এ বার ২১, ফের রেকর্ড টোটোপাড়ার পড়ুয়াদের
বিগত বছরগুলির রেকর্ড ভেঙে এ বার সর্বাধিক সংখ্যায় টোটো সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিকে বসল। গত বারের তুলনায় যা পঞ্চাশ শতাংশ বেশি। মোট ২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এ বার মেয়েদের সংখ্যা ১০ জন। গত বার টোটো সম্প্রদায়ের থেকে মোট ১৪ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছিল ৭ জন। তবে এবার সে সংখ্যা ছাপিয়ে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত জলপাইগুড়ি জেলার টোটোপাড়ার বাসিন্দা-সহ স্কুলের শিক্ষকরাও। টোটো মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিশা ঘোষালের কথায়, “গত বার থেকে টোটো সম্প্রদায়ের পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। মেয়েরা কোনও ভাবে পিছিয়ে নেই। টোটোদের মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে অনেকটাই।”
১৯৮৯ সালে টোটো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন চিত্তরঞ্জন টোটো। পাশ করার কয়েক বছর বাদে তিনি মারা যান। দু’বছর বাদে পাঁচজন পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকে বসে। তাদের মধ্যে ভক্ত টোটো কেবল মাত্র মাধ্যমিক পাশ করতে পারেন। এর পরে ১৩ বছর ব্যবধানের পর সঞ্জিত টোটো মাধ্যমিক পাশ করে। তখনও পর্যন্ত মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল না। ২০০৩ সালে টোটোদের মধ্যে প্রথম মাধ্যমিকে বসে পাশ করে তাক লাগিয়ে দেয় সূচনা টোটো। সূচনার পরে মোট ১৮ জন মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। এখনও অবধি ৫২ জন টোটো ছেলে মাধ্যমিক পাশ করেছে।
উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ভক্ত টোটোর কথায়, “পড়াশোনা করার বিষয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। মা-বাবাদের মধ্যে তেমন সচেতনতাও তেমন ছিল না। তাই আগে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারত না অনেকে। নিয়মিত বোঝানোর জন্য সচেতনতা বেড়েছে। মাধ্যমিক পাশ করলে ও পরে স্নাতক হলে সরকারি চাকরি মিলতে পারে। সে জন্য অনেকে পড়াশোনা করছে। তবে অভাবের কারণে মাধ্যমিকের পরে অনেকে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
টোটোপাড়ায় স্কুল চালু হয় ১৯৭৯ সালে। ১৯৯৫ সালে ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাই স্কুলটি মাধ্যমিকের অনুমোদন পায়। তবে প্রথম বছর অবশ্য কোনও টোটো পড়ুয়া মাধ্যমিকে বসেনি। ডুয়ার্সের মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা পথ ও চারটি ঝোরা পেরিয়ে ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে টোটোদের গ্রামে পৌঁছতে হয়। ১৯০১ সালের জনগণনায় টোটোদের সংখ্যা ছিল ১৭১ জন। ২০০১ সালে তা বেড়ে হয় ১১৭৫ জন। বর্তমানে টোটোদের জন সংখ্যা ১৪২০ জন। মূলত মারুয়া ও ভুট্টা চাষ করে টোটোরা সংসার চালান। তবে জনসংখ্যা বাড়ায় পরিবার পিছু জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে, বহু টোটো এখন আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যে দিনযাপন করছেন। দিনমজুর দীপক টোটোর পরিবারে ছয় মেয়ে। তাঁর বড় মেয়ে পিয়া এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। পিয়ার কথায়, “পড়াশোনা করছি। পাশ করার পরে একটা চাকরি চাই। তা হলে সংসার ঠিকঠাক চলবে।”
পিয়ার মত এবারের পরীক্ষার্থী সানি, ভারতী,সাগর, সজন টোটোদের একই বক্তব্য। তবে মাধ্যমিক বা স্নাতক হয়েও টোটো যুবক-যুবতীরা চাকরি না পেয়ে হতাশ। ২০১১ সালে কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছিলেন প্রকাশ টোটো। তাঁর কথায়, “পাশ করার পর সহজে চাকরি মিললে আরও বেশি আগ্রহ বাড়ত সকলের। মাধ্যমিকের পরে বাইরের স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়াশোনা চালাতে খুব কষ্ট। এটা সকলে বুঝবেন না।”
জলপাইগুড়ির জেলা শাসক পৃথা সরকার টোটোপাড়ার স্কুলটি যাতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত হয়, সে জন্য চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জেলাশাসকের কথায়, “অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হল টোটোপাড়া। জনসংখ্যার ভিত্তিতে স্কুলটিকে উচ্চ মাধ্যমিক করা হয়ত সম্ভব হবে কি না তা দেখা হচ্ছে। এ বছর মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীদের হার খুবই ভাল। তাদের পরে পড়াশোনা চালানোর ক্ষেত্রে দুর্ভোগ দূর করতে মাদারিহাট কিংবা ফালাকাটায় হস্টেলের বন্দোবস্ত করার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.