সাক্ষাত্‌কার, ছবির সম্ভার
অপ্রকাশিত মহানায়িকা
বীন্দ্রনাথ সুচিত্রা সেনের প্রাণের ঠাকুর, তাঁর গান সুচিত্রার কাছে সঞ্জীবনী সুধা। অথচ সুচিত্রা কখনও রবীন্দ্র-কাহিনির নায়িকা হতে পারেননি। অভিনয়জীবনে শেষ বেলায় যদিও বা একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘চতুরঙ্গ’ ছবিতে, কিন্তু সে ছবি তো... প্রায় এমন ভাবেই লিখেছেন গোপালকৃষ্ণ রায় তাঁর সুচিত্রাকে নিয়ে অপ্রকাশিত সাক্ষাত্‌কারে। গোপালকৃষ্ণ সুচিত্রার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন, তাঁকে নিয়ে তাঁর বইও সুপরিচিত, কিন্তু এই অপ্রকাশিত কথোপকথনটি অনেক নতুন দিক খুলে দেয়। যেমন, আরও খেদ ছিল সুচিত্রার। ‘মা সারদার ভূমিকায় অভিনয় করার বড় ইচ্ছা ছিল। সম্ভবত মায়ের ইচ্ছা ছিল না, তাই হয়নি। হয়তো ঠাকুরেরও ইচ্ছা ছিল না।’ সুচিত্রার এই মন্তব্যের সূত্র ধরেই গোপালকৃষ্ণ লিখছেন ‘আমি জানি, মা সারদার ভূমিকায় অভিনয় করার জন্যে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।’ কিন্তু সুচিত্রা বলেন, ‘জানো, ইচ্ছাটা আমার পূরণ হয়নি।’
সুচিত্রাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন গোপালকৃষ্ণ ‘এখন যদি কেউ তোমাকে অফার দেয়?’ ‘সুচিত্রা সেন ঠোঁটের কোণে মিষ্টি করে মৃদু হাসলেন। একবার অপাঙ্গে আমাকে মেপে নিয়ে বললেন, প্রশ্নই ওঠে না। স্রোতের অনুকূলে ভাসতে ভাসতে আশিতে এসে ঠেকেছি। এখন সেই মহাপুরুষের চরণতলে পৌঁছুতে পারলে বাঁচি।’ অমিতাভ চৌধুরীও সুচিত্রার একান্ত একটি সাক্ষাত্‌কার নিয়েছিলেন। এ সবের সঙ্গে আরও অনেক কিছু নিয়ে বেরোচ্ছে সূত্রধর-এর মহানায়িকা (সংকলন সুশান্ত কুমার চট্টোপাধ্যায়)। সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রচারবিদ, পরিচালক, গীতিকার, সুরকার গায়িকা, অভিনেত্রী যাঁরা নানা ভাবে জড়িয়েছিলেন সুচিত্রার সঙ্গে, কিংবা কেবলই দূর থেকে দেখেছেন তাঁদের বয়ানে সুচিত্রার নানা দ্যুতি। পরিশিষ্টে রয়েছে বিশদ তথ্যপঞ্জি। সঙ্গে তাঁর অভিনীত ছবির পোস্টার, বিজ্ঞাপন, বুকলেট, লবি-ছবি, স্থিরচিত্র। সুচিত্রার নিজের ছবি, পত্রিকাপ্রচ্ছদ (সঙ্গে তারই দুটি, ‘সিনেমা জগত্‌’ ও ‘জলসা’ পত্রিকা থেকে।) ও রেকর্ডমলাটের ছবি। বইয়ের সঙ্গে একটি সিডি-তে থাকছে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিতে উত্তমের সঙ্গে সুচিত্রার সংলাপ ও তাঁর স্বকণ্ঠে গান। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে মহানায়িকা প্রকাশ করবেন ললিতা চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে এ বারের বইমেলায় সুচিত্রাকে নিয়ে এক প্রদর্শনী চলছে, সেখানে পোস্টার, লবি-কার্ড, বুকলেট, রেকর্ড, ফোটোগ্রাফ সবই সুচিত্রাকে ঘিরে, কিউরেটর জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য।

