ক্লাবের দুঃসময়ের মধ্যে হঠাৎ-ই উধাও হয়ে গেলেন উগা ওপারা। ভরা ফুটবল মরসুমের মধ্যে।
এক বছর আগে মোহনবাগান কর্তাদের না জানিয়ে যে ভাবে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলেন টোলগে ওজবে, অনেকটা সে ভাবেই উগা চলে গেলেন নাইজিরিয়ায়। বেশ কয়েক দিন হল তাঁর কোনও খোঁজ নেই। মোবাইল ফোন বন্ধ। ফেসবুক বা বিবিএম করলেও জবাব দিচ্ছেন না।
কোচ আর্মান্দো কোলাসো তো এখনও জানেন না। উগার উধাও হয়ে যাওয়ার খবর অনেক পরে জানতে পেরেছেন ফুটবল সচিব, সহ-সচিব সহ লাল-হলুদের বেশির ভাগ কর্তাই। তবে ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার মুম্বই থেকে ফোনে বললেন, “ক’দিন আগে ও টোটকা চিকিৎসা করাতে নাইজিরিয়া গিয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফিরবে।”
তবে তাঁকে কিছু না জানিয়ে উগা উধাও হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ আর্মান্দো। গোয়া থেকে ফোনে লাল-হলুদ কোচ বলে দিলেন, “উগা সম্পর্কে কিছু জানি না। আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। বহু দিন প্র্যাকটিসে আসছে না। কোথায় আছে, কী করছে তা-ও জানি না।” |
চিডিদের সঙ্গে সাময়িক বিচ্ছেদ ওপারার। |
আর কলকাতায় থাকা কর্তারা? উগার চোটের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা সহ-সচিব ডাক্তার শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত বললেন, “দশ দিন আগে আমার কাছে এসেছিল। তারপর আসছে না দেখে খোঁজ নিতে শুরু করি। পরে জানতে পারি ও নাকি নাইজিরিয়া চলে গিয়েছে।” আর ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “ও নিশ্চয়ই নীতুকে (দেবব্রত সরকার) বলে নাইজিরিয়া গিয়েছে। তবে অভিমানে, না চোট সারাতে তা আমি জানি না।”
ফুটবল সচিবের মন্তব্যের পর উগা কেন হঠাৎ দেশে চলে গেলেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা! আই লিগে দীর্ঘ দিন চোট নিয়ে বসেছিলেন। দলে ফেরেন ফেড কাপে। মাঞ্জেরিতে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মাঠে নেমেছিলেন দলের নির্ভরযোগ্য এই স্টপার। তারপর গত এক মাস তিনি কার্যত অনুশীলনেই নামেননি। কিন্তু উগার অভিমানটা কীসের? শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন, পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় টিমে সুযোগ পাচ্ছেন না। চোটও ভোগাচ্ছে। আবার কেউ কেউ এটাও জানাচ্ছেন, অভিন্নহৃদয় বন্ধু পেন ওরজি অন্য দলে চলে যাওয়ায় নাকি তিনি আরও বেশি অভিমানী হয়ে উঠেছেন। ঘটনা যাই হোক প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার বিদেশি কবে নাইজিরিয়া চলে গিয়েছেন তা নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। উগার মোবাইল ফোন বন্ধ দিন পাঁচেক। বার বার ফোন করেও তাঁকে এই ক’দিন পাওয়া যায়নি।
উগার চোটটা কী? তা কি টোটকায় সারবে? সহ-সচিব শান্তিরঞ্জনবাবু বললেন, “উগার গোড়ালিতে যে চোট হয়েছে ডাক্তারি ভাষায় তার নাম বারসিটিস। টোটকায় সারে না। নিয়মিত চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়া যায়।” পেশায় চিকিৎসক শান্তিবাবু ফুটবলারের আচরণেও রীতিমতো বিরক্ত। বললেন, “উগা আগে কোথায় কোন ডাক্তার দেখাচ্ছিল আমি জানি না। আমার কাছে আসার পর আমি কিছু ইনজেকশন ও ওষুধ দিই। কিন্তু সে সবও ঠিক করে নেয়নি। সে জন্য সুস্থও হয়নি। আমরা ওকে মাঠেও পাইনি। উল্টে শুনলাম ক’দিন আগে দেশে চলে গিয়েছে।”
ফেড কাপ থেকে বিদায়ের পর শিল্ডেও ব্যর্থ ইস্টবেঙ্গল। রবিবার ডেম্পোর কাছে হারায় আই লিগের চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেও কার্যত বিদায় নিয়েছেন চিডি-মোগারা। টিমের এই দুঃসময়ে টানা পাঁচ বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলা উগার মতো সিনিয়র ফুটবলারের মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল মানছেন আর্মান্দো-সহ টিমের বেশির ভাগ ফুটবলারই। বিশেষ করে টোলগে, ওডাফা, ডুডুর মতো বিদেশিদের থামানোর জন্য বড় চেহারার উগাই হতে পারতেন আর্মান্দোর সেরা অস্ত্র। কিন্তু এ বছর কার্যত চোটের জন্য অর্ধেক মরসুমও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই হঠাৎ এই উধাও হয়ে যাওয়া।
এখন দেখার, নাইজিরিয়া থেকে ‘টোটকা’ নিয়ে ফিরলে আই লিগের বাকি ম্যাচে তাঁকে আর্মান্দো পান কি না। ডেম্পো ম্যাচে লাল-কার্ড দেখায় দলের নির্ভরযোগ্য স্টপার গুরবিন্দর সিংহ ডার্বিতে নেই। উগাকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে পেলে হয়তো অনেকটাই স্বস্তি পাবেন আর্মান্দো কোলাসো। |