পঞ্চায়েতে বদল দলত্যাগ আইন, বিতর্ক
রাজ্যে বিভিন্ন স্তরে দলবদল নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের অন্ত নেই। সম্প্রতি রাজ্যসভার ভোটপর্বেও বাম এবং কংগ্রেস থেকে বিধায়ক ভাঙানোর দায়ে আঙুল উঠেছে শাসক তৃণমূলের দিকে। এই নিয়ে খোদ বিধানসভায় বিরোধীদের কটাক্ষ যখন চলছে, তার মধ্যেই পঞ্চায়েতে দলত্যাগ বিরোধী আইন সংশোধন করল রাজ্য। শুক্রবার পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই সংশোধনী আনায় আইনটি ফিরে গেল কুড়ি বছর আগের চেহারায়। যা দেখে বিরোধীরা বলছেন, দলবদলে উৎসাহ দিতেই এই সংশোধন।
এ দিন ১৯৭৩ সালের পঞ্চায়েত আইনের যে সংশোধনীটি সুব্রতবাবু এনেছেন, তাতে বলা হয়েছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের যে কোনও ক্ষেত্রেই একসঙ্গে এক-তৃতীয়াংশ নির্বাচিত সদস্য দলত্যাগ করলে তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হবে না। তবে কেউ একক ভাবে দল ছাড়লে তাঁকে পদও ছাড়তে হবে। সরকারি সূত্রের দাবি, এই বিষয়ে ১৯৯৪ সালে পঞ্চায়েত আইনের ২১৩ নম্বর ধারায় যা বলা হয়েছিল, সেটাই ফের কার্যকর করা হল।
এই সংশোধনী নিয়ে এর মধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বামেদের অভিযোগ, আইন শিথিল করে দলবদলের দরজা খুলে দিচ্ছে সরকার। তাঁদের বক্তব্য, ১৯৯৪ সালে সংশোধনী আনার পরে ২০১০ সালে সেই আইন ফের বদলানো হয়। তখন দলত্যাগ বিরোধী অংশটিকে আরও কঠোর করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, নির্বাচিত কোনও সদস্য দলত্যাগ করলেই তাঁর সদস্যপদ খারিজ হবে। এটা এক জনের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমনই এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আরও বলা হয়, কোনও নির্দল সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ছ’মাস পরেও যদি কোনও দলে যোগ দেন, তা হলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে।
বিল পেশের পরে সুব্রতবাবুকে প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী আনিসুর রহমান বলেন, “১৯৭৩ সালে আপনার হাত দিয়েই এ রাজ্যের পঞ্চায়েত আইন তৈরি হয়। এখন যা করতে চলেছেন, তাতে ঘোড়া কেনাবেচার ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেল।” সুব্রতবাবু পাল্টা বলেন, “আপনাদের ঘোড়া যদি দড়ি ছিঁড়ে পালায়, তা হলে বিশ্বের কোন আইন দিয়ে তাদের আটকে রাখবেন?”
ঘটনাচক্রে, এ দিনই তিনটি পুরসভার বেশ কিছু বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই পুরসভাগুলি অবশ্য তৃণমূলের দখলেই ছিল। বামেদের বক্তব্য, আর তো মোটে ৯টি পুরসভা বাকি। তাঁদের অভিযোগ, এ বারে পঞ্চায়েত আইন সংশোধনের পরে একই ভাবে শাসক দল পঞ্চায়েতগুলিও দখলের চেষ্টা করবে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “পঞ্চায়েতের অধিকাংশই ওঁদের দখলে। যেখানে যা বাকি আছে, সব দখল করার ষড়যন্ত্র ছাড়া এই বিলকে আর কিছু মনে হচ্ছে না!” আনিসুর বলেন, “এই বিল পাশ করিয়ে দলবদলকে আইনি সিলমোহর দেওয়া হল। তা ছাড়া এ বারে তো বোর্ড গঠনের দিন কোনও জনপ্রতিনিধি সভায় হাজিরা না দিলেও তাঁকে দলত্যাগ করানো যাবে!” কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, “এর ফলে দলবিরোধী আইন দুর্বল হবে, দলত্যাগ সবল হবে! এই বিল কার্যকর হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।”
বাম আমলে দ্বিতীয় বার আইন সংশোধন করতে হয়েছিল কেন? বাম সূত্রে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সালে কেন্দ্র দলত্যাগ বিরোধী আইন চালু করার পরে তাঁরা ১৯৯৪ সালে পঞ্চায়েত আইনে সেই সংশোধন করেন। পরে কেন্দ্রীয় আইনকে আরও কঠোর করা হয়। সেই মতো ২০১০ সালে ফের পঞ্চায়েত আইন বদলায়। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, দুই-তৃতীয়াংশের কম সাংসদ বা বিধায়ক একসঙ্গে দলত্যাগ করলে দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন। খারিজ হয়ে যাবে তাঁদের আইনসভার সদস্যপদ। সূর্যবাবু জানান, সংবিধানের দশম তফসিল মেনে এবং লোকসভা ও বিধানসভার দলত্যাগ বিরোধী আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আইনটি ফের সংশোধন করা হয়। তাঁদের অভিযোগ, এ দিনের সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ও উপেক্ষা করল রাজ্য।
সুব্রতবাবুর অবশ্য পাল্টা দাবি, “লোকসভা ও বিধানসভার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলিং থাকলেও পঞ্চায়েত নিয়ে নেই।” তৃণমূলের অভিযোগ, বামেরা প্রথম বার আইন বদলাতে প্রায় দশ বছর নেয়। পরে যখন বোঝে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন, তখন ফের আইনটি বদলায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.