কংক্রিটের জঙ্গলে চিতাবাঘ, মেরঠে বন্দি মানুষ

২৪ ফেব্রুয়ারি
হরের দিকে আসা হয় না বড় একটা! সুযোগ যখন মিললই বাজার-দোকান, সিনেমা হল, ঝাঁ চকচকে শপিং কমপ্লেক্স সব কিছুই ঢুঁ মেরে আসা ভাল!
অনেকটা এই রকম পরিকল্পনা নিয়েই যেন বেরিয়েছে সে! হলুদের উপর গোল গোল কালো ছোপ!
রবিবার সকালে ভিড়ে ঠাসা মেরঠ ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। বাজারে গিয়ে গুদাম খুলতেই দোকানির উপরে আচমকা ঝাঁপ। পরিত্রাহি চিৎকারে সকলের নজর গিয়ে পড়ল আগন্তুকের দিকে। গত কাল থেকে সে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরালো পুলিশ-প্রশাসন-বনকর্তাদের। প্রায় ৪০ ঘণ্টার উদভ্রান্ত ছুটোছুটির পরেও ধরা গেল না তাকে।
আতঙ্কে আজ বন্ধের চেহারা নিয়েছে মেরঠ। বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ খোলেনি। ঝাঁপ ওঠেনি দোকানপাটে। কেউ বাড়ির বাইরে বেরোবেন না ৩৫ লক্ষ বাসিন্দাকে পই পই করে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু আইসিএসই পরীক্ষা চলছে যে! চাইলেও তো ঘরে বসে থাকতে পারবে না পরীক্ষার্থীরা। অতএব বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা! কিন্তু তাতে কী আর মন মানে? পরীক্ষা দিতে বসেও দুরুদুরু বুকে মাঝে মাঝেই আড়চোখে এ দিক-ও দিক তাকাচ্ছিল পড়ুয়ারা। বাবা-মা-শিক্ষকরাও তটস্থ ওই বুঝি উঁকি দেবে হলুদের উপর গোল গোল কালো ছোপ!
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সকালে। সদর বাজার এলাকার এক কাঠের দোকানে। দোকানির ঘাড়ে থাবা এসে পড়তেই হইচই পড়ে যায় ভরা বাজারে। পড়িমরি করে ছুটতে শুরু করেন লোকজন। তত ক্ষণে আরও এক জনের উপর চড়াও হয়েছে চিতাবাঘ। পুলিশও চলে এসেছে। লোকজনের ভিড় সামলাতে না পেরে লাঠিচার্জ শুরু করেছে তারা। জনতা দিশাহারা। আগে গেলে বাঘে খাবে, পিছোলে পুলিশের মার! ইতিমধ্যেই এক পুলিশ অফিসার এবং এক চিত্রসাংবাদিক-সহ সাত জন বাঘের আঁচড়ে জখম! তবু তারই মধ্যে কিছু অতি-উৎসাহী চিতাবাঘের পিছন পিছন ছুটতে শুরু করেছিল। তাতে বিপত্তি আরও বাড়ে। শেষমেশ শূন্যে গুলি ছোড়েন এক পুলিশ কর্তা। চিতাবাঘ-বাবাজি তখন লম্ফ দিয়ে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির ছাদে। কিছু লোক ছাদে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ চোখের সামনে বাঘ লাফানোয় প্রাণ বাঁচাতে পিলার থেকে বেরিয়ে আসা লোহার শিক ধরে ঝুলতে থাকেন তাঁরা। চিতাবাঘ পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ে লাগোয়া সেনা হাসপাতালে।

