‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে...’

‘নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ/স্বদেশের তরে যা করেই হোক রাখিবেই সে জীবন।’ এ হেন নন্দলালের জন্ম যাঁর কলমে তিনি আরও অনেক কিছুর স্রষ্টা। ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ প্রায় পাঁচশো সঙ্গীত সৃষ্টি করে বাংলা সংস্কৃতির আঙিনায় সঙ্গীতের এক ধারা নিয়ে আসার পাশাপাশি বাংলা নাট্য জগতেও তিনি ঘটিয়ে দিয়েছিলেন নিঃশব্দ এক বিপ্লব। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়— আজও বাঙালি মানসে ডিএল রায় নামেই বেশি পরিচিত। গত ১৯ জুলাই ছিল তাঁর জন্মবার্ষিকী এবং এ বছর তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষও। সেই শুভ ক্ষণ উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য।

দিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দেওয়ান ছিলেন কার্তিকেয়চন্দ্র রায়। তাঁর স্ত্রী প্রসন্নময়ীদেবী শান্তিপুরের অদ্বৈতাচার্য পরিবারের মেয়ে। ৪ শ্রাবণ ১২৭০ বঙ্গাব্দ অর্থাত্ ১৯ জুলাই ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে এই দম্পতির সপ্তম পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। নাম রাখা হয় দ্বিজেন্দ্রলাল। পরবর্তী জীবনে এই দ্বিজেন্দ্রলালই বাংলা-সহ সারা ভারতবর্ষে নিজ কীর্তিতেই খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিলেন। পেশায় সরকারি আমলা ছিলেন, কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতোই তাঁর সৃষ্ট গান ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’ এখনও উত্সাহের সঙ্গেই চর্চিত হয় বঙ্গ সমাজে। পেশাগত কারণে সরাসরি জাতীয়তা আন্দোলনে অংশ নিতে না পারলেও নাটক ও দেশাত্মবোধক গান লিখে তিনি পরোক্ষ ও স্পষ্ট ভাবে এই আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তাঁর পরিচিতির গণ্ডি ছিল খুবই ছোট। আসলে কবি-নাট্যকার-গীতিকার-সুরকার-গায়ক— হিসেবেই আপামর বাঙালির কাছে তিনি ‘ডিএল রায়’, এক অতি গুণী ব্যক্তিত্ব।

পারিবারিক ঐতিহ্য
পারিবারিক ভাবে দ্বিজেন্দ্রলালদের পরিচিতি ছিল ‘চক্রবর্তী দেওয়ান’ হিসেবে। তবে বংশ গৌরব ও আভিজাত্যের পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এই পরিবারের ছিল পুরুষানুক্রমিক খ্যাতি ও প্রসিদ্ধি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাবা কার্তিকেয়চন্দ্র নিজে ছিলেন একজন সুপণ্ডিত, সাহিত্যিক এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। তিনি ইংরেজি, সংস্কৃত ও পার্সি ভাষায় যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। লিখেছিলেন কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের ইতিহাস। কার্তিকেয়চন্দ্র আত্মজীবনীও লিখেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে প্রথম দিকের আত্মজীবনীগুলির মধ্যে তাঁর লেখাটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হয়। ‘গীতমঞ্জরী’ কাব্যগ্রন্থ রচনাও তাঁর অসামান্য এক কীর্তি।

দ্বিজেন্দ্রলালের বড় দাদা রাজেন্দ্রলাল ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের এক পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর আর এক দাদা হরেন্দ্রলাল এবং এক বৌদি মোহিনীদেবী ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যস্রষ্টা। তা ছাড়া ডিএল রায়ের অন্যান্য দাদারাও বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

আর এ সবের ফলেই এই দেওয়ান পরিবারের সঙ্গে তত্কালীন বঙ্গদেশের বিশিষ্ট ও খ্যাতনামা মানুষ— বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখের সঙ্গে ছিল নিবিড় যোগাযোগ। কাজেই এমন পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা দ্বিজেন্দ্রলালের পক্ষে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ‘আর্যগাথা’ নামের একটি গানের বই প্রকাশ করাটা মোটেই আশ্চর্যের নয়। বারো থেকে সতেরো বছর বয়সে লিখেছিলেন এই লেখাগুলি। এবং পরবর্তী কালে তাই, ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকা সম্পাদনা করাও তাঁর কাছে খুবই স্বাভাবিক বিষয় ছিল।

