খাস ঝাড়গ্রাম শহরের জঙ্গলে বুনো হাতির হামলায় মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। মৃত মিথিলা রায়ের (৬০) বাড়ি উত্তর বামদায়।
বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ শহরের শ্রীরামপুরের জঙ্গলে শুকনো জ্বালানি কাঠপাতা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন মিথিলাদেবী। স্থানীয় কয়েকজন মহিলা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। জঙ্গলের গভীরে কাঠপাতা সংগ্রহের সময় আচমকা বুনো হাতির পালের সামনে পড়ে যান ওই বৃদ্ধা। মিথিলাদেবীর সঙ্গী স্থানীয় মালতী দাস, আরতি পাত্র, সন্ধ্যা গরাই, মীরা দাসরা বলেন, “হাতির পাল দেখে আমরা ছুটে পালাই। কিন্তু মিথিলাদেবী জঙ্গল থেকে বেরোতে পারেননি।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি দাঁতাল মিথিলাদেবীকে ধাওয়া করে। এরপর শুঁড়ে জড়িয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে আছড়ায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ওই বৃদ্ধা। খবর পেয়ে ছুটে আসেন মিথিলাদেবীর ছেলে কালিপদ রায়। |
ঝাড়গ্রাম শহরের জঙ্গলে হাতির পাল।—নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু পালের হাতিগুলি বৃদ্ধার দেহটি ঘিরে রেখেছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বোম-পটকা ফাটিয়ে হাতিগুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। পৌঁছন বনকর্মীরা। তাড়া খেয়ে হাতিগুলি শহরের নুননুনগেড়িয়া ও ভাস্করকাটা জঙ্গলের দিকে সরে যায়। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্রীরামপুর জঙ্গল থেকে মিথিলাদেবীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। কালিপদবাবু কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “আমরা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। জ্বালানির জন্য জঙ্গল থেকে শুকনো ডালপাতা কুড়োতে মা নিয়মিত জঙ্গলে যেতেন। এ দিনও গিয়েছিলেন, কিন্তু শহরের মধ্যে যে এমন ঘটনা ঘটবে তা কোনও দিন ভাবি নি।” বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, লোকালয়ে হাতির হানায় মৃত্যু হলে মৃতের নিকটাত্মীয়কে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু মিথিলাদেবীর মৃত্যু হয়েছে জঙ্গলের ভিতরে। ফলে, পরিজনেরা সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল থেকে আসা দু’টি শাবক-সহ ৯টি হাতির পাল গিধনি ও জামবনির জঙ্গল হয়ে এ দিন ভোরে অরণ্যশহরের শ্রীরামপুরের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। এদিন সকালে শহরের শ্রীরামপুরের জঙ্গলে পালের একটি দাঁতালের আক্রমণে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাগভীরে অনস্থলটি বনভূমি হলেও এলাকাটি ঝাড়গ্রাম পুরসভার অন্তর্গত। হাতির দলটি যাতে শহরের লোকালয়ে না ঢুকে পড়তে পারে সেজন্য হুলাপার্টি দিয়ে তাদের জঙ্গলের অন্যত্র পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হওয়ায় তাঁর পরিজনেরা সরকারি আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন না। তবে বৃদ্ধার পরিবার গরিব হওয়ায় আমরা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখছি।”
ঝাড়গ্রাম শহরে হাতির পাল চলে আসায় বাসিন্দারা রীতিমতো উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বন দফতরের তরফে শহরবাসীকে জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। শহরের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির সামনে রাতে আগুন জ্বালিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিএফও জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রাম পুর কর্তৃপক্ষ ও শহর লাগোয়া ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাপধরা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রাম পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন শিউলি সিংহ বলেন, “ঝাড়গ্রাম শহরটি জঙ্গলে ঘেরা। লোকালয়ে হাতির হামলা ঠেকাতে বন দফতর উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক এটাই আমরা চাই। শহরবাসীকে আমরা সতর্ক-সচেতন থাকতে বলছি। মিথিলাদেবীর পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র। মৃতার পরিজনদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য বন দফতরকে আমরা অনুরোধ করেছি।” ঝাড়গ্রাম শহরে আগেও একাধিক বার হাতি ঢুকেছে। তবে সেগুলি রেসিডেন্সিয়াল হাতি। ২০০৩ সালে শহরময় দাপিয়ে বেড়িয়েছিল একটি হাতি। তবে তখন প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০৫ সালে কেশবডিহিতে দাঁতালের হামলায় এক যুবক গুরুতর জখম হন। গত বছর জুনে বাঁদরভুলায় শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলে ঢুকে আশ্রমের বাগান তছনছ করেছিল একটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি। এ বার ৯টি হাতির পাল শহরের জঙ্গলে চলে এসেছে। |