বাড়ির ছাদে আগন্তুক। প্রাণ বাঁচাতে তাই লোহার শিক ধরে বিপজ্জনক লাফ।
সোমবার মেরঠ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। ছবি: এএফপি।
বাইরে গুলির শব্দ, বাসিন্দাদের চিলচিৎকার চিতাবাঘ করিডর পেরিয়ে চলল ওয়ার্ডের দিকে। সেনা-পুলিশ মিলে সেনা হাসপাতাল তখন সেনা-ঘাঁটির চেহারা নিয়েছে। ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন পাঁচ রোগী। ডাক্তার-নার্সরা কোনও মতে তাঁদের সরিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন ওয়ার্ডের মূল ফটক। কেল্লা ফতে, চিতাবাঘ বন্দি! খবর পাঠানো হল বন দফতরে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে চলে এলেন বনকর্মীরা। আটঘাট বেঁধে ছোড়া হল ঘুম-পাড়ানি গুলি। চিতাবাঘ ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়বে ভেবে অপেক্ষায় বসল সকলে। রাত গভীর হতে লাঠিসোঁটা-বন্দুক নিয়ে ওয়ার্ডে ঢুকতেই সকলের চোখ ছানাবড়া। বাঘ তো ঘুমোয়নি! ওই তো সে কাচের জানলার ও-পারে মুখ তুলে তাকাচ্ছে! কিছু ক্ষণ এ-ধার ও-ধার করে বিরাট এক লম্বা লাফ মেরে সিমেন্টের জাফরি ভেঙে বাইরে ঝাঁপাল চিতাবাঘ। পুলিশের হাতের লাঠি হাতেই রইল! পলক ফেলতে না ফেলতেই বাবাজীবন ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গলে উধাও।
“এত করেও চিতাবাঘটাকে ধরতে পারলাম না!” হতাশা ঝরে পড়ল অতিরিক্ত জেলাশাসক এস কে দুবে-র গলায়। দুবেই সোমবার বলছিলেন, মেরঠের ওই অঞ্চলটি জঙ্গলের কোল ঘেঁষে। সেখান থেকেই সম্ভবত লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে চিতাবাঘটি। বললেন, “হাসপাতাল থেকে পালানোর পরে আবুলেন বাজারের অভিজাত এলাকায় দেখা গিয়েছে ওকে। সিসিটিভি বলছে, রাত তিনটে নাগাদ একটা শপিং কমপ্লেক্স চত্বরে ঢুকে পড়েছিল ও। তার আগে ঢুঁ মেরেছিল নিশাত সিনেমা হল আর অ্যাপার্টমেন্টের ছাদেও।” সোমবার রাতে তক্কে তক্কে থেকে তাকে ফের ধরার চেষ্টা করবেন বনকর্মীরা। ডিভিশনাল বন আধিকারিক সুশান্ত শর্মা বলছিলেন, “আবুলেন বাজারের বাসিন্দারা টের পেয়েই আমাদের খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা পৌঁছে তাকে আর দেখতে পাইনি।” আগের দিন কি তবে ঘুম-পাড়ানি গুলি ওর গায়ে লাগেইনি? নইলে এত ক্ষণ অবধি সে দৌড়ে বেড়াচ্ছে কী করে? আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতেই প্রশাসনের আশা, আজ রাতে একটা হেস্তনেস্ত হবে।
এই উত্তরপ্রদেশেই গত ডিসেম্বরে যে ভাবে চিতাবাঘের পেটে গিয়েছিল ১০ জন, তার স্মৃতি এখনও দগদগে। গত বছরই মুম্বইয়ের একটি আবাসনে ঢুকে পড়েছিল চিতাবাঘ। টেনে নিয়ে যায় একটি কুকুরছানাকে। গত সপ্তাহে ছত্তীসগঢ়ে চিতাবাঘের হাতে মৃত্যু হয় পাঁচ বছরের একটি শিশুর। দক্ষিণ ভারতে এ দিনই কোয়ম্বত্তূরের বালপারাইয়ে চিতাবাঘের হানায় আক্রান্ত হয়েছেন এক কলেজ পড়ুয়া। তিনি বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। পাশের ঝোপ থেকে চিতাবাঘ বেরিয়ে লাফিয়ে পড়েছে। কাঁধের ব্যাগটা দিয়েই নিজেকে কোনও রকমে রক্ষা করেছেন তিনি।
কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে?
ওয়র্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ)-এর ২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে চিতাবাঘের সংখ্যা ১১৫০। সংগঠনের ভারতীয় শাখার কর্তা দীপঙ্কর ঘোষ বলছেন, “চিতাবাঘের ঘুরে বেড়ানোর জায়গা দরকার হয়। ওদের বেশ কিছু করিডর এখন জনবসতির চাপে বন্ধ হওয়ার মুখে। তাই ওরা এ ভাবে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।” তা হলে উপায়? দীপঙ্করবাবুর জবাব, “সমস্ত চিতাবাঘকে খাঁচায় পুরে ফেলাও সম্ভব নয়। আবার বনজঙ্গল-লাগোয়া সমস্ত জনবসতিও তুলে দেওয়া যাবে না। এ অবস্থায় যেটুকু যা করা যায়, সেটাই চেষ্টা করা হচ্ছে।”
আপাতত মেরঠ দু’দিন ধরে বাঘের সঙ্গে ঘর করে আতঙ্কে কাঁপছে। হাজার হোক, বন্যেরা তো শেষমেশ বনেই সুন্দর।

গন্ডারের দেহ
কাজিরাঙায় ফের মিলল খড়্গহীন গন্ডারের দেহ। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে ৭টি গন্ডারের চোরাশিকার হল ওই জঙ্গলে। বন দফতর সূত্রের খবর, গুলির শব্দ শুনে বনকর্মীরা তল্লাশি শুরু করেন। সোমবার গন্ডারটির দেহ খুঁজে পাওয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.