আর মাত্র এক দিন।
আগামী কাল রাত থেকেই শুরু চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ড। এমনিতেই চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্ব আলাদা হয়। কিন্তু বিশ্বকাপের বছরে যেন সেটা হাই-ভোল্টেজ হয়ে ওঠে।
অনেকের মতো আমার কাছেও জুন মাসে শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড কাপের কাউন্টডাউনটা শুরু হয়ে যাবে কাল রাত থেকেই, যখন বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। প্রিকোয়ার্টার ফাইনালের আটটা ম্যাচের মধ্যে যেগুলো বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।
আগেও লিখেছিলাম আবারও বলছি, এই ম্যাচ থেকেই কিন্তু ওয়ার্ল্ড কাপের স্প্যানিশ ন্যাশনাল টিমের আভাস পেয়ে যাব আমরা। জাভি, ইনিয়েস্তা ছাড়াও নজর থাকবে অনেকের ওপর। এমনিতেই অনেকে বলেছে বার্সেলোনার ডিফেন্স যথেষ্ট দুর্বল। বার্সেলোনার ডিফেন্স দুর্বল হওয়া মানে কিন্তু স্পেনের ডিফেন্স দুর্বল হওয়া। পিকের সঙ্গে জাভিয়ের মাসচেরানা এবং জর্ডি আলবা কেমন খেলে, তা দেখতে অধীর আগ্রহে বসে থাকবে ফুটবল মহল।
অবশ্যই সবার নজর থাকবে লিওনেল মেসির ওপর। বার্সেলোনার প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ তো বলেই দিয়েছেন পনেরো বছর টানা খেলতে খেলতে মেসির খেলার প্রতি সেই প্যাশনটাই চলে গিয়েছে। চোটের পর ফিরে এসে গোল করছে ঠিকই, কিন্তু সেই ‘মেসি ম্যাজিক’টা অনেক ক্ষেত্রেই মিস করে ওঁর ফ্যানেরা।
|
কেরিয়ারে এই প্রথম ও সমালোচিত হচ্ছে। এখান থেকে মেসি কী করে ঘুরে দাঁড়ায় সেটাই ঠিক করবে মেসি গ্রেট ফুটবলার থাকবে না লেজেন্ডারি ফুটবলার হবে। এই হিসেব নিকেশ কিন্তু কাল রাত থেকেই শুরু করে দেবে ওর কোটি কোটি ফ্যান।
মেসির পাশাপাশি আর্জেন্তিনা ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদেরও দেখতে পাব আমরা এই ম্যাচে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মার্টিন ডেমিচেলিস আর পাবলো জাবালেতারো। এঁদের প্রতিটা মুভের দিকে নজর রাখবে বড় টিমের কোচেরা।
আমার মতে এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ৮টা ম্যাচের মধ্যে সেরা ম্যাচ হতে চলেছে এটাই। ভেবে খারাপ লাগছে দু’টোর মধ্যে একটা টিমকে বেরিয়ে যেতে হবে। অবশ্য সেটাই তো স্পোর্টস। যেহেতু দু’টো টিমই অ্যাটাকিং ফুটবল খেলে, ম্যাচে গোলের সংখ্যাও বেশি থাকতে বাধ্য। কিন্তু জিতবে সেই টিম যারা ভাল ডিফেন্ড করতে পারবে। এখানে বলে রাখি ম্যাঞ্চেস্টার সিটি কিন্তু সের্জিও আগুয়েরোকেও মিস করবে প্রচণ্ড। আর্জেন্তিনার আগুয়েরোর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট কিন্তু ভোগাতে পারবে ম্যান সিটিকে।
এ বার আসি বায়ার্ন মিউনিখ বনাম আর্সেনালের ম্যাচে। এই ম্যাচের ড্র দেখে আমার আর্সেনালের জন্য খারাপ লাগছে। প্রত্যেক বার ড্রতেই এই পর্যায়ে তাদের প্রতিপক্ষ হয় কখনও বার্সেলোনা কখনও বায়ার্ন। আর সত্যি বলতে কী, বায়ার্ন অনেক অনেক এগিয়ে আর্সেনাল থেকে।
