আসানসোল সাজাতে উদ্যোগী ফেসবুক-প্রজন্ম
শুধু গ্রুপ চ্যাট আর ছবি আপলোড করেই কি কেটে যাবে সময়?
ফেসবুকের আড্ডায় প্রশ্নটা তুলেছিলেন গ্রুপের এক সদস্য। ভাবনায় পড়েছিলেন অন্যেরা। আর কী করা যেতে পারে, আসতে শুরু করে মতামত। এমন কিছু করতে হবে, যাতে নিজেদের শহরের মানুষের উপকার হয় প্রস্তাব দেন কয়েক জন। ভাবার পরে আর অপেক্ষা নয়। শহরটা সুন্দর করতে, গরিবের পাশে দাঁড়াতে নেমে পড়েছেন আসানসোলের জনা পঁয়ত্রিশ তরুণ-তরুণী। ছুটির দিনগুলোতে কখনও তাঁরা অবহেলায় পড়ে-থাকা মণীষীর মূর্তি ঝাড়পোঁছ করছেন, কখনও ফুটপাথবাসীকে কম্বল দিচ্ছেন।
কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ স্কুলে পড়ান, কেউ বা আবার ওকালতি করেন। বয়স ২০ থেকে ৩২-এর মধ্যে। সকলেরই বাড়ি আসানসোলে। কর্মসূত্রে কয়েক জন এখন বাইরে থাকেন। কিন্তু তাঁরা সবাই ফেসবুকের ‘আসানসোলসিটি’ পেজে রয়েছেন। আর নিজেদের উদ্যোগের নাম দিয়েছেন, ‘ই-মোশন।’ কেন এই উদ্যোগ? ফেসবুকে নানা বিষয়ের সঙ্গে নিজেদের শহর নিয়েও নিয়মিত আলোচনা হত তাঁদের। এমনই এক সদস্য অর্ক মণ্ডল বলেন, “এক দিন কথা ওঠে, শুধু গল্পগুজব করে সময় না কাটিয়ে এমন কিছু করা উচিত যা মানুষের উপকারে আসে। অনেক সদস্যই একমত হলেন। তখন ঠিক হল, আসানসোল পোলো ময়দানে সভা করে কর্মসূচি ঠিক করা হবে।”
চলছে আসানসোলে শিশু উদ্যানের দেওয়াল ও
রেলিং পরিষ্কারের কাজ। ছবি: শৈলেন সরকার।
সভায় হাজির সদস্যদের মতামত নিয়ে কিছু কাজের তালিকা তৈরি করে ফেলা হয়। কাজ শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর থেকে। সেই রাতে রাস্তায় বেরিয়ে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা ৭০ জনকে কম্বল দেন তাঁরা। দিন কয়েক আগে আদালত চত্বরে বিদ্যাসাগরের মূর্তিটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করলেন এই তরুণ-তরুণীরা। মূর্তির চারপাশের আগাছাও কেটে ফেললেন। এক দিন শহরের একটি শিশু উদ্যানের নোংরা দেওয়াল সাফসুতরো করে রঙ করলেন। সদস্যেরাই চাঁদা তুলে খরচ জোগাচ্ছেন ই-মোশনের নানা কাজের।
পেশায় সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অভিষেক সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা বড় হয়েছি, পড়াশোনা করেছি এই শহরে। তাই ঠিক করেছি, নিজেদের সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করব। হাতে হাতে মিলিয়ে তাই নেমে পড়েছি।” শহরের কাল্লা এলাকার বধূ মধুশ্রী মণ্ডল, শিক্ষিকা বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়দের কথায়, “এলাকার উন্নয়নে নাগরিকদের একটি ভূমিকা থাকে। সেটাই পালন করার চেষ্টা করছি।” বর্তমানে বেলজিয়ামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন শহরের কোর্ট মোড়ের বাসিন্দা নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। ফেসবুকে জেনেছিলেন বন্ধুদের উদ্যোগের কথা। ছুটিতে বাড়ি এসে হাত লাগান তিনিও। মূর্তি সাফ করার ফাঁকে নিবেদিতা বলেন, “আমাদের গ্রুপে কয়েক হাজার সদস্য আছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কাজ চালিয়ে যাব।”
অনলাইন চ্যাট করার সঙ্গে সঙ্গে কোমর বেঁধে সমাজের কাজে নেমে-পড়া ফেসবুক-গ্রুপ অবশ্য আরও আছে। ‘বাংলা ও বাঙালি’ গ্রুপ শুরু হয় ২০০৯ সালে। অরকুট, ফেসবুক পেরিয়ে এখন তৈরি হয়েছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট। সদস্যরা জানিয়েছেন, রবিবারের আড্ডায় গল্প, গান ছাড়াও সামাজিক কর্মসূচি ঠিক হয়। সদস্যরা কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা থেকে আসেন। গ্রুপের সদস্য কুশল মুখোপাধ্যায় জানান, বেহালায় দৃষ্টিহীনদের একটি স্কুলে পড়াশোনার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। কলকাতা এবং উত্তরপাড়ায় পথশিশুদের আঁকা শেখাতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা।
সমাজসেবায় সক্রিয় আর একটি ফেসবুক গ্রুপ হল ‘এসো কিছু করি’। সদস্য আবিরা ঘোষ জানান, জেলার দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করলে
স্কুলব্যাগ, বই, খাতা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কেউ মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেলে তাঁদের সহায়তা করা হয়। করা হয় ‘কেরিয়ার কাউন্সেলিং’।
তবে আলসে ‘নেটিজেন’ থেকে উদ্যমী ‘সিটিজেন’ হওয়ার উদাহরণ খুব বেশি নেই। আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের আলোচনা থেকে এ ধরনের গঠনমূলক কাজের কথা ভাবা হয়েছে, জেনে খুব ভাল লাগছে। শহরের কাজে পুরসভার সঙ্গে নাগরিকদেরও যে দায়িত্ব রয়েছে, তা-ও ওঁরা বুঝিয়ে দিলেন। আমরা ওঁদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করব।”

কাটোয়ায় খুন
হাটতলা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক যুবককে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শনিবার সকালে কাটোয়া থানার পাঁচঘড়া গ্রামের সেচখালের কাছে ঘটেছে। নিহত বাঁকা শেখ ওরফে মফিজুলের (২৫) বাড়ি কাটোয়ার খাজুরডিহি গ্রামে। পুলিশের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুষ্কর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.