জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দ্রুত নতুন নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। অথচ, সেই তালিকায় নেই বার্ন ইউনিট। লালগড়ের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও হাসপাতালেই বার্ন ইউনিট নেই। ফলে, গুরুতর দ্বগ্ধ রোগীদের এখনও কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। ফলে, মাঝেমধ্যে নানা সমস্যাও দেখা দেয়। সমস্যায় পড়েন রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। মেদিনীপুরে মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। ঝাড়গ্রামে স্বাস্থ্য জেলা হয়েছে। তবু, এখনও কেন বার্ন ইউনিট গড়ে উঠল না? পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “রাজ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে বার্ন ইউনিট তৈরির অনুমোদন এসেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দু’টি নয়, জেলা থেকে চারটি বার্ন ইউনিট তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল রাজ্যে। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে বার্ন ইউনিট তৈরি করা হোক। এরমধ্যে মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে অনুমোদন মিলেছে। খড়্গপুর এবং ঘাটালের ক্ষেত্রে এখনও অনুমোদন মেলেনি। পরিস্থিতি দেখে এই দুই মহকুমা হাসপাতালেও বার্ন ইউনিট তৈরির জন্য রাজ্যে ফের চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেও ঠিক কবে মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে এই ইউনিট তৈরির কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “কর্মীর সমস্যা রয়েছে। হাসপাতালগুলো বারেবারে ওই সমস্যার কথা জানাচ্ছে। নতুন ইউনিট চালু করে দিলেই তো হল না। তা সচল রাখতে হবে। কর্মী না- থাকলে ওই ইউনিট চালু রাখবে কে?” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার যুগল কর বলেন, “মেদিনীপুরে বার্ন ইউনিট চালু করা জরুরি। ইতিমধ্যে রাজ্য থেকে অনুমোদনও এসেছে। তবে, হাসপাতালে কর্মীর সমস্যা রয়েছে।” তাঁর কথায়, “দ্বগ্ধ সব রোগীকেই যে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, এমনটা নয়। যাঁদের শারিরীক অবস্থা গুরুতর থাকে, তাঁদেরই স্থানান্তর করা হয়।”
চলতি বছরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ২৮ জন দ্বগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবাশিষ পাল বলেন, “অনেক সময় চেষ্টা করেও গুরুতর দ্বগ্ধ রোগীকে বাঁচানো যায় না। খড়্গপুরে বার্ন ইউনিট থাকলে ভাল হত। আগেও কয়েকবার রাজ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে, এখনও অনুমোদন মেলেনি। অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছিলেন, “বার্ন ইউনিট না- থাকলেও বিভিন্ন হাসপাতালে সার্জিক্যাল ওয়ার্ড রয়েছে। দ্বগ্ধ রোগীদের সাধারণত ওই ওয়ার্ডেই রাখা হয়। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে যেমন ৬টি শয্যা দ্বগ্ধ রোগীদের জন্য রাখা রয়েছে।” ওই আধিকারিকের কথায়, “সাধারণত ৩০ শতাংশের কম যাঁরা দ্বগ্ধ হন, মেদিনীপুর- ঝাড়গ্রামের মতো হাসপাতালে রেখে তাঁদের ভাল ভাবেই চিকিৎসা করা সম্ভব। হাসপাতালে এই পরিকাঠামো রয়েছে। ৩০ শতাংশের বেশি দ্বগ্ধ হলে রোগীদের কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। আর ৬০-৭০ শতাংশের বেশি যাঁরা দ্বগ্ধ হন, তাঁদের অনেক সময় চেষ্টা করেও বাঁচানো যায় না।” পশ্চিম মেদিনীপুর পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে পরিচিত। জেলার একটা বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে জঙ্গলমহল।
জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১১টি ব্লকই রয়েছে জঙ্গলমহল এলাকায়। সবথেকে বেশি চাপ থাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালের উপরই। কারণ, সামান্য জ্বর- কাশি হলেও অনেক গ্রাম থেকে শহরে এসে মেডিক্যালে ভর্তি হন। মেদিনীপুর মেডিক্যালে সবমিলিয়ে ১৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। ৫৬০ টি শয্যা রয়েছে। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০০- ৭৫০ জন। ১৭টি বহির্বিভাগ রয়েছে। দিনপিছু গড়ে রোগী আসেন ৫৩০ জন। জরুরি বিভাগে দিনপিছু গড়ে রোগী আসেন ২২০ জন। ক্ষমতায় এলে জঙ্গলমহল এলাকায় স্বাস্থ্যের হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে সেই প্রতিশ্রুতি পালনে তিনি পদক্ষেপও করেন।
ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামকে স্বাস্থ্য জেলা করা হয়েছে। মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চারটি ন্যায্যা মূল্যের ওষুধ দোকান চালু হয়েছে। বেশ কিছু স্বাস্থ্য কেন্দ্র-হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, দ্বগ্ধ রোগীদের ভাল ভাবে চিকিৎসার জন্য এখনও লালগড়ের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু হল না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য আশ্বাস, শুধু বার্ন ইউনিট নয়, মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) তৈরির অনুমোদনও এসেছে। মেদিনীপুরে অবশ্য এই ইউনিট আগে থেকে রয়েছে। এ বার শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আশ্বাস মতো কাজ হয় কি না, সেটাই দেখার।
|
অগ্নিদগ্ধদের ভোগান্তি |
• বার্ন ইউনিট না থাকায় দগ্ধ রোগীদের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে রাখতে হয়।
• গুরুতর দগ্ধ রোগীদের রেফার করতে হয় কলকাতার হাসপাতালে।
• মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে বার্ন ইউনিট গড়ার অনুমোদন মিললেও কর্মীর অভাবে তা চালু হয়নি।
• ইউনিট না থাকায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীদের বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। |
|