ব্রাত্যের সুরেই সূর্য, কাউন্সেলিং সোমবার
শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছিলেন, তা-ই বললেন বিরোধী দলনেতা। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সামনে অনশনরত প্রার্থীদের অধিকাংশেরই চাকরি হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সরকারের সেই আশ্বাসের কথাই আন্দোলনকারীদের জানিয়ে মঙ্গলবার তাঁদের অনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। দিনের শেষে এসএসসি-জট অবশ্য পুরোপুরি কাটেনি। কিন্তু কোনও সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে সহমর্মিতা জানাতে গিয়েছে বিরোধী পক্ষ এবং তার পরে সরকারের সঙ্গে একই সুরে আন্দোলনকারীদের কাছে আর্জি জানাচ্ছে এমন সহমত রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরল।
এসএসসি কর্তৃপক্ষ এ দিন জানিয়েছেন, চতুর্থ দফার কাউন্সেলিং শুরু হবে আগামী সোমবার। ওই কাউন্সেলিংয়েই অধিকাংশ প্রার্থীর চাকরি হয়ে যাবে বলে সোমবার আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু। আর এ দিন অনশন-মঞ্চে গিয়ে সূর্যবাবু বলেছেন, “কাউন্সেলিংয়ের আগে সকলের চাকরি হয়ে যাবে তো বলা যায় না।” তবে কাউন্সেলিংয়ের আগে আপাতত অনশন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আর্জি জানান তিনি। অনশনকারীদের সঙ্গে এ দিনই দেখা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের সমস্যার কথা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।
ব্রাত্য বসুর দফতরে বিরোধী দলনেতা।
বাম জমানায় পিটিটিআই সমস্যার সময়ে আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল। এসএসসি-র ক্ষেত্রে বামেরাও সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তবে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেয়নি কোনও পক্ষই। এই ঘটনাকেই ‘ইতিবাচক’ হিসাবে দেখছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। অনশনকারীদের বিষয়ে সোমবারই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিরোধী দলনেতা। সূর্যবাবু তাঁকে আর্জি জানানোর আগেই অবশ্য ব্রাত্যবাবু অনশনকারীদের বার্তা দিয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, স্বচ্ছ ভাবে কাউন্সেলিং হবে এবং অনশনকারীদের অধিকাংশের চাকরি হয়ে যাবে। আন্দোলনে রাজনীতির রং না লাগিয়ে অনশন প্রত্যাহারের আর্জিও জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তার পরে এ দিন তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পরে সরকারের আশ্বাসের কথা হ্যান্ডমাইক নিয়ে অনশনকারীদের জানিয়ে এসেছেন বিরোধী দলনেতা।
বিকেলে অনশনকারীদের এক প্রতিনিধিদল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। যদিও তার পরেও তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারে নারাজ। অনশনকারীদের দাবি, চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় ঠাঁই পাওয়া সকলকেই চাকরি দিতে হবে। তবে এ দিনও শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, বেশির ভাগেরই চাকরি হয়ে যাবে। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা ইন্ধন না-থাকলে কেউ অনশন চালাবেন কেন, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন। উনিও বলছেন অনশন প্রত্যাহার করার কথা। আর তৃণমূল শিক্ষাসেলের নেতা দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে কয়েক জন অনশনকারীর কথা জেনেছি, যাঁরা চতুর্থ কাউন্সেলিংয়ের দিন ঘোষণা হওয়ায় অনশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।” এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশবাবু জানিয়েছেন, ১৫০০ পদের জন্য চতুর্থ তথা শেষ দফার কাউন্সেলিং শুরু সোমবার। যদিও শূন্য পদ আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। কাউন্সেলিং হবে সল্টলেকে এসএসসি-র সদর দফতরে।
অনশনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক সূর্যকান্ত মিশ্র।
সূর্যবাবু এ দিন বেলা ১২টায় অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় ঠাঁই পেলেও এবং র্যাঙ্কের বিচারে পিছিয়ে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেলেও তাঁরা কাউন্সেলিং ও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ জানিয়ে চাকরির দাবিতে অনশন করছেন এই প্রার্থীরা। অনশন ২০ দিনে পড়েছে। অনশন-মঞ্চে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী, এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, স্কুলশিক্ষা সচিব অর্ণব রায় ও অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা। বৈঠক শেষে তিনি ফের অনশনকারীদের কাছে গিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “ঠিক-বেঠিক, ন্যায়-অন্যায় দেখেই আমরা আমাদের অবস্থান ঠিক করব। সরকার কোনও ক্ষেত্রে ঠিক কথা বললে সেটা আমরা ভুল বলতে পারব না!” তিনি জানান, অনশনকারীদের দাবি ন্যায্য। সে কথা শিক্ষামন্ত্রীও মেনেছেন বলে তাঁর দাবি। সূর্যবাবু বলেন, “কারও ম্যালেরিয়া হয়েছে, কাউকে কুকুরে কামড়েছে, এ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। এক জন চিকিৎসকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমি আপনাদের অবস্থা বুঝতে পারি। আপনারা অনশন প্রত্যাহার করুন।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী, বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এ দিন অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। রাজ্যপালের কাছে গিয়েছেন সুনন্দ সান্যাল, অসীম চট্টোপাধ্যায়, সমীর পূততুণ্ডেরা। এরই মধ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা আবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অনশনকারীরা আন্দোলন প্রত্যাহার না করে নিলে পাল্টা আন্দোলন, অবস্থানের পথ ধরবেন তাঁরা।

ছবি: শৌভিক দে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.