৩ কার্তিক ১৪১৮ শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০১১


 
নতুন সকালের আশায়
কালবেলা ঘুম থেকে উঠেই পাড়ার চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল বা সৌরভ-গ্রেগ নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠা...

মেট্রোর দম বন্ধ করা ভিড় ঠেলে স্কুলে যাওয়া, কিংবা কলেজ পালিয়ে সিটি সেন্টার বা হাতিবাগানের কোনও সিনেমা হল। বিকেলে ভিক্টোরিয়া বা হেদুয়ায় মনের সুখে গল্প করা অথবা বিকেলে গরমে অস্থির হয়ে গঙ্গার ধারে বা মিলেনিয়াম পার্কে আড্ডা মারা...

কিন্তু না, আজ আর এ সব কিছুই হয় না। কারণ আমি বড় হয়ে গেছি। এখন আমার ভাল মাইনের চাকরি চাই। না হলে যে স্ট্যাটাস থাকবে না, সমাজ আমায় গুরুত্ব দেবে না। আর তাই পড়ে আছি কলকাতা থেকে অনেক দূরে— বেঙ্গালুরুতে। একা, কিছু স্বার্থপর মানুষের সঙ্গে। ভাবতে কষ্ট হয় এই ভেবে যে ১৯১১ সাল পর্যন্ত যে কলকাতা সমগ্র ভারতের রাজধানী বা কর্মভূমি ছিল, আজ সেই কলকাতা থেকেই বাইরের রাজ্যে পড়ে থাকতে হয় রুজির টানে। দিনের পর দিন। এখন মাসের শেষে মোটা মাইনে পাই, কিন্তু সেই টাকা সঞ্চয়
করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। আপন মানুষগুলো যে আজ অনেক দূরে।
ই-সিটিতে থাকি, সপ্তাহান্তে অফিস পার্টি, বন্ধুদের সঙ্গে শপিং মল বা কোনও মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে সময় কাটানো। কিন্তু এরই মাঝে খুঁজে বেড়াই কলকাতার সেই চেনা মানুষগুলোর সান্নিধ্য, আপনজনের মুখের হাসি।

এখন আমি কথাও কম বলি। সব সময় মনে হয় শক্ত এক সাঁড়াশি দিয়ে কেউ চেপে ধরেছে আমার কণ্ঠনালী। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ থেমে বিকল করে দেয় বোধ। আমার সামনে একটিই পথ। নিজের গলার আওয়াজকে যথাসম্ভব কমিয়ে দেওয়া। অথচ যে কোনও বিষয় গুছিয়ে বলায় বেশ নামডাক আমার। দর্শনের জটিল তত্ত্ব এত সহজ ভাষায় বন্ধুদের সামনে বোধগম্য করে তোলায় আমার সমকক্ষ খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। আজ আর ভাল লাগে না কথা বলতে, কারণ কথা শোনার ইচ্ছেই নেই কারও এই যান্ত্রিক শহরে। চারিদিকের মানুষগুলো শুধু ভাল সেজে থাকার ব্যর্থ অভিনয় করে চলেছে। ইঁদুর দৌড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে এই ক্লান্ত মুখগুলো চাইছে একটু নীরবতা, শান্তি, একটু অবসর সময়।

কিছু্ দিন পরে হয়তো দেশ ছেড়ে
চলে যাব আরও বড় হওয়ার আশায়। মা, বাবা, একান্ত কাছের মানুষদের ছেড়ে চলে যাব অনেক দূরে। প্রিয় শহরের সঙ্গে এখন দেখা হয় বছরে দু’বার, তখন হয়তো দেখা হবে দু’তিন বছর পর। কিন্তু আমি তো চাইনি এই ভাবে চলে যেতে। রাজা রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, রোনাল্ড রস, সুভাষচন্দ্র বসু, মাদার টেরেসা, সত্যজিত্ রায়, অমর্ত্য সেন প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের সাধের এই কলকাতা মহানগরীতেই নিজের মতো করে থাকতে চাই আপন মানুষগুলোর সঙ্গে।

তাই যখন শুনি নতুন সরকার নারায়ণমূর্তির মতো ব্যক্তিত্বের সাহায্য নিচ্ছে শিল্পের নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার জন্য, তখন আবার স্বপ্ন দেখি সকালে মা চা হাতে দিয়ে নিয়ে এসে স্নেহের হাত মাথার রেখে বলছেন ‘সুপ্রভাত’!


 
 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.