শিক্ষা
কৃষ্ণনগরের পাঠশালাতেই দ্বিজেন্দ্রলালের পড়াশোনার সূত্রপাত। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিলেন। দু’বছর পর অর্থাত্ ১৮৮০ সালে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে এফএ পাশ করেন তিনি। পরে হুগলি কলেজ থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল বিএ এবং ১৮৮৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করেন। এর পর কিছু দিন ছাপড়ায় ‘রাভেলগঞ্জ মুখার্জী সেমিনারি’তে শিক্ষকতা করার পর সরকারি বৃত্তি পেয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন। ‘রয়্যাল এগ্রিকালচারাল কলেজ’ এবং ‘রয়্যাল এগ্রিকালচারাল সোসাইটি’ থেকে কৃষিবিদ্যায় ‘এফআরএএস’ এবং ‘এমআরএসি’ ও ‘এমআরএএস’ ডিগ্রি নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন ১৮৮৬ সালে। লন্ডনে থাকাকালীনই তাঁর বাবা ও মায়ের প্রয়াণ-সংবাদ পেয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল।

সাহিত্য ও সঙ্গীত চর্চা
ছোটবেলা থেকে যে চর্চার মধ্যে বড় হয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল, বিলেত গিয়ে সে ঘরানাটা একটু বদলে গেল। লন্ডনে থাকার সময় দ্বিজেন্দ্রলাল ইংরেজিতে অনেক কবিতা লিখেছিলেন। ১৮৮৬ সালে সেগুলি একত্রে গ্রন্থ রূপে প্রকাশ পায়— ‘দ্য লিরিক্স অফ ইন্ড’, এটাই তাঁর একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন তিনি পাশ্চাত্যসঙ্গীত শিক্ষাও শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলাল লিখছেন, ‘‘আমি সলজ্জে স্বীকার করি যে এককালে আমার ইংরাজি গানে বিশুদ্ধ ও আন্তরিক ঘৃণা ছিল।... ক্রমে বিলেতে প্রবাসে নানা বন্ধুর নিকট ছোটখাটো ইংরাজি গান শুনিতে শুনিতে ভাবিলাম ‘বাঃ এ মন্দই বা কি?’... শেষে আমার ইংরাজি গান শিখিবার প্রবৃত্তি হইল ও পয়সা দিয়া গান শিখিতে আরম্ভ করিলাম।’’

কৃষ্ণনগরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মূর্তি

পরে তিনি দেশে ফিরে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের শৈলী বাংলা গানে প্রয়োগ করেছিলেন চমৎকার ভাবে। অনুবাদ করেছেন বহু ইংরেজি ও আইরিশ গান। তবে পাশ্চাত্য সুরেই শুধু আটকে থাকেননি। ঢপ-খেয়াল, বাউল-কীর্তনের সুর-তাল প্রয়োগ করেছেন সুচারু ভাবে। কাব্যসঙ্গীতে প্রাচ্য সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্য রীতি হাল্কা ভাবে মিশিয়ে এক ধরনের গায়নরীতি সৃষ্টি করেছিলেন।

ডিএল রায় নাট্যকার হিসেবে বিপুল খ্যাতি অর্জন করলেও কবি ও গীতিকার হিসেবে মোটেও পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি গদ্যের প্রাণভোমরাকে স্থাপন করেছিলেন কাব্যের শরীরে। তাঁর সামগ্রিক কাজকে তিনটি ভাবে ভাঙা যায়— ব্যঙ্গ, সঙ্গীত ও কাব্য এবং নাটক। এগুলিও আবার তিন রকমের— পৌরাণিক-কাব্যিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক। তবে, মৌলিক লেখালেখির বাইরে দ্বিজেন্দ্রলাল শেক্সপিয়রের ‘ট্রাজেডি’কে অনুকরণ করতে গিয়ে তেমন সাফল্য পাননি।

কর্ম জীবন
দ্বিজেন্দ্রলাল প্রায় তিন বছর বিদেশে কাটানোর পর ফিরে এলেন নিজের দেশে। শোনা যায়, বিলেত থেকে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ জাতিচ্যুত প্রায়শ্চিত্তের বিধান দিয়েছিল। দ্বিজেন্দ্রলাল ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তোলেন ‘‘চীন গেলে জাতি যায় না, গোপনে অখাদ্য খাইলে জাতি যায় না প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয় না, তখন বিদ্যা শিক্ষার্থে বিলাত গেলে জাতি যাইবে কেন?”

যাই হোক, বিলেতের কৃষিবিদ্যার ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও তিনি এ বার নিলেন জমি জরিপ ও কর মূল্যায়ণের প্রশিক্ষণ। তার পর যোগ দিলেন সরকারি দফতরে, কর্মস্থল হল মধ্যপ্রদেশ। পরে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজে যোগ দিলেন দিনাজপুরে। কিন্তু স্বাদেশিকতায় বিশ্বাসী হওয়ায় তাঁকে ক্রমাগত বদলি করা হতে লাগল। ফলে সাহিত্য নির্মাণে বাধা পড়তে শুরু করে। মনের চাপা কষ্ট থেকে সৃষ্টি হতে থাকে নানা রকমের সঙ্গীত।