বাংলার ঐতিহ্য
বাংলার বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য হাজার দুই বছরের পুরনো। রোমান সাম্রাজ্যে যেমন চাহিদা ছিল বাংলার মসলিনের, তেমন সতেরো-আঠেরো শতকে বিশ্বের বহু জায়গায় বাংলার কাপড়ের বাণিজ্য ছিল বিপুল। শুধু এই শিল্প নিয়ে আলাদা ভাবে ইংরেজি বা বাংলায় বিশেষ কাজ হয়নি। তাঁতিদের অবস্থা ঠিক কেমন ছিল? চাহিদা সত্ত্বেও প্রযুক্তির উন্নতি হয়নি কেন? সত্যিই কি তাঁতিদের বুড়ো আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছিল? চার দশকের গবেষণায় এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন সুশীল চৌধুরী, তাঁর পৃথিবীর তাঁতঘর/ বাংলার বস্ত্রশিল্প ও বাণিজ্য (আনন্দ) বইয়ে।

ভ্রমণ-আখ্যান
‘‘তীর্থ-ভ্রমণ বঙ্গভাষার একখানি অপূর্ব্ব গ্রন্থ। এ প্রকার গ্রন্থ তত্‌পূর্ব্বে বঙ্গভাষায় আর লিখিত হইয়াছিল কিনা জানি না।” লিখেছিলেন নগেন্দ্রনাথ বসু, যদুনাথ সর্বাধিকারীর তীর্থ-ভ্রমণ (১৩২২ বঙ্গাব্দ) বইয়ের ভূমিকায়। যদুনাথের ভ্রমণকাল ১৮৫৩-’৫৭। রেলগাড়িতে নয়, পায়ে হেঁটে। সে কালে ভ্রমণ মানে মূলত তীর্থভ্রমণ, তার রোজনামচা বিশেষ কেউই লেখেননি। যদুনাথের বৃত্তান্ত তাই ইতিহাস ও সংস্কৃতি উভয়তই গুরুত্বপূর্ণ। বইটি নতুন করে প্রকাশ করল আশাদীপ। দীর্ঘ ‘প্রসঙ্গকথা’ লিখেছেন শেখর ভৌমিক, এবং পরিশিষ্টে চারটি সমকালীন আলোচনা বইটির গুরুত্ব বাড়িয়েছে।


হারানো বই
সালটা ১৮০৬। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের তুখোড় ছাত্র হেনরি সার্জেন্ট লাতিন থেকে স্বচ্ছন্দ বাংলায় অনুবাদ করে ফেললেন ভার্জিল-এর মহাকাব্য ইনিড-এর চারটি পর্ব। ১৮১০-এ শ্রীরামপুরের মিশন প্রেস থেকে ছাপাও হল প্রথম পর্বটি। তার পর সবই বিস্মৃতির অন্তরালে। কয়েক বছর আগে বইটির একটি কপির খোঁজ মিলল অক্সফোর্ডে। এ বার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হল বইটির প্রতিলিপি-সংস্করণ, সঙ্গে সটীক ত্রিভাষিক পাঠ (সার্জেন্টের অনুবাদ, লাতিন থেকে ইংরেজি অনুবাদ ও লাতিন মূল), আর অভিজিত্‌ গুপ্ত কৃত সার্জেন্টের পরিচিতি। এ দিকে ১৯৭২-এ রব্যের আঁতোয়ান ও হৃষীকেশ বসুর বাংলা অনুবাদে ভূমিকা ও টীকা-সহ সম্পূর্ণ ঈনীড প্রকাশ করেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দুষ্প্রাপ্য সেই বইটিও আবার প্রকাশিত হল সেখান থেকেই।

