সরকারি চিকিৎসক বলেছিলেন, নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পরীক্ষা করাতে। অন্য কেন্দ্র থেকে রিপোর্ট আনায় তা ছুড়ে ফেলে দেন ডাক্তারবাবু। পরের দিন ভোরে হাসপাতালের শৌচাগারে গামছার ফাঁসে ঝুলতে দেখা গেল রোগীর দেহ। তাঁর আত্মীয়দের অভিযোগ, ওই চিকিৎসকের কাছে অপমানিত হয়েই প্রৌঢ় আত্মঘাতী হয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার হিমাদ্রি হালদার জানিয়েছেন, ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। তার রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আশ্বাস দেন তিনি। তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বিপিএল রোগীকে কেন বেসরকারি কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করাতে হল, সেই প্রশ্নও উঠল।
সোমবার বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে মৃত ওই রোগীর নাম স্বপন লেট (৫৫)। বাড়ি স্থানীয় আটলা গ্রামে। হাসপাতালের চিকিৎসক আনন্দ মণ্ডলের কাছে অপমানিত হয়েই স্বপনবাবু আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশ এবং হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁর ভাই ভুবন লেট। ২২ ফেব্রুয়ারি পেটে-বুকে ব্যথা ও যকৃতে সমস্যা নিয়ে আনন্দবাবুর অধীনে ভর্তি হন স্বপনবাবু। ওই দিনই তাঁর আল্ট্রসোনোগ্রাফি (ইউএসজি) করা হয়।
আনন্দবাবুর বক্তব্য, “রিপোর্টে অবস্থা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। এক নামী রেডিওলজিস্টের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিই।” মৃতের ছেলে তমাল লেটের দাবি, ওই রেডিওলজিস্ট হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর পরীক্ষা করতে রাজি হননি। ৭০০ টাকা দিয়ে অন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে তাঁরা ইউএসজি করান।
তমালের অভিযোগ, “রবিবার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে যাই। পরীক্ষা ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি রিপোর্টের কাগজপত্র ছুড়ে ফেলেন। বলেন, ফের পরীক্ষা করিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে দেখিয়ে নিতে। ডাক্তারের দুর্ব্যবহারের কারণেই বাবা আত্মহত্যা করেছেন।” আনন্দবাবু পাল্টা বলেন, “হাসপাতালের রিপোর্টের সঙ্গে বাইরের রিপোর্টের বিশেষ ফারাক ছিল না। ঠিক কী কারণে সমস্যা হচ্ছে, তা রিপোর্ট দেখে বোঝা যাচ্ছিল না। তাই আমি ওঁকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই।” পরিবারটি বিপিএল তালিকাভুক্ত। স্বপনবাবুর নামে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিধান প্রকল্প’-র কার্ড ছিল। কিন্তু তাতে কী সুবিধা মেলে তা পরিবারটি জানত না।
হাসপাতালের ইউএসজি রিপোর্ট উড়িয়ে দিচ্ছেন সেখানকারই ডাক্তার, এমন নজির বিশেষ নেই। তবে কি রামপুরহাট হাসপাতালের ইউএসজি যন্ত্র বিকল? বীরভূম জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওখানে ইউএসজি মেশিনে কোনও ত্রুটি আছে, এমন অভিযোগ নেই। যন্ত্র খারাপ থাকলে রোগীকল্যাণ সমিতির তহবিল থেকেই সারানো যায়।” ভারপ্রাপ্ত সুপারের ব্যাখ্যা, “মেশিন ঠিকই আছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রে রোগীর ব্যথা না কমলে বাইরে এক জন নামী সোনোলজিস্টের কাছে পাঠানো হয়।” |