সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ হল বামফ্রন্ট নিয়ন্ত্রিত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের ২০১৪-২০১৫-র বাজেট। বিরোধী তৃণমূল নীরব থাকলেও কংগ্রেস এ দিনের বাজেটকে ‘দিশাহীন’ বলেছে। বাজেটের খসড়া নিয়ম মেনে সদস্যদের হাতে না দেওয়া ও আয়ব্যয়ের হিসেব বাংলায় প্রকাশ না করার প্রতিবাদে তাঁরা ওয়াক আউট করেন। পরে ধ্বনি ভোটে বাজেট পাশ হয়ে যায়।
সোমবার জেলা পরিষদের হলঘরে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই বাজেট অধিবেশনে পরিষদের নিজস্ব জমির পরিমাণ জানতে চেয়ে বিরোধী ও শাসক দলের সদস্যরা সরব হন। কিন্তু, জেলা পরিষদ কর্তারা স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। যে সমস্ত হাট থেকে খাজনা নেওয়া হচ্ছে সেখানকার জমির কাগজপত্র আছে কি না সেই প্রশ্নেরও জবাব পাননি বিরোধীরা। এর পরে কংগ্রেস সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নুরজাহান বেগম দাবি করেন, “সামনে লোকসভা নির্বাচন। তাই সময়ের অভাব ছিল। অনেক নিয়ম মেনে চলা সম্ভব হয়নি। তড়িঘড়ি বাজেট তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন দিকের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়েছে।”
বিরোধী সদস্য এমনকী বামফ্রন্ট একাংশ সভাধিপতির ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। জেলা পরিষদের ৩৭টি আসনের মধ্যে ২৭টি বামফ্রন্টের দখলে। ৪টি করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের। ১টি করে আসন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের। এ দিন বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন দুই সাংসদ সিপিএমের মহেন্দ্র রায় এবং আরএসপির মনোহর তিরকি। বাজেটে চা বাগান এলাকার উন্নয়নের কোনও কথা নেই কেন ওই প্রশ্নে সরব হন মনোহরবাবু। মহেন্দ্রবাবু জানতে চান, জেলা পরিষদের নিজস্ব হাটের প্রচুর জমি রয়েছে। সেটা ব্যবহার করে কেন আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে না?
২০১৪-২০১৫ সালের বাজেটে মোট রোজগার ১৬২ কোটি ৫১ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৮১ টাকা ধরা হয়েছে। সমপরিমাণ ধরা হয়েছে ব্যয়। মোট রোজগারের মধ্যে নিজস্ব সম্পদ থেকে মাত্র ৬ কোটি ৬৬ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা আয় ধরা হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে নানা খাতে ১৩৬ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে। বিরোধী কংগ্রেস সদস্যদের অভিযোগ, ওই হিসেব দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় জেলা পরিষদ নিজস্ব সম্পদের ঠিক মতো ব্যবহার করছে না। কালচিনি থেকে নির্বাচিত দলের সদস্য মোহন শর্মা জানতে চান, “জেলা পরিষদের মোট জমির পরিমাণ কত? কত জমি দখল হয়েছে?” জেলা পরিষদ কর্তারা ওই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দিব্যেন্দু দাস জানান, জমির পরিমাণ জানতে ভূমি এ ভূমি সংস্কার দফতরের সাহায্যে সমীক্ষা চলছে। লোকসভার পরে স্পষ্ট চিত্র মিলবে। মোহনবাবুর দাবি, জেলা পরিষদের যে সম্পদ আছে তা ঠিক মতো ব্যবহার করলে আয়ের ছবিটা পাল্টে যাবে। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেত্রী তৃণমূলের উত্তরা বর্মন অবশ্য বলেন, “যে সমস্ত ভুল ভ্রান্তি আছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে।” |