বিকল্প নীতির সরকারই ব্রিগেড-বার্তা বামেদের
লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির নেতৃত্বে তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গড়ার আহ্বান ব্রিগেড থেকেও জানাল বামফ্রন্ট। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু— সকলেই রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে কেন্দ্রে বিকল্প নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়ার পক্ষে সওয়াল করলেন। অন্যান্য সময়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-র সম্ভাব্য আঁতাঁত নিয়ে সরব থাকেন বামেরা। নরেন্দ্র মোদীর সমাবেশের প্রায় পিঠোপিঠি এই ব্রিগেড-সমাবেশ থেকে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকেই কড়া আক্রমণ করেছেন বাম নেতৃত্ব। বিজেপি, তৃণমূল এবং কংগ্রেস অবশ্য বামেদের তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গঠনের আহ্বানকে প্রত্যাশিত ভাবেই গুরুত্ব দিতে চায়নি।
ব্রিগেডমুখী সিপিএম। হুগলির সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে (বাঁদিকে)।
ডানদিকে, হাওড়ার সাঁকরাইলের কাছে মুম্বই রোডে। ছবি: দীপঙ্কর দে ও সুব্রত জানা।
গত বুধবার মোদীর ব্রিগেড-সমাবেশের দিন দিল্লিতে সিপিএম, সিপিআই-সহ বিভিন্ন বাম ও আঞ্চলিক দল মিলিত হয়ে সংসদে একটি ব্লক হিসেবে কাজ করার কথা ঘোষণা করেছে। সে দিনই তাদের এই ‘থার্ড ফ্রন্ট’কে ‘থার্ড গ্রেড’ বলে কটাক্ষ করেন মোদী। বঙ্গবাসীকে দু’হাতে লাড্ডু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র তাঁকে এবং রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাখলে বাংলার উন্নয়ন হবে। এরই জবাবে বুদ্ধবাবু এ দিন বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী দু’হাতে লাড্ডুর কথা বলেছিলেন। একটা নরেন্দ্র মোদীর লাড্ডু। আর একটা তৃণমূলের লাড্ডু। ও লাড্ডু কেউ ছোঁবে না! ও লাড্ডু খেলে পস্তাতে হবে!” আর কারাটের কথায়, “আমরা বিজেপি-কে কোনও সুযোগ দেব না। ১০ বছর কংগ্রেস দিল্লিতে রাজত্ব করেছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শেষ করতে পারেনি। তাই অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে এক করে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তুলব।” সংসদের অধিবেশন শেষ হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি। কারাট জানান, সংসদের অধিবেশন শেষ হলে দিল্লিতে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি বিভিন্ন দল বৈঠকে বসবে। সেখান থেকেই গড়ে উঠবে তৃতীয় বিকল্প।
বাম নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটের আগে কাউকে তৃতীয় ফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরায় তাঁরা বিশ্বাসী নন। তাঁরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী বাছার চেয়ে বেশি জরুরি বিকল্প নীতি ঠিক করা, যার ভিত্তিতে কেন্দ্রে সরকার গড়ার ডাক দেওয়া হবে। বুদ্ধবাবুর কথায়, “দিল্লিতে বিকল্প নীতির সরকার চাই। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা নীতি নিয়ে।”
কী সেই নীতি?