পুরানো কথা
“আপনি... আপনার জানার জিনিষকে আপনার প্রাণের জিনিষ করে তুলেছেন। এই জন্যে তার থেকে আমরা কেবল খবর পাইনে খাবার পাই একটা ভোজের নিমন্ত্রণ জুটে যায়।” চারুচন্দ্র দত্তকে (১৮৭৬-১৯৫২) চিঠিতে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। চারুচন্দ্র আজ বিস্মৃত ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তাঁর স্মৃতিচারণ পুরানো কথা বাংলা সাহিত্যে খুবই উল্লেখযোগ্য সংযোজন। আই সি এস হয়েও স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যোগ, বিচিত্র জীবন-অভিজ্ঞতা, অরবিন্দ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অনালোকিত অধ্যায় এ বইয়ে উঠে এসেছে। সুপ্রিয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত বইটি (তিন খণ্ড একত্রে) প্রকাশ করেছে সাগ্নিক বুকস।

মাদিবা
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে রাখালের কাজে হাত লাগিয়েছিল রোলিহ্‌লালা। ঘাসে ঢাকা মাঠ বা ‘ভেল্ড’ই ছিল তার জীবনের প্রথম পাঠশালা। কেমন করে গুলতি চালিয়ে উড়ন্ত পাখিকে নামাতে হবে, মৌচাক ভাঙতে হবে, সব কিছু শিখেছিল মাঠে গরু-ছাগল দেখাশোনার ফাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকার এমভাজো গ্রামের সেই ছেলেই পরে রোলিহ্‌লালা মাদিবা ম্যান্ডেলা, বা নেলসন ম্যান্ডেলা নামে বিশ্বখ্যাত। জেলের অন্তরালে থেকেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি। তাঁর জীবনের জানা-অজানা কাহিনিকে দুই মলাটে এনে প্রকাশিত হল চিত্রসমৃদ্ধ মাদিবা/ রোলিহ্‌লালা নেলসন ম্যান্ডেলা (পক্ষীরাজ)।

ব্যতিক্রমী
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি অ্যাকাডেমিক পত্রিকার গৌরব অনেক দিনই অস্তমিত। তবু জ্ঞান চর্চার আঙিনায় বিচিত্র কোলাহলের মধ্যে একটি-দুটি প্রতিষ্ঠান নীরবে কাজ করে চলেছে। সে রকম একটি নমুনা হাতে এল: সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (চেয়ারপার্সন: কৃষ্ণা বসু) প্রকাশিত প্রত্নতত্ত্ব-বিষয়ক বার্ষিকপত্র ‘প্রত্নসমীক্ষা’ (সম্পা: শর্মি চক্রবর্তী)। ‘গৌড়’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যার পর ২০১৩-র সংখ্যাও বিষয়বৈচিত্রে সমৃদ্ধ। প্রত্নানুসন্ধান, উত্‌খনন, লিপি, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, ধাতুবিদ্যা সব মিলিয়ে রীতিমতো গবেষকভোগ্য। নবীনদের অনুসন্ধিত্‌সা লক্ষণীয়, যা এই প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যও বটে। পত্রিকার প্রকাশনা-মান আন্তর্জাতিক। বইমেলায় পশ্চিমবঙ্গ মণ্ডপে রয়েছে সেন্টারের ইংরেজি ও বাংলা নানা মূল্যবান প্রকাশনা।

তিন অভিনেত্রী
সে কালে নাট্যাভিনয়ে দর্শকের অভাব ছিল না, কিন্তু দুর্লভ ছিল ‘অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের শিল্পসাধনার প্রতি শিক্ষিতসমাজের সম্মান জ্ঞাপন।’ লিখেছেন শিবনারায়ণ রায়, তাঁর পিতা উপেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের তিনকড়ি বিনোদিনী ও তারাসুন্দরী বইয়ের ভূমিকায়। প্রায় একশো বছর আগে সমসময়ের তিন প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর তথ্যনির্ভর জীবনালেখ্য রচনা করছেন এক প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক, এ ঘটনার তাত্‌পর্য বড় কম নয়। বইটির নতুন সংস্করণ প্রকাশ করল অক্ষর প্রকাশনী, সংযোজিত হয়েছে তিন অভিনেত্রী সম্পর্কে বহু অতিরিক্ত তথ্য, অভিনয়পঞ্জি।


