স্কুলছাত্রীকে পানশালার পিছনে
নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ, প্রতিবাদে তাণ্ডব
খেলার বল দেবে বলে স্কুল-ফেরত পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে রাস্তা থেকে ডেকে পানশালার পিছনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল হুগলির পোলবায়।
শুক্রবার বিকেলে এই ঘটনার জেরে দিল্লি রোডে ওই পানশালায় ভাঙচুর চালায় জনতা। প্রহৃত হন পানশালার মালিকের ছেলে। পুলিশকে ঘিরে চলে বিক্ষোভ।
ধর্ষণে জড়িত অভিযোগে ধৃত কালু মাহাতো পোলবার দিল্লি রোডের সুগন্ধা মোড়ে পানশালার কাছেই একটি ছোট চায়ের দোকান চালায়। বাড়ি পোলবার অমরপুর গ্রামে। জনতা দোকানটি পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ কালুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে জনতা। শেষ পর্যন্ত চুঁচুড়া পুলিশ লাইন থেকে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
নির্যাতিত ছাত্রীর বাড়ি কাছেই কামদেবপুর গ্রাম। তাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “মেয়েটির বাড়ির লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে।” তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত অপরাধের কথা কবুল করেছে। আজ, শনিবার তাকে আদালতে তোলার কথা।
পানশালার মালিকের গাড়ি ভাঙচুর। ছবি: তাপস ঘোষ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পোলবারই একটি হাইস্কুলে পড়ে ছাত্রীটি। এ দিন সেখানে সরস্বতী পুজোর খাওয়া-দাওয়া ছিল। স্কুল থেকে দিল্লি রোড ধরে হেঁটে একা বাড়ি ফিরছিল মেয়েটি। যাতায়াতের পথে আগেই তার পরিচয় হয়েছিল বছর চব্বিশের কালুর সঙ্গে। পুলিশের দাবি, বল দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এ দিন সে মেয়েটিকে পানশালার পিছনে আমবাগানে ডেকে নিয়ে যায়। কিছু ক্ষণ পরে তার চিৎকার শুনে আশপাশের কয়েকটি কারখানার লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা দৌড়ে আসেন। কালু পালায়।
মেয়েটিকে প্রথমে মোটরভ্যানে চাপিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার বাবা-মা দিনমজুরি করেন। তাঁরা বাড়িতে ছিলেন না। মেয়েটি কাকিমাকে ঘটনার কথা জানায়। গ্রামে সেই খবর চাউর হতেই কয়েকশো মানুষ এসে কালুর দোকানে আগুন দেন। তার পরে চড়াও হন পানশালায়। তাঁদের অভিযোগ, পিছনের আমবাগানে ধর্ষণ হওয়া সত্ত্বেও পানশালার কর্তা ও কর্মীরা মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি, অভিযুক্তের নামও জানাননি। গ্রামবাসীদের জড়ো হতে দেখে দোতলা পানশালাটির একতলার শাটার আগেই নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেটি লক্ষ করে বৃষ্টির মতো ইট ছোড়া হতে থাকে। এক দল লোক দোতলায় উঠে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায়। আগুন ধরানোরও চেষ্টা হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় পানশালার মালিক অমর মাইতির ছেলে স্বরূপকে। তাঁদের একটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। স্বরূপকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে পুলিশও। পরে কালুকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে জনতা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে তাণ্ডব।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানশালা থেকে বেরনো মাতালদের দৌরাত্ম্যে রাতে ওই রাস্তা দিয়ে মেয়েরা যাতায়াত করতে পারেন না। কামদেবপুরের বাসিন্দা মানা সিংহ, বাবলু কর্মকারেরা বলেন, “পানশালাটির কাছাকাছি দু’টি স্কুল আছে। কিন্তু দুপুর থেকেই পানশালায় মদ্যপদের উৎপাত এত বাড়ে যে মেয়েরা সমস্যায় পড়েন। পানশালার কর্মীরা বাধা দিলে এই কাণ্ড ঘটত না।” পানশালা মালিকের আর এক ছেলে অরূপের অবশ্য দাবি, “এখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা কখনও মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন বলে শুনিনি। এ দিন আমাদের কর্মীরাই মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভাঙচুর চালানো হল। ভাইকে মারধর করা হল।” সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক থমথমে। পানশালার সব আলো ভাঙা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কাচের টুকরো। মোতায়েন হয়েছে পুলিশবাহিনী। বহু গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন। অমরবাবুদের ভাঙচুর হওয়া গাড়িটি ব্রেক-ভ্যান দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সব ঘটে যাওয়ার পরে গ্রামে ফিরে ঘটনার কথা শুনে মেয়েটির বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, “মেয়ে প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গেই ফেরে। এ দিন একা পেয়ে ওকে টেনে নিয়ে গেল কালু। আমরা ওর শাস্তি চাই।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.