মঙ্গলযানের সফল উৎক্ষেপণের পর এ বার মহাকাশে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে এগোচ্ছে ভারত। দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ইসরোর মহাকাশচারীদের জন্য নির্দিষ্ট যান (ক্যাপসুল) তৈরি করেছে হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)। তা তুলেও দেওয়া হয়েছে সংস্থার হাতে। মে-জুন মাসে এর প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হবে। তবে মহাকাশে মানুষের অভিযান কবে হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। ইসরো জানিয়েছে, প্রকল্পে কেন্দ্রের অর্থ বরাদ্দ হলেই এ ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করা হবে।
১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন বায়ুসেনার অফিসার রাকেশ শর্মা। কিন্তু সেটি ছিল তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার অভিযান (সয়ুজ টি-১১)। তার পরে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসার হয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছেন কল্পনা চাওলা এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামসও। এ পর্যন্ত রাশিয়া, আমেরিকা ও চিন ছাড়া আর কোনও দেশই মহাকাশে মানুষ পাঠায়নি। ভারত অভিযান চালালে সে ক্ষেত্রে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারে। গত ৫ নভেম্বর শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্রে থেকে উৎক্ষেপণ হয় মঙ্গলযানের। ১ ডিসেম্বর সেটি পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে বেরোয়। সে দিনই মঙ্গল অভিযানে রাশিয়া, আমেরিকা ও ইওরোপীয় মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে এক সারিতে উঠে এসেছিল ইসরো।
ইসরো জানিয়েছে, তাদের ‘ভিশন ২০২৫’ প্রকল্পে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর কথা রয়েছে। এতে প্রায় বারো হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। কেন্দ্রের কাছে অর্থ বরাদ্দের আর্জি জানানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার সাত বছরের মধ্যে অভিযান চালানো হবে। দু’-তিন জন মহাকাশচারীকে নিয়ে এই যানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৪০০ কিলোমিটার উপরে সাত দিন চক্কর কাটতে পারবে।
হ্যাল জানিয়েছে, তারা শুধু মহাকাশ যানটির খোলস তৈরি করেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সেটি ইসরোর বিক্রম সারাভাই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইসরোর ইঞ্জিনিয়াররাই এ বার তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা-সহ নানা যন্ত্রপাতি লাগাবেন। যানটির প্রযুক্তিগত কাজের জন্য কেন্দ্র প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
মহাকাশ অভিযান চালানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির রকেটও তৈরি করছে ইসরো। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর অভিযানের ক্ষেত্রে ‘জিএসএলভি’ রকেটই সব থেকে উপযোগী। তাই জিএসএলভি মার্ক-থ্রি রকেট তৈরি করা হয়েছে। আগামী মে কিংবা জুন মাসে শ্রীহরিকোটা থেকে সেটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হবে। ওই রকেটের সঙ্গেই মহাকাশে মানুষ পাঠানোর জন্য তৈরি করা বিশেষ যানটিরও পরীক্ষা হবে।
এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরোর চেয়ারম্যান কে রাধাকৃষ্ণন জানান, জিএসএলভি-র সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন যানটির প্রযুক্তি ও ওড়ার কলাকৌশল নিয়ে পরীক্ষা চালানো হবে। |