|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
শতবর্ষে শোভন সংস্করণ |
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় (১৯০৭) ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান প্রথমে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়েছিল, বই-আকারে প্রথম সংস্করণ পরের বছর। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলি/ বাঙ্গালার রূপকথা-ও বেরিয়েছিল ১৯০৭-এ। ইউরোপীয়দের উৎসাহে এ দেশের লোককথা সংগ্রহ অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল উনিশ শতকেই, রেভারেন্ড লালবিহারী দে তাঁর ফোক টেল্স অব বেঙ্গল (১৮৮৩)-এর ভূমিকায় তাঁর সংগ্রহের জন্য রিচার্ড কারনাক টেম্পল-এর অনুপ্রেরণার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন। ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান-এর ভূমিকায় রামানন্দ দুঃখ করেছিলেন, বিদেশে লোককথা নিয়ে চর্চা রীতিমতো প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেও ভারতে লোককথা সংগ্রহের কাজটি বিদেশিদের জন্যই রেখে দেওয়া হয়েছে, ভারতীয়রা তাকে কোনও গুরুত্বই দেয়নি। বিশ শতকে অবশ্য লোককথা সংগ্রহের বিষয়টি আস্তে আস্তে যথেষ্ট গুরুত্ব পেতে থাকে এবং জাতীয়তাবাদী আখ্যানে তার ভূমিকাও তৈরি হয়। এক দিকে লোককাহিনি ‘অবিকৃত’ ভাবে, কোনও রকম সংশোধন ছাড়া লিপিবদ্ধ করার উপর জোর দেওয়া এবং অন্য দিকে ছোটরা পড়বে বলে ‘সামান্য’ পরিবর্তন করা এই দুটি বিষয়ের উল্লেখই রামানন্দের ভূমিকায় নজর কাড়ে, যা পরে ভারতীয় লোককথা সংগ্রহের বিচিত্র ইতিবৃত্তে বহু আলোচিত। আর একটি লক্ষণীয় দিক, গল্পগুলি সুফি সন্ত শেখ চিল্লি-র নামে প্রকাশিত, যদিও আদতে শ্রীশচন্দ্র বসু এগুলি সংকলন করেন। সংকলনটি উৎসর্গ করা হয়েছিল যুক্তপ্রদেশের লেফটেনান্ট-গভর্নর জে এস মেস্টনকে, সেখানে উল্লেখ ছিল লোককথাগুলি সেই অঞ্চলে প্রচলিত। সমসাময়িক আলোচনা থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, উত্তর ভারতে বহুপ্রচলিত নানা ফার্সি-উর্দু কিসসা-কাহিনিই এর উৎস।
ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান ১৯১২-য় বাংলায় অনুবাদ করেন রামানন্দ-কন্যা সীতা দেবী ও শান্তা দেবী (হিন্দুস্থানি উপকথা)। সঙ্গে ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অনবদ্য চিত্রণ। ১৯১৩-য় ইলাহাবাদের পাণিনি অফিস থেকে প্রকাশিত হল মূল ইংরেজি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ। উপেন্দ্রকিশোরের ছবিগুলি এতেও সংযোজিত হয়। চর্চাপদ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হল বইটির নতুন শোভন সংস্করণ (ফোক টেল্স অব হিন্দুস্তান, শেখ চিল্লি। ৮৮০.০০), সেখানে গল্পগুলির সঙ্গে নতুন করে অনেক রঙিন ছবি এঁকেছেন অনুপ রায়। শেষে রয়েছে মূল দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা, এবং এই বইয়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। উপেন্দ্রকিশোরের আঁকা ৩৫টি ছবির মধ্যে এখানে ছাপা হয়েছে ২৮টি সাদাকালো ছবি। |
|
|
|
|
|