সরব হল গুজরাতও
বেতন কমিশন নিয়ে কেন্দ্রকে চাপ রাজ্যের
কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের মঞ্চে এ বার নয়া বিতর্ক বেতন কমিশন! লোকসভা ভোটে যাওয়ার আগে সপ্তম বেতন কমিশনের শর্ত চূড়ান্ত করা নিয়ে সক্রিয় হয়েছে মনমোহন সরকার। কিন্তু এতে রাজ্যের ঘাড়ে বিপুল আর্থিক বোঝা চাপার আশঙ্কায় কেন্দ্রের কাছে জোরালো দাবি জানাল পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাত।
রীতিমতো অসন্তোষ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তরফে কেন্দ্রকে বলা হয়েছে, দিল্লির এই পদক্ষেপের জন্য বেকায়দায় পড়বে রাজ্য সরকার। কারণ, কেন্দ্র বেতন কমিশন গঠন করলেই রাজ্যেও বেতন কমিশন গড়ার জন্য সরকারের উপরে চাপ বাড়বে। আর কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে গেলে আর্থিক বোঝা বেড়ে যাবে অনেকটাই। রাজ্যের দাবি, এই বাড়তি আর্থিক বোঝার পুরোটাই বহন করতে হবে কেন্দ্রকে।
পশ্চিমবঙ্গের বেহাল আর্থিক দশার নিরিখে রাজ্য সরকারের এ-হেন দাবি মোটামুটি প্রত্যাশিত। রাজ্যের কাঁধে বিপুল ঋণের বোঝা চাপিয়ে বামফ্রন্ট সরকার বিদায় নিয়েছে বলে অভিযোগ করে সেই দায় হাল্কা করার জন্য গত আড়াই বছরে কেন্দ্রের কাছে দফায় দফায় আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এখন আবার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য রাজ্যের কাঁধে আর্থিক বোঝা চাপলে সেই ভার স্বাভাবিক ভাবেই বহন করতে তিনি নারাজ। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, মমতার মতোই রাজ্যের কাঁধে বাড়তি বোঝা নিয়ে সরব গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাঁর রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক ভাল। তা হলে মোদীর যুক্তি কী? প্রাথমিক ভাবে গুজরাত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে গেলে রাজ্যের পক্ষে ‘স্বাস্থ্যকর রাজস্ব উদ্বৃত্ত রাখা’ সম্ভব হবে না।
একই সঙ্গে অবশ্য কতগুলি মৌলিক বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছে মোদীর সরকার। তাদের বক্তব্য, দশ বছর অন্তর কমিশন গঠনের মাধ্যমে যে ভাবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে, তাতে শ্রম বাজারের (লেবার মার্কেট) ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়লে বেসরকারি ক্ষেত্রের উপরেও বেতন বাড়ানোর জন্য চাপ বাড়ে। কিন্তু বাজারের গতি মেনে সব সময় তা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া গুজরাতের এ-ও দাবি, বেতন বাবদ খরচ কমানো এবং কাজের বহর ও কর্মিসংখ্যার মধ্যে সঠিক অনুপাত বজায় রাখার দিকটিও কমিশনকে ভাবতে হবে। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার কথা ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগেই কমিশন গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্র যে ভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে, তাতে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই। বিরোধীরা তো সরাসরিই বলছেন, সরকারি কর্মীদের মন পেতেই এটা কংগ্রেসের মরিয়া চেষ্টা। ভোটের ময়দানে এই রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার দায় বিরোধী এবং আঞ্চলিক দলগুলির সরকারের রয়েছে। আর সেটা করতে গিয়েই কপালে ভাঁজ পড়েছে তাদের। যার প্রতিফলন ঘটেছে কেন্দ্রকে পাঠানো তাদের চিঠিতে। সপ্তম বেতন কমিশনের শর্তাবলি (টার্মস অ্যান্ড রেফারেন্স) চূড়ান্ত করার আগে রাজ্যগুলির মতামত জানতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রক। জবাবি চিঠি পাঠিয়েছে ১৪টি রাজ্য। দেখা যাচ্ছে বাড়তি আর্থিক বোঝা নিয়ে প্রায় সবাই কমবেশি উদ্বিগ্ন। বেতন কমিশনের দরকার নেই, ভোটের আগে রাজনৈতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এমন কথা না-বললেও রাজ্যের স্বার্থরক্ষার দাবিতে সকলে সরব। সেখানে এমনকী কংগ্রেস-বিজেপি বিভেদও নেই।
বাড়তি আর্থিক বোঝার কতটা কেন্দ্রকে বহন করতে হবে, তা নিয়ে অবশ্য এক এক রাজ্য এক এক রকম দাবি জানিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহার যেমন ৫০% অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ আর গুজরাতের দাবি সবচেয়ে বেশি।
