ভারতীয় রেলের ‘ঐতিহ্য উত্‌সব’ কাশিমবাজারে
ময়ের কী পরিহাস! একদা আন্তর্জাতিক বাজারে মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার পরিচয় ঘটত বন্দরশহর কাশিমবাজারের দৌলতে। আজ অখ্যাত এক মফস্‌সল। সেই কাশিমবাজার রেল স্টেশনে আজ, শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ভারতীয় রেলের ‘হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল’। অর্থাত্‌ ঐতিহ্যের উত্‌সব। চলবে কাল, শনিবার পর্যন্ত। ওই উত্‌সবে যোগ দিচ্ছে পূর্বরেল, দক্ষিণ-পূর্ব রেল, উত্তর-দক্ষিণ-ফ্রন্টিয়ার রেল ও কলকাতা মেট্রোরেল। হাওড়া, শিয়ালদহ, খড়গপুরের মতো স্টেশন থাকতে ২০১৪ সালের প্রস্তাবিত ৬টি ‘হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল’-এর মধ্যে প্রথমটিই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কাশিমাবাজারে।
কিন্তু এত দিন পরে কেন বেছে নেওয়া হল কাশিমবাজারকে? শতবর্ষ আগেও মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর দানের দৌলতে একদা কাশিমবাজার ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক পীঠস্থান। এমনকী মণীন্দ্রচন্দ্র ও মনীষী রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ট্রেনে চেপে কাশিমবাজার রাজবাড়িতে পৌঁছেছিলেন ১৯০৭ সালের ৩১ অক্টোবর। পরদিন ১ নভেম্বর তাঁর সভাপতিত্বেই বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের আনুকূল্যে কাশিমবাজার রাজবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় সুবে বাংলার প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন। চলে দু’দিন ধরে। ওই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের নিজের কণ্ঠে গেয়েছিলেন নিজের লেখা গান। ওই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের সাহিত্যসেবী রাজারাজড়া ও প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকরা। তাঁদের সংখ্যা প্রায় দেড়শো। তাঁদের সবার কাশিমবাজার রাজবাড়ির সাহিত্যবাসরে আগমন ও প্রত্যাবর্তনের সহায় হয়েছিল একমাত্র ভারতীয় রেল।
চলছে প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র।
ইতিহাসের পাতায় আজও বিধৃত রয়েছে, মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের পড়ুয়া স্বেচ্ছাসেবকরা ওই অতিথিদের বহরমপুর-ভাবতা স্টেশন থেকে সংবর্ধনা দিয়ে পৌঁছন কাশিমবাজার স্টেশনে। সেখান থেকে পাল্কি আর এক্কা গাড়িতে স্টেশন লাগোয়া রাজবাড়িতে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়া কাশিমবাজার একদা ছিল আন্তর্জাতিক বন্দরশহর, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। তখন ছিল জলপথে বাণিজ্য, এখন রেল ও সড়কপথে। অতীত ওই ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে ২০১৪ সালে দেশে প্রস্তাবিত ৬টি হেরিটেজ ফেস্টিভ্যালের মধ্যে প্রথম উত্‌সবটির আয়োজন করা হয়েছে কাশিমবাজারে।”
রেল সূত্রের খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে বাকি ৫টির মধ্যে ৪টি হেরিটেজ উত্‌সব অনুষ্ঠিত হবে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশে। তবে এ রাজ্যে ওই উত্‌সব অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেবল কাশিমবাজারে। ভারতীয় রেল ও বহরমপুর পুরসভার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই উত্‌সবে সহযোগিতা করছে ‘ব্রেস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংস্থা। রেলের হেরিটেজ কমিটির অন্যতম সদস্য অতসী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উত্‌সব সফল করতে রেল, বহরমপুর পুরসভা (এই পুরসভা ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকাবদ্ধ), ব্রেস ফাউন্ডেশন ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করছে সুইত্‌জারলান্ডের দূতাবাস।” অতসীদেবী বলেন, “এই উত্‌সবে ভারতীয় রেলের বিবর্তন, রেলের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও মানব সমাজের সম্পর্ক তুলে ধরা হবে বিভিন্ন মডেল, আলোচনা চক্র, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। রেলের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়েও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।”
বহরমপুর পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ডগরবাদ্য, ঢাকবাদ্য, আদিবাসী নৃত্য, লোকগান, আধুনিক সংগীত, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করা হবে। এ ছাড়াও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন শুক্রবার স্বাগতালক্ষ্মী ও শনিবার শ্রাবণী সেন।” উপপুরপ্রধান মৈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ভারতীয় রেলের সঙ্গে স্বামী বিবেকান্দ, মহাত্মা গাঁধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জহরলাল নেহরু, সত্যজিত্‌ রায় ও ওস্তাদ আমজাদ আলি খান প্রমুখ দেশ বরেণ্যদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সেই সব ইতিহাস তুলে ধরা হবে দু’দিনের ওই উত্‌সবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বরেলের এক কর্তা বলেন, “স্টিম ইঞ্জিন থেকে বর্তমান দ্রুততম গতির বৈদ্যুতিক ও অত্যাধুনিক ট্রেনের বিবর্তনকে তুলে ধরা হয়েছে রেলের হেরিটেজ ফেস্টিভ্যালে। ওই বিবর্তন তুলে ধরতে আনা হয়েছে রেলে বিভিন্ন সময়ের ১২টি ইঞ্জিন ও মডেল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.