বুদ্ধবাবু জানান, সকলের জন্য রেশন, পেট্রোল-ডিজেলের দামে সরকারি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাঙ্ক, বিমা, কয়লা খনির বেসরকারিকরণ হতে না দেওয়া, গরিব মানুষকে জমি দেওয়া ইত্যাদি নীতির ভিত্তিতেই কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গঠন করতে চান তাঁরা। সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদারও তৃতীয় বিকল্পের পক্ষে সওয়াল করেন।
২০০৯-এর লোকসভা ভোটে বামেদের খারাপ ফলের পর সিপিএম নেতৃত্ব স্বীকার করেছিলেন, মানুষের সামনে গ্রহণযোগ্য বিকল্প জোট তুলে ধরায় ব্যর্থতাই ওই দুর্দশার কারণ। এ বার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কারাটরা সচেষ্ট।
বাম শিবিরের দাবি, ওই প্রয়াসের জোর আঁচ করেই ব্রিগেড সমাবেশ থেকে মোদী তৃতীয় ফ্রন্ট ‘থার্ড গ্রেড’ বলে আক্রমণ করেছেন। ১৯৯৬ সালে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের জোট সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এসেছিল ১৩ দিন বয়সি অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের পতন ঘটিয়ে। এ বারে কারাটদের তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে সেই আশঙ্কার স্মৃতি মনে পড়াচ্ছে বলেই অভিমত বামফ্রন্ট শিবিরের। কারাট এ দিন বলেন, “উনি (মোদী) আমাদের থার্ড গ্রেড বলেছেন। মোদীরা নাকি ফার্স্ট গ্রেড! কিন্তু উনি জেনে রাখুন, আমরা সব থেকে উঁচু গ্রেডে আছি।” কী ভাবে তাঁরা ফ্রন্ট গড়ে তুলছেন, তার ইঙ্গিত দিয়ে কারাট বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরলে বিজেপি কোথায়? সব জায়গাতেই অসাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক দল রয়েছে।”
গত ৩০ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে মমতা ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’-এর ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তিনি কোনও জোটসঙ্গী পাননি। এই পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষের কাছে তৃতীয় ফ্রন্টকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ব্রিগেডের সভাকে কাজে লাগালেন কারাট-বুদ্ধবাবুরা। সেই উদ্দেশ্যেই তৃণমূল-বিজেপি-র সম্ভাব্য ‘আঁতাঁত’-এর প্রসঙ্গ এ দিন ফের সামনে এনেছেন বাম নেতৃত্ব। লোকসভায় তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে পরোক্ষে বিজেপি-কেই সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়া এই বার্তা দিয়ে কারাট বলেন, “বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ভাল। ব্রিগেডের সভা থেকেই মোদী মমতাকে আমন্ত্রণের বার্তা দিয়েছেন।” ১৯৯৯-২০০১ পর্যন্ত মমতা যে বিজেপি-র মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন, তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন কারাট।
তৃণমূল অবশ্য বামেদের তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গড়ার ডাককে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, ‘‘এক একটা করে নির্বাচন আসে এবং এই তৃতীয় ফ্রন্টের কথা ওঠে। তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে বামেরা যা-ই বলুন, লোকসভা ভোটের পর তারা এমন একটা সংখ্যায় পৌঁছবে, যাতে বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে তারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে!” তাঁর দাবি, কেন্দ্রে এ বার সরকার গঠনে নির্ণায়ক শক্তি হবে তৃণমূল। মুকুলবাবুর আরও দাবি, “আমরা কংগ্রেসের সঙ্গেও নেই। বিজেপি-র সঙ্গেও নেই। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস একসঙ্গে আছে, তা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে।” বিজেপি-র মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের বক্তব্য, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ক’দিন আগেই কলকাতায় জানিয়েছেন, ৩৪ বছরে বামেদের হাতে পশ্চিমবঙ্গের কী হাল হয়েছে। কেন্দ্রের ক্ষমতা ওই শক্তির হাতে গেলে দেশ আরও পিছিয়ে যাবে। ওই শক্তি কোনও বিকল্প নয়।” অন্য দিকে, এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদের কথায়, “এই ধরনের তৃতীয় ফ্রন্ট কোনও বিকল্প নয়। আসলে নিজেদের রাজ্যে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতেই ওই দলগুলি তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বলছে।” তবে কংগ্রেসের একাংশ নেতা মনে করেন, লোকসভা ভোটের পরে তাঁদের দল সরকার গড়ার পরিস্থিতিতে না থাকলে বিজেপি-কে ক্ষমতার বাইরে রাখতে ওই ধরনের ধর্মনিরপেক্ষ জোটকে সমর্থন করা যেতেই পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.