|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
শুধু শরীরী অভিনয়েই গড়ে তোলেন দৃশ্য পরিমণ্ডল |
স্টুডিয়ো ২১-এ অনুষ্ঠিত হল একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ |
কলকাতায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল পারফর্মেন্স আর্ট ফেস্টিভেল, ২০১৪’। এর একটি অংশ দু’দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে স্টুডিয়ো ২১-এ। দেশের বিভিন্ন অংশের এবং বিদেশেরও প্রায় ৫০ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। অভিনয় ভিত্তিক শিল্পের বিভিন্ন প্রকাশ নিয়ে নানামুখী চর্চা হয়েছে। ‘পারফর্মেন্স আর্ট’ উত্তর-আধুনিক দৃশ্যকলার একটি বিশেষ প্রকাশ-মাধ্যম, যেখানে শিল্পী তাঁর শরীরী অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বিশেষ একটি কনসেপ্ট বা ভাবনার দৃশ্য পরিমণ্ডল গড়ে তোলেন। পাশ্চাত্যে এর সূচনা বা বীজ ছিল ডাডাবাদী আন্দোলনের মধ্যে (১৯১৫-১৯২০) প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে। কিন্তু এর পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে উত্তর আধুনিক বা পোস্ট-মিনিমাল আর্টের অনুষঙ্গে। প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে এর নিকট সম্পর্ক রয়েছে নাট্যাভিনয়, মূকাভিনয় বা নৃত্যের সঙ্গে। আমাদের দেশে লোকশিল্প, যাত্রা, কীর্তন, সং ইত্যাদি দৃশ্যকলায় এই মাধ্যমের চর্চা হয়ে এসেছে দীর্ঘ দিন থেকে। ১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্বায়ন ও উত্তর আধুনিকতার দ্বান্দ্বিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় যে বিকল্প দৃশ্যকলার বিকাশ ঘটেছে তারই একটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘পারফর্মেন্স আর্ট।’ আলোচ্য প্রদর্শনীতে এরই বহুমুখী প্রকাশ আমরা দেখতে পেয়েছি। এই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শিল্পী যেমন সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন, তেমনি ঐতিহ্যগত নানা দার্শনিক ভাবনারও প্রকাশ ঘটে।
স্টুডিয়ো ২১-এ প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে দু’দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন শিল্পীর অভিনয় কলা। কখনও এক একটি ঘরের ভিতরে, কখনও ভিতরের উঠোনে, পিছনের উঁচু বাড়ির ছাদে বা ব্যালকনিতে দেয়াল বেয়ে বেয়ে অবলীলায় উঠে গেছেন কেউ, কখনও বা গ্যালারির সামনের রাস্তার উপরেও অভিনয় করেছেন কোনও শিল্পী। এতগুলো পারফর্মেন্সের ভিতরে এখানে সীমিত পরিসরে অল্প দু’একটি পারফর্মেন্স সম্পর্কেই আমরা কিছুটা আলোচনা করতে পারব। শিল্পীরা প্রায় সকলেই তরুণ প্রজন্মের। বিভিন্ন আর্ট কলেজ থেকে দৃশ্যকলায় প্রশিক্ষিত। |
|
শিল্পী: সবিতা ডাঙ্গোল |
নেপালের শিল্পী সবিতা ডাঙ্গোল-এর পারফর্মেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছে স্টুডিয়ো ভবনের ভিতরে পিছনের উঠোনে। উঁচু আয়তাকার একটি বাঁধানো চাতালের মধ্যভাগে রং দিয়ে বৃত্তাকার একটি পরিসর তৈরি করা হয়েছে। সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। জ্বলছে মোমের প্রদীপ। বৃত্তাকারে সাজানো রয়েছে ধূপকাঠি। ধূপের ধোঁয়ায় পূজার পরিমণ্ডল রচিত হচ্ছে। চাতালের চারটি কৌণিক প্রান্তে চারটি বর্ণের বৃত্তাংশ লাল, নীল, হলুদ, সবুজ। শুরুতে মধ্যবর্তী বৃত্তের ভিতর ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকেন শিল্পী। সাদা পোশাকে আবৃত তাঁর শরীর। মাথার দীর্ঘ চুল সামনে এসে ঢেকে দিয়েছে মুখ। তার পর তিনি উঠে দাঁড়ান। চাতালের প্রান্ত বরাবর ধীরে ধীরে পরিক্রমা করেন। প্রসারিত ডান হাতে ধরা থাকে প্রজ্বলিত মোমবাতি। চার কোনার চারটি বর্ণিল পরিসরের উপর আসেন। দীপশিখা দিয়ে অভ্যর্থনা করেন দর্শককে। এ ভাবে চলতে থাকে তাঁর অভিনয়। বোঝা যায় বৌদ্ধ দর্শনের আত্মপ্রদীপ হয়ে ওঠার প্রত্যয় রয়েছে তাঁর ভাবনার পিছনে। নিজের মানবী-সত্তার উন্মীলন চাইছেন তিনি। এই রচনার নাম ‘ফেমিনিন ফোর্স’।
জাপানের মিরি হামাদা অভিনয় করেছেন গ্যালারির ভিতরের একটি ঘরে। তাঁর রচনার শিরোনাম ‘ব্যালেন্স’। কালো ট্রাউজার ও ধূসর টি-শার্টে আবৃতা এই তরুণী অভিনয় শুরু করেন মেঝের উপর রাখা উল্টোনো কয়েকটি মাটির ভাঁড়ের উপর দাঁড়িয়ে। তাঁর পোশাকের ভিতর লুকোনো থাকে দুটো ইট। দু’টি পর্যায়ে সেগুলো মেঝেতে পড়ে যায়। একটি একটি করে শিল্পী দু’হাতে তুলে নেন সেই ইট। চলতে থাকে ভারসাম্য রচনার খেলা।
কলকাতার ঋতুপর্ণা ও তাঁর সহযোগী কয়েক জন শিল্পী মাঝখানের ঘরে আয়নার সামনে অভিনয় করেন রসতত্ত্বমূলক বৈষ্ণব কাব্যের উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে। কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে নব-রসের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। গ্যালারির সামনের ফুটপাথের উপর অভিনয় করেছেন নেপালের তরুণ শিল্পী ঈশান পেরিয়ার। তাঁর রচনার শিরোনাম ‘ডার্ক ফ্লাই’। ফুটপাথের উপর ছড়ানো থাকে তিক্ততার প্রতীক কিছু করলা। সেইখানে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর সহযোগী এক শিল্পী সাদা কাগজের ফিতে দিয়ে আবৃত করে দেন তাঁর সারা শরীর। এ ভাবে বিভিন্ন শিল্পী উপস্থাপিত করেছেন প্রতীকী অভিনয়। বৈচিত্র ও অভিনবত্বে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। |
|
|
|
|
|