বিচার অধরা, বন্দিনীদের উপরে অত্যাচার ইরাকে
তাঁদের অপরাধ ঠিক কী, কোথায়ই বা তার বিচার হবে, আদৌ হবে কি না, জানা নেই। তবু ইরাকের কারাগারে বন্দি রয়েছেন হাজার হাজার মহিলা। দিন, মাস, বছর সময়ের হিসেব নেই আর। যা রয়েছে, তা শুধু অকথ্য নির্যাতনের কাহিনি। নিজেদের রিপোর্টে এমনই দাবি করেছে এক মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
কী রকম সেই নির্যাতন? ওই সংস্থার দাবি, কোনও কারণ ছাড়াই মহিলা বন্দিদের যথেচ্ছ কিল, চড়, লাথি মারা হচ্ছে। কখনও আবার উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে মারা হচ্ছে পায়ের তলায়। অসহ্য যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলেও রেহাই নেই। কারণ, অত্যাচারের নির্ঘণ্ট বলছে, তখন ইলেকট্রিক শক দেওয়ার পালা। এতেই শেষ নয়। জেরার সময় প্রায়শই যৌন নিগ্রহের ভয় দেখাচ্ছেন জেল কর্তৃপক্ষ ওরফে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা। কখনও আবার আত্মীয়, পরিজনদের সামনেই ধর্ষণ করা হচ্ছে এই মহিলা জেলবন্দিদের।
কিন্তু কেন এই অকথ্য অত্যাচার? উত্তরটা অবশ্য অস্পষ্ট। তবে সংস্থার দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মহিলা বন্দিদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। বরং ওই মহিলাদের পুরুষ আত্মীয়দের কৃতকর্ম সম্পর্কে জেরা করতেই তাঁদের বন্দি করা হচ্ছে। কিন্তু সে বন্দিত্ব থেকে মুক্তির পথ নেই। দিনের পর দিন চার্জ গঠন না করে, আদালতে মামলা না তুলে জেরার নামে মহিলাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী। সরকার দৃশ্যত নীরব।
তবে রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পর মুখ খুলেছে ইরাকের মানবাধিকার মন্ত্রক। মুখপাত্রের দাবি, রিপোর্টের বর্ণনা অনেকটাই অতিরঞ্জিত। কিন্তু পুরোপুরি বিষয়টিকে অস্বীকারও করেননি তিনি। বলেছেন, “মহিলা বন্দিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী যে বেআইনি ব্যবহার করছে, তা নিয়ে কিছু ঘটনা আমরাও জেনেছি।” ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মুখপাত্র। এবং মানবাধিকার মন্ত্রকের আশা, খুব শীঘ্রই অত্যাচার বন্ধ হবে।
তবে মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থাটির রিপোর্ট থেকে সে রকম কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তাঁদের হিসেব মতো, এ মুহূর্তে প্রায় চার হাজার দু’শো মহিলা বন্দি রয়েছেন ইরাকের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ জেলগুলিতে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে ইরাকের বাসিন্দাদের একাংশ প্রতিবাদ বিক্ষোভও জানিয়েছেন। কিন্তু আখেরে কিছু লাভ হল কি?
সরাসরি না হলেও এ প্রশ্নের পরোক্ষ উত্তর রয়েছে ওই সংস্থার রিপোর্টেই। তথ্য যোগাড় করতে বিভিন্ন জেলে মহিলা বন্দিদের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন সংস্থার কর্মীরা। বাগদাদের এক জেলে পৌঁছে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার যোগাড় হয় তাঁদের। এক মহিলা বন্দি বেরিয়ে এলেন ক্রাচে ভর দিয়ে। জানালেন, স্রেফ অত্যাচারের জেরেই তাঁর এই হাল। ভবিষ্যতে কখনওই ক্রাচের সাহায্য ছাড়া চলতে পারবেন না তিনি। এতেই শেষ নয়। সাত মাস বাদে সেই মহিলার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে নিরাপত্তাবাহিনী। নিম্ন আদালত যদিও মহিলাকে বেকসুর খারিজ করেছিল।
কিন্তু তাতে কী?
ইরাকে মহিলা বন্দিদের ভাগ্যনির্ধারক এখন বিচারবিভাগ বা প্রশাসন নয়। সে দায় নিরাপত্তাবাহিনীর। যাবতীয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এখন তাই উর্দির সামনে ফিকে হয়ে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.