চার দিনে তিন বার আক্রান্ত হয়েছে একটি পরিবার। তিন দিন পরিবারের তিন জনকে নিশানা করা হয়েছে। আলাদা আলাদা ঘটনা নয়, তিনটি ঘটনাই এক সূত্রে বাঁধা বলেই তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান। মঙ্গলবার থেকে লাগাতার সল্টলেকে আক্রান্ত সেই আমলার পরিবারের সদস্য-সহ একাধিক ব্যক্তিকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সে পথেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূত্র হাতে এসেছে পুলিশের। তার ভিত্তিতেই দ্রুত ঘটনার কিনারা হবে বলেই শুক্রবার দাবি করেছে পুলিশ।
অভিযোগ, চলতি সপ্তাহের সোমবার ওই আমলার বড় মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। মঙ্গলবার ওই আমলার বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্ত্রীর উপরে হামলা এবং ঘর থেকে তিন বছরের শিশুকে জোর করে ছাদে নিয়ে ফেলে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। বুধবার স্কুল চত্বরের মধ্যে আমলার স্ত্রী-র ফের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ হয়।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ওই আমলা যে আবাসনে থাকেন, সেখানকারই এক অস্থায়ী বাসিন্দা দ্বিতীয় ঘটনার দিন ছাদ থেকে তিন বছরের শিশুটিকে উদ্ধার করেন বলে দাবি করেছিলেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিছু অসঙ্গতি রয়েছে তাঁর কথায়। পাশাপাশি একাধিক মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে (যার মধ্যে ওই বাড়ির প্রাক্তন পরিচারিকাও রয়েছেন)। সে সূত্রেই পুলিশের একাংশের অনুমান, তিনটি ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনার দিন, তিন বছরের শিশুটির গায়ে লাল রঙের কোনও পদার্থ দিয়ে অশ্লীল কিছু শব্দ লেখা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। ওই লাল রঙটির উৎস জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষার সাহায্য নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে পরীক্ষা করা হয়েছিল। সে দিন কুকুরের গতিবিধিতে বিশেষ সূত্রও উঠে এসেছে। আমলার বাড়িতে হামলাকারী বহিরাগত না কি স্থানীয় সেই বিষয়টিও তদন্তকারীদের চিন্তায় রেখেছে।
স্কুল চত্বরে আমলার স্ত্রী-র হাত কী ভাবে রক্তাক্ত হয়েছে, এ দিনও সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই পুলিশের কাছে। সিসিটিভি-র ফুটেজও বিশেষ কাজে আসেনি। তবে সিসি টিভির ফুটেজে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে বলে সূত্রের খবর।
এ দিকে ওই আমলার পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ দিনও পুলিশ-প্রহরায় আমলার বড় মেয়ে স্কুলে গিয়েছিল। যদিও ওই স্কুলে প্রাথমিক বিভাগে এ দিন স্কুলগাড়ি চালকেরা কাজ বন্ধ রাখেন, কেননা তাঁদের কয়েক জনকে পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ফলে কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয় পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের। তবে পুলিশের এক কর্তা জানান, একই পরিবারে তিন বার হামলার ঘটনা ঘটল। সে ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন ছিল, তাই কয়েক জন পুলকার চালককে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কেন তিন বার পরপর হামলা? পর পর তিনটি ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কার্যত এই প্রশ্নে ধন্ধে পড়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে একটি অভিমুখ পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি পুলিশের। সল্টলেকের গোয়েন্দা প্রধান বলেন, “কিছু সূত্র মিলেছে। আশা করা যায় দ্রুত ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হবে।” |