ক্যাবিনেট সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের তরফে পাঁচটি বিষয় সুনির্দিষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এক, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে বেতন কমিশন গঠনের জন্য রাজ্যের উপর চাপ বাড়বে। দুই, পশ্চিমবঙ্গ ঋণগ্রস্ত। কর্মীদের বর্ধিত হারে বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তিন, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজ্যের কর্মীদের মহার্ঘভাতাও দেওয়া যাচ্ছে না। চার, এই অবস্থায় বেতন কমিশনের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝার একশো শতাংশ কেন্দ্রকেই বহন করতে হবে। পাঁচ, রাজ্যের বোঝা লাঘব করার জন্য একটি ব্যবস্থা (মেকানিজম) তৈরি করে তা সপ্তম বেতন কমিশনের শর্তাবলিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অন্য দিকে, গুজরাত জানিয়েছে, কর্মচারীদের বেতন বাবদ আর্থিক বোঝা এখন এতটাই যে, কেন্দ্র ও অনেক রাজ্য বহু ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মচারী না নিয়ে চুক্তিতে লোক নিয়োগ করছে। এর ফলে সরকারের মধ্যেই দুই শ্রেণির কর্মচারী তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে বেতনগত অসাম্য তৈরি হচ্ছে সরকারি এবং বেসরকারি কর্মীদের মধ্যেও। যা ভবিষ্যতে সামাজিক ও আইনি সমস্যা তৈরি করতে পারে। তা ছাড়া, বেতন বাবদ বেড়ে চলা খরচও দুশ্চিন্তার বিষয়। গুজরাত বলেছে, সরকারি কর্মীদের মাইনে বাড়ালে রাজ্যের রাজস্ব ব্যয় বেড়ে যাবে। এমনিই আন্তর্জাতিক মন্দার কারণে রাজ্যগুলি আর্থিক ভাবে চাপে রয়েছে। আর বাড়তি চাপ বহন করা কঠিন।
তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোয় যুক্তিগ্রাহ্য পুনর্বিন্যাস দাবি করেছে গুজরাত। তাদের মতে, কর্মীদের বেতন তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং কর্মদক্ষতার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্যগুলির সঙ্গে আরও আলোচনা করতে হবে বলে দাবি করেছে গুজরাত সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ এবং গুজরাতের চিঠি দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের কর্তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য নিতান্তই রাজ্যের অর্থনীতির স্বার্থে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি বিবেচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে। ভোটের পরে বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে বেতন কমিশন এবং রাজ্যগুলির দাবিদাওয়া পূরণের দায় তাদের উপরে বর্তাবে। সেই কারণেই সমস্যার দিকগুলি আগাম শুনিয়ে রাখছেন তিনি, এমনটাই মনে করছে কেন্দ্র। বস্তুত আর্থিক দায় নতুন সরকারকে সামলাতে হবে এই ভাবনা মাথায় নিয়েই বেতন কমিশন গঠনের পথে এগোচ্ছে ইউপিএ সরকারও। আপাতত তাদের লক্ষ্য, ভোটার মন জয় করা। তাই খসড়া শর্তাবলিতে কোনও মেকানিজমের প্রসঙ্গ রাখা হয়নি। ক্যাবিনেট নোটে শুধু বলা হয়েছে, কেন্দ্রের বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ হওয়ার পর রাজ্যগুলি কমবেশি তা অনুসরণ করে। এ জন্য রাজ্যের আর্থিক বোঝা কত হবে তা যেন কমিশন খতিয়ে দেখে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা যেন মাথায় রাখা হয়। যেন মনে রাখা হয় যে, বেতন দেওয়া ছাড়াও সরকারের বহু উন্নয়ন এবং কল্যাণমূলক কর্মসূচি রয়েছে। এই সব বিবেচনা করে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যেন নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত হয়।
এক কিস্তি ডিএ
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আর এক প্রস্ত মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দিয়ে তার পর ভোটে যেতে চাইছে মনমোহন সিংহ সরকার। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ১০% মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হবে। এই মুহূর্তে তাঁরা মূল বেতনের ৯০% মহার্ঘ ভাতা পান। কর্মী সংগঠনগুলি চায় মহার্ঘ ভাতার ৫০% মূল বেতনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু কর্মিবর্গ দফতরের তাতে আপত্তি রয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.