যাত চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন। এর আগে এঁরা কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে মানব দেহের ‘ইমেজ’ তৈরি করেছেন ‘দ্য কিউরিয়াস কেস অফ বেঞ্জামিন বাটন’, ‘ট্রন: লেগাসি’ ও ‘এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস’ ছবিগুলিতে। বিভিন্ন টেলিভিশন ও লাইভ অনুষ্ঠানের জন্য ‘রক অ্যান্ড রোল’-এর কিংবদন্তী গায়ক এলভিস প্রেসলিরও ‘ডিজিট্যাল ইমেজ’ বা ‘হলোগ্রাম’ বানাবে এই সংস্থা। ‘হলোগ্রাম’ বা থ্রি-ডি ইমেজ আসলে অপটিক্যাল ইলিউশনের ফলে তৈরি করা যায়। সাম্প্রতিককালে এই ধরনের প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার হলেও এর শেকড় খুঁজে পাওয়া যায় ভিক্টোরিও যুগে। অপটিক্যাল ইলিউশনের ফলে তৈরি ইমেজ বেশি পরিচিত পেপার’স গোস্ট নামে। এটি তৈরি করতে ইমেজকে একটি বাঁকানো কাঁচের উপর ফেলা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় এলভিসকে ফেরানো উদ্যোগে অবশ্যই খুশি ‘এলভিস প্রেসলি এন্টারপ্রাইজ’। তারা জানিয়েছেন, এলভিস-ম্যাজিক ও তাঁর সঙ্গীত আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনার এটি একটি অভিনব প্রক্রিয়া।

কোচবিহার শহরের প্রাচীন ঐতিহ্যময় মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম হরিপুর শিবমন্দির। শহরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অসম রাজ্যের বৈষ্ণব ধর্মগুরু শঙ্করদেবের স্মৃতি বিজড়িত মধুপুর ধাম কিছুটা অতিক্রম করে তোর্সা নদীর বাঁধের ধার ঘেঁষে রয়েছে এই মন্দির। পশ্চিমমুখী মন্দিরটির আকৃতি চৌকোণা। মন্দিরে চার চালা আকৃতির পাকা ছাদ এবং উপরের দিকটি ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। মাথায় রয়েছে ত্রিশূল। মন্দিরের প্রবেশ পথ দু’টি। প্রথম প্রবেশদ্বারের কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে দ্বিতীয় প্রবেশদ্বার। দ্বিতীয় প্রবেশদ্বারে কোনও দরজা নেই। সেখানে সাদা পাথরের মেঝের মাঝখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। এটি হরিহর শিবলিঙ্গ নামে পরিচিত। জানা যায়, এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল মহারাজা ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে (১৭৬৫-১৭৮৩)। কোচবিহারের রাজারা ছিলেন শৈব ধর্মের উপাসক। সম্ভবত সেই কারণে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। মন্দিরটি বর্তমানে কোচবিহারের দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের অধীন। গাছগাছালির ছায়াভরা গ্রামীণ পরিবেশে এই মন্দির মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মন্দির সংলগ্ন একটি জলাশয় রয়েছে। আবর্জনার স্তূপ গ্রাস করেছে জলাশয়টিকে। শোনা যায়, মন্দিরটি নাকি ক্রমাগত মাটির নীচে বসে যাচ্ছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা মনে করেন, হরিহর শিব জাগ্রত। বনবীথি তলে এক শান্ত পরিবেশে জাগ্রত দেবতার মন্দির আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এক অপূর্ব কালীমূর্তি। নাম শবশিবা মাতা। অর্থ্যাৎ, শবদেহের উপরে ভোলানাথ। তার উপরে দণ্ডায়মান মাতা। প্রতি বছর ৮ জ্যৈষ্ঠ থেকে টানা চার দিন দেবী পূজিত হন মন্তেশ্বরের খ্যাদরা গ্রামে। পুজো ঘিরে শুরু হয় উৎসব। বসে মেলাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, প্রায় ৫০০-৬০০ বছর আগে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু প্রয়াগের কুম্ভমেলায় শবশিবা মাতার মূর্তি দেখতে পেয়েছিলেন। সেই মূর্তির অনুকরণে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু নবদ্বীপের ব্যাধরাপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন শবশিবা মাতার মূর্তি। মন্তেশ্বরের খ্যাদরা গ্রামের বাসিন্দারা নবদ্বীপের রাসে সেই মূর্তি দেখে অনুপ্রাণিত হন। প্রায় ২৫০ বছর আগে তাঁরা দেবীর প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামে। সেই থেকে প্রতি বছর গ্রামে পূজিত হন দেবী। শুধু খ্যাদরা গ্রামই নয়, আশপাশের পারুলিয়া, জুগ্রাম, বামুনিয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারাও পুজো উপলক্ষে ভিড় জমান। গ্রামের বাসিন্দা বর্ষীয়ান অমর চক্রবর্তীর কথায়, “বিয়ের পরে কনেকে নিয়ে যাওয়া বা আসার সময়ে প্রত্যেকে মন্দিরে আসেন। দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন।” গ্রামে পুজো উপলক্ষে বসে মেলা। পসরা সাজিয়ে আসেন দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা। বসে যাত্রার আসর। গ্রামবাসী সৌরেন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এই পুজোই আসলে আমাদের গ্রামের দুর্গোৎসব। শবশিবা মায়ের পুজোয় যা ধুম হয়, তা দুর্গা পুজোতেও হয় না।” নিয়ম অনুযায়ী, পুজোর শুরুতেই গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা মন্দিরের পাশে জরুনি পুকুরে স্নান করে এক সঙ্গে দণ্ডী কাটতে কাটতে মন্দিরে গিয়ে মানত করেন, পুজো দেন। দেবীর বিসর্জনে কোনও শোভাযাত্রা হয় না গ্রামে। ওই জরুনি পুকুরে কার্যত নিঃশব্দেই দেবীর বিসর্জন হয়।

সম্প্রতি অসমে প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও খননকার্য নিয়ে একটি সমীক্ষা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অসমে এমন অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে যেগুলি সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে। সমগ্র বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জানকীবল্লভ পট্টনায়ক। প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও খননকার্যে ব্যর্থতার বিষয়ে সম্প্রতি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) ও রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতরের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তিনি। বৈঠকে তিনি জানান, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব মিলিয়ে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে, ওড়িশা ছাড়া আর কোনও রাজ্যের কোনও প্রত্নস্থল ইউনেস্কোর ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় নেই। তাঁর মতে, মাজুলি ও প্রাগজ্যোতিষপুরকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য। তিনি আরও জানান, শিবসাগরের চড়াইদেও এলাকায় মিশরের পিরামিডের আদলে বানানো রাজাদের সমাধি বা মৈদাম ও তেজপুরের বামুনি পাহাড়ে অষ্টম শতাব্দীর প্রস্তর মন্দির, উমানন্দ, নর্থব্রুক গেট, জয়সাগর, আজান ফকিরের দরগা, বামুনি পাহাড়, সূর্য পাহাড়, কামাখ্যা ও ভুবনেশ্বরী মন্দির, গরগাঁওয়ের কারেং ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। আর তা সম্ভব হবে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও এএসআই-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।