রক্ষী বেপাত্তা, মেরেধরে লুঠ ট্রেনে
হাওড়ামুখী কালকা মেলের পরে হাওড়ামুখী অমৃতসর মেল। মাঝরাতে দূরপাল্লার ট্রেনে আবার ভয়াবহ ডাকাতি! কালকা মেলে রক্ষিহীন বাতানুকূল কামরার সঙ্গে সঙ্গে লুঠপাট চালানো হয়েছিল কিছু সাধারণ সংরক্ষিত কামরাতেও। আর এ বার অমৃতসর মেলে ডাকাতেরা হানা দিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি রক্ষিহীন কামরায়।
সোমবার মাঝরাতে অমৃতসর মেলে ডাকাতি হয় ঝাড়খণ্ডের জসিডি ও ঝাঝা স্টেশনের মধ্যে। অভিযোগ, ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র দল যাত্রীদের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ চার লক্ষাধিক টাকা, সোনার গয়না এবং অন্যান্য জিনিসপত্র লুঠ করে। যাত্রীরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়।
মাসখানেক আগে গভীর রাতে হাওড়ামুখী কালকা মেলের চারটি সংরক্ষিত কামরায় লুঠপাট চালিয়েছিল এক দল দুষ্কৃতী। সে-বার দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া লুঠপাট চালিয়ে আপৎকালীন চেন টেনে ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছিল। ঘটনার সময় ওই দূরপাল্লার ট্রেনে আরপিএফ বা রেল রক্ষী বাহিনী এবং রেল পুলিশের কোনও কর্মীর দেখা মেলেনি। অমৃতসর মেলের ডাকাতিতেও যাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। রেল বাজেটে যাত্রী-সুরক্ষার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। অথচ দূরের ট্রেনে পরপর ডাকাতির ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তারক্ষী থাকছেই না। অমৃতসর মেলে সোমবারের লুঠপাটের ঘটনায় ট্রেন সফরে নিরাপত্তার অভাবটাই আবার বেআব্রু হয়ে গেল।
মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ডাকাতির বর্ণনা দিচ্ছেন যাত্রী। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
ওই রাতে ঠিক কী হয়েছিল?
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, রাতে ঝাঝা স্টেশন থেকে ১০-১২ জনের একটি দল যাত্রী সেজে অমৃতসর মেলের বি-১ এবং বি-২ কামরায় ওঠে। রাত ২টো নাগাদ প্রায় সব যাত্রীই যখন ঘুমিয়ে পড়েছেন, স্বমূর্তি ধারণ করে তারা। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মহিলাদের গলা থেকে সোনার হার এবং অন্যান্য অলঙ্কার কেড়ে নিতে থাকে দুষ্কৃতীরা। কেড়ে নেওয়া হয় যাত্রীদের মোবাইল, ল্যাপটপ, ক্যামেরা-সহ যাবতীয় মূল্যবান সামগ্রী। কয়েক জন যাত্রী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ডাকাতেরা তাঁদের মারধর করে। রিভলভারের বাট দিয়ে আঘাত করে এক যাত্রীর হাতে। তাঁর হাত ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। মারধর থেকে রেহাই পাননি মহিলারাও। যাত্রীদের অভিযোগ, দু’টি কামরা পরেই রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা ছিলেন। সাহায্য করা তো দূরের কথা, চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি কামরায় শাটার নামিয়ে দেন তাঁরা। রেল পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে লুঠপাট চালানোর পরে জসিডির ঠিক আগে দুষ্কৃতীরা নেমে যায়। যাত্রীরা জসিডি স্টেশনে নেমে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
মঙ্গলবার সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ ট্রেনটি হাওড়ায় পৌঁছলে আক্রান্ত দু’টি কামরার যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মোহনলাল রাঠি নামে এক যাত্রীর অভিযোগ, তিনি বাধা দিতে গেলে দুষ্কৃতীরা রিভলভারের বাট দিয়ে আঘাত করে। তাতে তাঁর হাত ফেটে যায়। কিন্তু জসিডি স্টেশনের রেলকর্মীরা তাঁর হাতে শুধু একটা ব্যান্ড-এড লাগিয়ে ছেড়ে দেন। জানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। গীতাদেবী নামে এক যাত্রীর ক্ষোভ, “প্রতি বছর বাজেটে বড় মুখ করে যাত্রী-নিরাপত্তা খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করার কথা বলা হয়। অথচ মেল ট্রেনের বাতানুকূল কামরাতেও কোনও রক্ষী থাকে না! কেন?”
যাত্রীদের আরও প্রশ্ন, দুষ্কৃতীরা বেছে বেছে ঠিক রক্ষিহীন কামরাতেই হামলা চালাল কী ভাবে? তারা কী করে জানল, ওই দু’টি কামরায় রেল পুলিশ বা আরপিএফ থাকবে না? দু’টি কামরা পরে যে-রক্ষীরা ছিলেন, তাঁরা এগিয়ে আসেননি কেন? তা হলে কি ডাকাতদের সঙ্গে রেলের কিছু কিছু কর্মীর যোগসাজশ আছে?
এই সব প্রশ্নের সরাসরি জবাব মেলেনি। পূর্ব রেলের এক কর্তা শুধু বলেন, “অভিযোগ শুনেছি। বাতানুকূল কামরায় কেন রক্ষী ছিল না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাত্রীদের কেন চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি, সেই বিষয়েও খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.