টাকা পড়ে আছে, অথচ কাজ এগোচ্ছে না জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযান প্রকল্পে। এমনকী শূন্য পদে আশাকর্মী নিয়োগও হয়নি। এর ফলে জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন চিকিৎসা পরিষেবায় বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত আর্থিক বছরে প্রায় ১৯ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা বেঁচেছিল। চলতি বছরে ফের ১৪ কোটি সাড়ে ৪২ লক্ষ টাকা পাওয়ার পর অঙ্কটা দাঁড়িয়েছিল ৩৪ কোটির কাছাকাছি (৩৩ কোটি ৭০ লক্ষ প্রায়)। এর মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ১৮ কোটি সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা! আগামী মার্চে চলতি আর্থিক বছর শেষ। হাতে মাত্র আর দু’টি মাস। যেখানে সারা বছর ধরে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি টাকা খরচ করতে পেরেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর, সেখানে দু’মাসে বাকি টাকা খরচ করা কার্যত অসম্ভব বলে মেনে নিচ্ছেন দফতরের কর্তারাও। অথচ, এই প্রকল্পে স্বাস্থ্য দফতরের পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে নিয়োগসব ক্ষেত্রেই খরচ করা যায়। কিছু না হোক, বছরের পর বছর ধরে আশাকর্মীর পদ শূন্য পড়ে রয়েছে জেলায়। শুধু আশাকর্মীই নয়, নার্স ও চিকিৎসকের বহু পদও শূন্য পড়ে রয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযান প্রকল্পে এই কাজগুলোও করা যায়। টাকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ না হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন জেলাবাসী।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযান চালু হওয়ার পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৪৫৭৫টি পদে আশাকর্মী নিয়োগের লক্ষ্যমাত্র নেওয়া হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩৬৪৪ জনকে নিয়োগ করতে পেরেছে তারা। ৯৩১টি পদ শূন্য! আশাকর্মীদের নিয়োগ নিয়ে যতই টালবাহানা হোক না কেন, তাঁদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে হাসপাতালমুখী করা, এলাকায় কোনও অজানা রোগ বা মহামারীর আশঙ্কা দেখা দিলে স্বাস্থ্য দফতরকে জানানোর পাশাপাশি সাধারণ ছেঁড়া-কাটায় ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা বা প্রাথমিক চিকিৎসার কাজটাও আশাকর্মীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এমনকী গ্রামে শৌচাগার তৈরি বা ব্যবহারের বিষয়েও মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধেই। ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ (২৫ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে) মহিলাদের আশাকর্মী পদে নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে, বিবাহিতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। সম্প্রতি আশাকর্মীদের দেড় হাজার টাকা করে মাইনে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। এর বাইরেও কাউকে পরিবার পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসতে পারলে, টিকাকরণে সাফল্য পেলে, প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উৎসাহ ভাতা মেলে। আশাকর্মীদের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য তাঁদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু এলাকায় তা দেওয়াও হচ্ছে। সেখানে টাকা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১ হাজার শূন্য পদে নিয়োগ করা হল না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আশাকর্মীর পাশাপাশি গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযানের টাকায় নার্স ও চিকিৎসকও নিয়োগ করতে পারে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তবে চুক্তির ভিত্তিতে এই নিয়োগ হয়। জেলায় এই খাতে ৮৫৮ জন এএনএম নার্স নিয়োগের কথা ছিল। সেখানে ৭৩৪ জন নিয়োগ করা হয়েছে। ১২৪টি পদ শূন্য। জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার ৯৬ জনের পরিবর্তে রয়েছেন ৬৩ জন। ৩৩টি পদ শূন্য। আর স্পেশ্যালিস্ট চিকিৎসকের ক্ষেত্রে ৫৪ জনের পরিবর্তে রয়েছেন মাত্র ১ জন! স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে যেহেতু কম টাকায় চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া কঠিন এটা ঠিক, তবে এএনএম বা চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটু চেষ্টা করলে কোটা পূরণ করা যেতে পারে।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “আশাকর্মী নিয়োগে পদক্ষেপ করা হয়েছে। দ্রুত সমস্ত শূন্য পদ পূরণের চেষ্টা হচ্ছে। তবে অন্য ক্ষেত্রে নিয়োগের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযানের টাকায় পরিকাঠামোর উন্নয়নে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” |
আর্সেনিক প্রভাবিত এলাকায় জল প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শনিবার পূর্বস্থলীর নাদনঘাটের ন’পাড়ায় জলপ্রকল্পের শিলান্যাস করতে এসে এ কথা বলেন তিনি। |