১৯০৬ সালে গয়াতে বদলি হয় তাঁর। আর এখানেই রচিত হয়, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার...’, নির্মাণ হয় দু’টি বিখ্যাত নাটক— ‘মেবার পতন’ ও ‘নুরজাহান’। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৯১৩ সালে কর্ম জীবন থেকে অবসর নিয়েছিলেন। আর তার দু’মাসের মধ্যেই অর্থাত্ ১৯১৩ সালের ১৭ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

দাম্পত্য জীবন
১৮৮৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক ও ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম ব্যক্তিত্ব প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালাদেবীর সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই সন্তান— দিলীপকুমার রায় ও মীরা রায়। কিন্তু দাম্পত্য জীবন ১৫ বছর পেরোতে না-পেরোতেই ১৯০৩ সালে আচমকাই চলে গেলেন সুরবালা। একা হয়ে পড়লেন ডিএল রায়। তার ঠিক ১০ বছর পর সেই একাকীত্ব ঘোচে তাঁর, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর!

রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটলমেন্ট অফিসার হিসেবে আসেন দ্বিজেন্দ্রলাল। কৃষকদের জমির অধিকার নিয়ে বাংলার তত্কালীন ইংরেজ গভর্নরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। কাজেই সরকারি সুনজর থেকে তিনি বঞ্চিত হলেন আবার।

স্ত্রী সুরবালার মৃত্যুর পর ১৯০৫ সালে বদলি হয়ে এলেন খুলনায়। বঙ্গভঙ্গের পর ফের দুই বাংলা এক করার দাবিতে সেখানে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেন ডিএল রায়। আর এই সময়েই তাঁর কলম থেকে বেরিয়েছিল প্রচুর দেশাত্মবোধক সঙ্গীত। সে গানগুলো আজও সমান ভাবে জনপ্রিয় বঙ্গবাসীর কাছে। দ্বিজেন্দ্রলাল মেয়েদের উন্নতির জন্য তো বটেই, হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধেও কলম ধরেছিলেন।

১৯০৫ সালে তাঁর উদ্যোগে গঠিত হয় ‘পূর্ণিমা মিলন’। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব— ললিতচন্দ্র মিত্র, কৈলাসচন্দ্র বসু, দামোদর মুখোপাধ্যায়, অমৃতলাল বসু, সারদাচরণ মিত্র, রজনীকান্ত সেন, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রমুখ।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সম্পর্ক
রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলালের মধ্যে প্রথম যৌবনে সখ্য গড়ে ওঠার মূল কারণ ছিল একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাবোধ। দু’জনেরই ছিল উচ্চকুলজাত আভিজাত্য। তা ছাড়া কবিতা, গান রচনা এবং নাট্যপ্রীতি উভয়কে কাছে টেনেছিল। দু’জনেই বিলেতে প্রবাস-জীবন কাটিয়েছেন, ইংরেজি ও আইরিশ গানে মেতেছেন। দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতি রবীন্দ্রনাথের ছিল গভীর অনুরাগ। তাঁর আর্যগাথা, মন্দ্র, আষাঢ়ে— কাব্য ও হাসির গানের বড় সমর্থক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর ‘বিরহ’ নাটক উৎসর্গ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। ‘পূর্ণিমা মিলন’, ‘খামখেয়ালি সভা’য় দ্বিজেন্দ্রলাল হাসির গানের বন্যা বইয়ে দিতেন। তাতে গলা মেলাতেন রবীন্দ্রনাথ আর অন্যতম সহায়ক ছিলেন অতুলপ্রসাদ সেন।