এই ম্যাচে অনেকেরই নজর থাকবে মেসুত ওজিলের দিকে। জার্মান টিমের এই স্তম্ভ আর্সেনালের হয়ে বায়ার্নের বিরুদ্ধে কী ভাবে খেলে সেটা এই ম্যাচের হাইলাইট হতে বাধ্য। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে বড় ম্যাচে ওজিল অফ ফর্মে থাকে। এ বারও সেটার সম্ভাবনাই বোধ হয় বেশি। সর্বোপরি বায়ার্নের দায়িত্বে থাকা পেপ গুয়ার্দিওলা নতুন কী চমক দেন সেটাও দেখতে আগ্রহী কী চমক দেন, সেটাও দেখতে আগ্রহী থাকবে ফুটবল মহল। এই ম্যাচের দিকে, বা বায়ার্নের দিকে কিন্তু নজর থাকবে ফ্রান্স কাপ টিমের কোচেরও। রিবেরির ফর্ম কী রকম থাকে তার উপর বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে।
এ বার আসি, চেলসি বনাম গালাতাসারে ম্যাচে। এই ম্যাচের হাইলাইট একটাই। স্ট্যাম্পফোর্ড ব্রিজে এ বার অন্য টিমের হয়ে নামতে চলেছেন চেলসির প্রায় ঘরের ছেলে হয়ে যাওয়া দিদিয়ের দ্রোগবা। অনেকের কাছেই এটা ‘রিটার্ন অব দ্য প্রডিগাল সন’। দেখতে গেলে চেলসি সত্যি অনেকটাই এগিয়ে আছে, হোসে মোরিনহোর মতো কোচও রয়েছেন তাঁদের। কিন্তু এই ম্যাচে সবার নজর থাকবে দিদিয়ের দ্রোগবার ওপরেই। এটা যেন অনেকটা সেই আইপিএল-য়ে সৌরভের কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ইডেনে খেলতে নামার মতো ঘটনা। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ টিম-য়ের ডিফেন্সের দুই বিদেশি প্লেয়ারের ফর্মও আমরা জানতে পারব চেলসিকে দেখেই। তাঁরা হলেন জন টেরি এবং গ্যারি কাহিল। এ ছাড়াও ব্রাজিলের কোচ স্কোলারিও কিন্তু চেলসি টিমকে খুব ক্লোজলি ওয়াচ করবে বলেই আমার ধারণা। বিশ্বকাপের চার মাস আগে তিন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার অস্কার, উইলিয়াম এবং ডেভিড লুইজের ফর্ম কেমন, তা অনেক ব্রাজিল সমর্থকের মতোই স্কোলারিও দেখে নিতে চাইবেন। এ ছাড়া যে দু’টো ম্যাচে নজর থাকবে ফুটবল বিশ্বের—তা হল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম অলিম্পিয়াকোজ এবং রিয়াল মাদ্রিদ বনাম শালকে।
মাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কিন্তু এ বার একেবারেই ফর্মে নেই। যদিও এই ম্যাচটা হয়তো ওরা জিতে যাবে, কিন্তু ওদের অন্ধ সমর্থকও জানে, এ বারে ট্রফি জেতার মতো টিমই নয় ‘ম্যান ইউ’। বহু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড সমর্থক অবশ্য ভেবেছিলেন হুয়ান মাতা আসাতে ওদের ভাগ্য ১৮০ ডিগ্রি ঘুরবে। কিন্তু আজকের আধুনিক ফুটবলে কোনও একজন প্লেয়ারের পক্ষে একটা টিমকে রাতারাতি বদলে দেওয়া সম্ভবই নয়। আর বাকি রইল রিয়্যাল মাদ্রিদ বনাম শালকে-র ম্যাচ। এই ম্যাচের কেন্দ্রবিন্দুতে সেই একজনই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বালোন ডি’ওর জেতার পর রোনাল্ডো ম্যাচে আর কী ভেল্কি দেখান, সেটাই হবে এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় হাইলাইট।
সব মিলিয়ে জমজমাট ফুটবল মরসুম কিন্তু শুরু হয়ে গেল আমাদের মতো লক্ষ লক্ষ ফুটবল প্রেমীর জন্য। এখন রাতে শুধু কফির কাপটা নিয়ে টিভির সামনে বসার অপেক্ষা। |