|
|
|
|
আইএপিতে তৈরি মার্কেট শেড, কমিউনিটি হল পড়েই |
সুমন ঘোষ • লালগড় |
মার্কেট শেডে ধান শুকোচ্ছেন গ্রামের মানুষ। আর কমিউনিটি হল তৈরির পর থেকেই তালাবন্ধ!
মাওবাদী এলাকার উন্নয়নে বিশেষ কেন্দ্রীয় প্রকল্প আইএপি (ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান)-তে তৈরি জঙ্গলমহলের মার্কেট শেড ও কমিউনিটি হলগুলির এখন এরকমই অবস্থা। এই প্রকল্পে অন্য বেশ কিছু কাজ মানুষের উপকারে এলেও এই দু’টি জিনিস ব্যবহারই হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত চিন্তাভাবনার ফলেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেখানে পানীয় জল, সেচ বা অন্য প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মার্কেট শেড ও কমিউনিটি হল তৈরি হওয়ায় তা কাজে আসছে না। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির বক্তব্য, “এ বার থেকে মানুষের প্রয়োজন উপযোগী প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রেই জোর দেওয়া হচ্ছে। সে ভাবে পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে।” |
|
ভীমপুরে অব্যবহৃত মার্কেট শেড। |
২০১০-১১ অর্থবর্ষ থেকে আইএপিতে টাকা দিতে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার। মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় চোখে দেখা যায় এমন প্রকল্প রূপায়ণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বার থেকে বরাদ্দ টাকার ১০ শতাংশ ব্যয় করে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং’ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই প্রকল্পে এ রাজ্যে প্রথম টাকা পায় পশ্চিম মেদিনীপুর। পরের বছর থেকে জঙ্গলমহলে বাকি দুই জেলা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াও টাকা পেতে শুরু করে। পরিকল্পনা তৈরির জন্য জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও ডিএফওদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ওই কমিটিই পরিকল্পনা তৈরি করে। প্রথম বছর ২৫ কোটি টাকা পায় জেলা। পরের দু’বছরে ৩০ কোটি করে ৬০ কোটি টাকা। তা দিয়ে ২১২৬টি প্রকল্প রূপায়িত হয়। যার মধ্যে ২৩০টি আশ্রম স্কুল, ১০২৬টি পানীয় জল প্রকল্প, ৩০১টি ক্ষুদ্র সেচ, ৩টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৫৯টি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ নানা প্রকল্প তৈরি করা হয়। সব ক্ষেত্রেই উপকৃত হচ্ছেন উপভোক্তারা। তবে এই প্রকল্পে জেলা জুড়ে তৈরি হওয়া ৩৮টি মার্কেট শেড ও ৪৩টি কমিউনিটি হলের বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে না।
রামগড়ের কমিউনিটি হলটি নিয়মিত ব্যবহার হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজের জন্য। বাকি সব কমিউনিটি হল তালাবন্ধ। যেখানে জেলার এক হাজারের বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ক্লাবে বা গাছতলায় চলে সেখানে এই প্রকল্পে একটিও অঙ্গনওয়াড়ি তৈরি করা হয়নি। জঙ্গলমহলের বাকি দুই জেলা বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ায় মার্কেট শেড বা কমিউনিটি হল তৈরি হয়নি বললেই চলে। বাঁকুড়াতে ৩টি ও পুরুলিয়াতে মাত্র ১ কমিউনিটি হল হয়েছে। কোথাও ১টিও মার্কেট শেড করা হয়নি। পরিবর্তে বাঁকুড়া এই প্রকল্পে ৮০টি এবং পুরুলিয়া ৬৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি করেছে। তাই পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। |
|
তালাবন্ধ কমিউনিটি হলও। —নিজস্ব চিত্র। |
লালগড়ের ঝিটকা গ্রামের মার্কেট শেডে ধান শুকনো করেন গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক অতনু আহিরের কথায়, “গ্রামে পানীয় জলের হাহাকার। সরকারিভাবে তৈরি সব নলকূপই খারাপ। অথচ, পানীয় জলের ব্যবস্থা না করে মার্কেট শেড করা হল!” গ্রামীণ চিকিৎসক বিজন সাহার কথায়, “পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি নেই। আমরা এসবেরই দাবি জানিয়েছিলাম। দেখলাম মার্কেট কমপ্লেক্স করা হল।” শালবনির ভীমপুরেও ২টি মার্কেট শেড ও একটি অডিটোরিয়াম করা হয়েছে। অডিটোরিয়ামটি তালাবন্ধ। মার্কেট শেডেও বাজার বসে না। ভীমপুর থেকে নির্বাচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য সনৎ মাহাতোর কথায়, “পঞ্চায়েত অফিসের পিছনে বহু বছর ধরে বাজার বসে। বাজারটির বেহাল দশা। সেটির সংস্কার না করে অন্যত্র মার্কেট শেড করা হল! সেখানে কে যাবে। গ্রামে অডিটোরিয়াম কী হবে? তার থেকে কিষাণ মান্ডি হলে ভাল হত। আশপাশের ৫-৭টি গ্রামের মানুষ সব্জি বিক্রি করতে পারতেন। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছি।”
প্রশ্ন ওঠায় এ বার অবশ্য পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আনতে চাইছে প্রশাসন। চলতি আর্থিক বছর ও পরের বছর মিলিয়ে আরও ৬০ কোটি টাকা পাওয়ার আশ্বাস মিলেছে কেন্দ্রের কাছ থেকে। ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা পাওয়াও গিয়েছে। এ বার ১৩৮টি প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার মধ্যে অবশ্য একটিও কমিউনিটি হল নেই। উল্টে ১১টি মাওবাদী উপদ্রুত ব্লকে ৩টি করে ৩৩টি মডেল অঙ্গনওয়াড়ি বানানো হবে। প্রতিটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা করে। ৭টি মার্কেট শেডও ধরা হয়েছে। এ বার তা পড়ে থাকবে না বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি। জেলাশাসকের কথায়, “কোন প্রকল্পে কত মানুষ উপকৃত হবেন, সেই সমীক্ষার পরেই এ বার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|