দিজেন্দ্রলাল সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ
‘‘দ্বিজেন্দ্রলাল যখন বাংলার পাঠকসাধারণের নিকট পরিচিত ছিলেন না তখন হইতেই তাঁহার কবিত্বে আমি গভীর আনন্দ পাইয়াছি এবং তাঁহার প্রতিভার মহিমা স্বীকার করিতে কুণ্ঠিত হই নাই। দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গে আমার যে সম্বন্ধ সত্য, অর্থাৎ আমি যে তাঁর গুণপক্ষপাতী, এইটেই আসল কথা এবং এইটেই মনে রাখিবার যোগ্য। আমার দুর্ভাগ্যক্রমে এখনকার অনেক পাঠক
রবীন্দ্রনাথ। —ফাইল চিত্র।
দ্বিজেন্দ্রলালকে আমার প্রতিপক্ষশ্রেণীতে ভুক্ত করিয়া কলহের অবতারণা করিয়াছেন। অথচ আমি স্পর্ধা করিয়া বলিতে পারি এ কলহ আমার নহে এবং আমার হইতেই পারে না। পশ্চিম দেশের আঁধি হঠাৎ একটা উড়ো হাওয়ার কাঁধে চড়িয়া শয়ন বসন আসনের উপর এক পুরু ধুলা রাখিয়া চলিয়া যায়। আমাদের জীবনে অনেক সময়ে সেই ভুল-বোঝার আঁধি কোথা হইতে আসিয়া পড়ে তাহা বলিতেই পারি না। কিন্তু উপস্থিতমতো সেটা যত উৎপাতই হোক্ সেটা নিত্য নহে এবং বাঙালি পাঠকদের কাছে আমার নিবেদন এই যে, তাঁহারা এই ধুলা জমাইয়া রাখিবার চেষ্টা যেন না করেন, করিলেও কৃতকার্য হইতে পারিবেন না। কল্যাণীয় শ্রীমান দেবকুমার তাঁহার বন্ধুর জীবনীর ভূমিকায় আমাকে কয়েক ছত্র লিখিয়া দিতে অনুরোধ করিয়াছেন। এই উপলক্ষে আমি কেবলমাত্র এই কথাটি জানাইতে চাই যে, সাময়িক পত্রে যে-সকল সাময়িক আবর্জনা জমা হয় তাহা সাহিত্যের চিরসাময়িক উৎসব-সভার সামগ্রী নহে। দ্বিজেন্দ্রলালের সম্বন্ধে আমার যে পরিচয় স্মরণ করিয়া রাখিবার যোগ্য তাহা এই যে আমি অন্তরের সহিত তাঁহার প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করিয়াছি এবং আমার লেখায় বা আচরণে কখনো তাঁহার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করি নাই। — আর যাহা-কিছু অঘটন ঘটিয়াছে তাহা মায়া মাত্র, তাহার সম্পূর্ণ কারণ নির্ণয় করিতে আমি তো পারিই না, আর কেহ পারেন বলিয়া আমি বিশ্বাস করি না।’’

ডি এল রায়ের উল্লেখযোগ্য কিছু সৃষ্টি
পাশ্চাত্য সুর প্রয়োগ ও দেশপ্রেমের উন্মাদনার দৃষ্টান্ত ঢপ খেয়াল
ক) বঙ্গ আমার জননী আমার
খ) ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে
গ) যেদিন সুনীল জলধি হইতে
ঘ) ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা
ক) কি দিয়ে সাজাব মধুর মুরতি
খ) মলয় আসিয়া করে গেছে কানে
গ) একি মধুর ছন্দ, মধুর গন্ধ
ঘ) আমি চেয়ে থাকি দূর সান্ধ্য গগনে
বাউল ও কীর্তনের সুর কাব্যসঙ্গীত
ক) চাহি অতৃত্প নয়নে
খ) জীবনটাতো দেখা গেল
গ) একবার গাল ভরা মা ডাকে
ঘ) ওরে সিন্দুক ভরা ডাকা
ক) বেলা বয়ে যায়
খ) ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে
গ) সুখের কথা বোলো না আর
ঘ) এস প্রাণসখা এস প্রাণে
টপ্পা
ক) তোমারেই ভালবেসেছি, খ) শুধু দু’দিনেরি খেলা

নাটকের গান
ক) হেসে নাও দু’দিন বই ত নয় (বিরহ), খ) আমরা এমনিই এসে ভেসে যাই (পাষাণী),
গ) সুখের কথা বোলো না আর (প্রতাপ সিংহ), ঘ) ভিতরে হাসিছে মুখরা যামিনী (তারাবাঈ)

এ ছাড়াও দ্বিজেন্দ্রলালের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হাসির গান ‘‘নন্দলাল ত একদা একটা করিল ভীষণ পণ’’।
সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাইতেন ‘‘বাহারে নন্দ বাহারে নন্দলাল।’’
নাট্য পরিচিতি
সমাজবিভ্রাট ও কল্কি অবতার, বিরহ, পাষাণী, ত্রহ্যস্পর্শ বা সুখি পরিবার, প্রায়শ্চিত্ত, তারাবাঈ, প্রতাপ সিংহ, দুর্গাদাস, নুরজাহান, সোরাব-রুস্তম, সীতা, মেবারপতন, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, পুনর্জন্ম, পরপারে, আনন্দবিদায়, ভীষ্ম, সিংহলবিজয়, বঙ্গনারী।

গীতি পরিচিতি
আর্যগাথা প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ, হাসির গান, গান।

কাব্য পরিচিতি
The lyrics of Ind (লন্ডন, সেপ্টেম্বর ১৮৮৬), আষাঢ়ে, মন্দ্র, আলেখ্য, ত্রিবেণী।

দ্বিজেন্দ্রগীতি সমগ্র

তাঁর আরও কিছু লেখা
বিলেতের পত্র, বাংলার রঙ্গভূমি, কালিদাস ও ভবভূতি, চিন্তা ও কল্পনা, নানা ভিক্ষা, উপমা ইত্যাদি।


তথ্য: পাপিয়া মিত্র
 
 

 
 
 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.