বিনোদন মালদহে বন্ধ হয়ে গেল বাংলা ‘গুন্ডে’ ছবির শো
ন্ডগোলের আশঙ্কা ছিলই। শুক্রবার মুক্তির পর ‘গুন্ডে’ ছবিটির বাংলা সংস্করণ দেখানো বন্ধ হল মালদহের একটি সিনেমা হলে। পশ্চিমবঙ্গে ছবিটির পরিবেশক প্রীতম জালান জানান, অন্তত চারটি সিনেমা হলের মালিকেরা তাঁকে আগেই লিখে জানিয়েছিলেন, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’ ও ‘রাজনৈতিক অশান্তি’র কারণে তাঁরা ছবিটি দেখাতে পারছেন না। শনিবার প্রীতম বলেন, “যশরাজ ফিল্মসের এই ছবিটি শুক্রবার মুক্তি পেলেও মালদহ শহরের একটি হলে শনিবার বাংলা সংস্করণটির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে ছবিটি আর দেখানো হবে না বলে হলের মালিক জানিয়ে দিয়েছেন।”
হুগলির শেওড়াফুলিতেও ছবিটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। শুক্রবার একই মালিকের দু’টি হলে মুক্তি পেয়েছিল বাংলা ও হিন্দি ‘গুন্ডে’। হল সূত্রে খবর, রাতের শো-তে স্থানীয় কিছু লোকজন সিনেমা হলে গিয়ে মালিককে জানান, বাংলা ছবিটি দেখানো চলবে না। তারপর থেকেই কেবল হিন্দি ছবিটিই শনিবার সারা দিন দেখানো হয়। তবে হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের হস্তক্ষেপে সন্ধ্যায় সমস্যা মেটে বলে জানান প্রীতমবাবু। তিনি বলেন, “তপনবাবুর হস্তক্ষেপে সমস্যা মিটেছে। রবিবার থেকে ফের বাংলা ছবিটি চলবে।” তপনবাবু বলেন, “জোর করে কোনও সিনেমা বন্ধ করা চলবে না। পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহের মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছি।” হল কর্তৃপক্ষের তরফে সুব্রত দাসও জানান, সমস্যা মিটেছে। তবে বারাসতের একটি মাল্টিপ্লেক্সে ছবিটির দু’টি সংস্করণই মুক্তির কথা থাকলেও, শুধু হিন্দিটি দেখানো হচ্ছে।
রাজ্যের ৪২টি হলে অবশ্য ‘গুন্ডে’-র বাংলা সংস্করণ চলছে।
কেন এই সমস্যা? হিন্দি ছবি বাংলায় ‘ডাব’ করে দেখানো হলে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি হবে, এই অভিযোগ তুলেছিলেন টলিউডের একাংশ। ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের অন্যতম কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা বলেন, “একাধিক প্রযোজক সংস্থার তরফে আমরা হল মালিকদের অনুরোধ করেছি, বাংলায় ডাব করা ছবি না চালাতে।” কয়েকটি সিনেমা হলের কর্তৃপক্ষ তাতে পিছিয়ে এলেও, মালদহের ‘নবীন’ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল ‘গুন্ডে’-র বাংলা সংস্করণটিই। শনিবার কিন্তু বাংলা তুলে চালু হয়েছে হিন্দি সংস্করণ। হলের মালিক রুণেন্দুকুমার রায় বলেন, “ছবি মুক্তির আগে থেকেই কলকাতার ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-সহ একাধিক প্রযোজক সংস্থার তরফে অনুরোধ করা হচ্ছিল বাংলা ছবির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ছবি দেখানো বন্ধ রাখতে।”
রুণেন্দুবাবুর দাবি, শনিবার সকাল থেকেই একাধিক উড়ো ফোনে তাঁকে বলা হয় ‘গুন্ডে’-র বাংলা সংস্করণ চালানোয় সিনেমা হলে গোলমাল, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে পারে। “আমি গোলমালে জড়াতে চাই না। তাই বাংলা সংস্করণ বন্ধ রেখে হিন্দি সংস্করণ চালাচ্ছি,” বলেন তিনি।
বাংলায় ‘ডাব’ করা হিন্দি ছবি এ রাজ্যে প্রদর্শনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা)-র সহ-সভাপতি কৃষ্ণ দাগা। তিনি বলেন, “হিন্দি ছবি বাংলা ডাব করে চালানোয় আমাদের আপত্তি রয়েছে। এতে স্থানীয় শিল্পী ও কর্মীরা কাজ হারাবেন। তাই ওই ছবিটি বন্ধের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে।” প্রীতম জালানের পাল্টা যুক্তি, “ছবির বেশির ভাগ অংশই বাংলায় শু্যট করা হয়েছে। ছবির শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। ছবিতে রাজ্যের বহু কলাকুশলী কাজ করেছেন। এরপরেও ছবিটি দেখানো স্থানীয় স্বার্থের পরিপন্থী, এই অভিযোগ হতাশাজনক।”
অনেক হিন্দি ছবিই বাংলায় ভাল ব্যবসা করে। সে ক্ষেত্রে কি বাংলা ছবির সঙ্গে বাণিজ্যিক সংঘাত ঘটে? শ্রীকান্ত বলেন, “হিন্দি ও বাংলা ছবির বাজার আলাদা। কিন্তু বড় বাজেটের হিন্দি ছবি বাংলায় ডাব করে দেখানো হলে তা অনেক বাংলা ছবির বাণিজ্যের ক্ষতি করবে।” কিন্তু ডাবিংকে ব্রাত্য না করে, বাংলা ছবিকে ডাব করে অন্য ভাষার বাজার ধরাও তো যেতে পারে? মানতে চাননি শ্রীকান্ত। তাঁর কথায়, “ছোট বাজারের পক্ষে একটা বিশাল বাজার ধরা সম্ভব নয়।” শ্রীকান্ত জানান, তাঁরা বাংলার স্বার্থের কথা ভেবেই এই অনুরোধ করছেন। কেউ তারপরেও বাংলা ‘গুন্ডে’ ছবি প্রদর্শন করলে তাঁদের আপত্তি নেই। টলিউডের আর এক প্রযোজকের মত, “বাংলা ইন্ডাষ্ট্রি এখনও বলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছয়নি। তাই ১০০-১৫০ কোটির হিন্দি ছবি বাংলায় ডাব করে মুক্তি পেলে বাংলার অনেক প্রযোজকই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” বাংলা ভাষায় তাঁদের পছন্দের ছবি দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে এ রাজ্যের দর্শকের ক্ষতি হবে কতটা, সে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.