উইকিপিডিয়া
জ্ঞান বয়ে চলে পরম্পরায় এমন বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম তথ্য পোর্টাল ‘উইকিপিডিয়া’। কী ভাবে তারা কাজ করছে তা নিয়েই বইমেলাতে এই প্রথম বার সরাসরি হাজির উইকিমিডিয়ার ভারতীয় শাখা, বা বলা ভাল বাংলা বিভাগ। তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে ওদের উইকইভিধান, উইকিসংকলন, এবং উইকিবই। পরিচালক রঙ্গন দত্ত জানালেন, ভাল সাড়া মিলছে। প্রকাশ পেয়েছে বিস্তারিত বিবরণ-সহ একটি পুস্তিকা।

নতুন দিগন্ত
ব্রহ্মদেশ (মায়ানমার) আর বাংলার সম্পর্ক সুপ্রাচীন। পালযুগে শিল্প-স্থাপত্য ধারার বিনিময়, ১৬-১৭ শতকে আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের পুষ্টি। ১৯২০-তে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির আগে পর্যন্ত সে দেশের সব কলেজ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই। উনিশ-বিশ শতকে বহু বাঙালি নানা কারণে ব্রহ্মদেশে গেছেন। দু’দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে উদ্যোগী ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, ইন্ডিয়া। ৮-৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগারে আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র, ৮-১৫ প্রদর্শনী, উদ্বোধনে অঞ্জন দত্ত ও ছন্দা দত্ত। ব্রহ্মরাজ থিবো-র অলঙ্কার, আই এন এ-র নথি, বর্মি রামায়ণ-এর ছবি (সঙ্গে তারই একটি) এমন বহু দুর্লভ সম্ভার থাকছে। প্রকাশিত হবে অরিন্দম মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত একটি মনোগ্রাফ, ১৮৪৬-এ প্রকাশিত কোলসওয়ার্দি গ্রান্ট-এর চিত্রসমৃদ্ধ ‘আ ট্রিপ টু রেঙ্গুন’, শচীন্দ্রনাথ গুহ, উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, র্যাচেল ম্যাকবিন, দুলাল ভৌমিক ও অণিমা রায়ের অপ্রকাশিত স্মৃতিকথা, বিশিষ্ট জনের প্রবন্ধ ইত্যাদি নিয়ে।

ফেলুদা সংখ্যা
ফেলুদা এ বারের শীতে পর্দায় না এলেও বইমেলায় থাকছে। এখন সত্যজিত্‌-এর (সম্পা: সোমনাথ রায়) গোটা সংখ্যাটাই ফেলুদা’কে নিয়ে। বইয়ের প্রচ্ছদ, ফিল্মের পোস্টার-বুকলেট, ধাঁধা, ক্যুইজ, টুকরো গল্প-স্মৃতি এবং সন্দীপ রায়ের সাক্ষাত্‌কার। সঙ্গে ‘গোরস্থানে সাবধান’ আর ‘সোনার কেল্লা’র চিত্রনাট্য। অন্য দিকে রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর সোনার কেল্লার সন্ধানে সম্পর্কে ভূমিকায় সত্যজিত্‌ লিখেছিলেন ‘একটি ছবির সুটিংকে কেন্দ্র করে একাধারে ভ্রমণকাহিনী ও সরস ঘটনার বিবরণ পুস্তকাকারে বাংলা ভাষায় বোধ হয় এই প্রথম লেখা হল।’ নতুন দীপ সংস্করণে আরও চারটি রচনা। সঙ্গে শুটিংয়ের দুর্লভ ছবি।

স্মৃতির ঝাঁপি
কৃষ্ণা বসু যখন যা লেখেন, পড়ে মনে হয়, লেখাটা নিজেই নিজেকে লিখেছে। নির্ভার, সকৌতুক, সংযত, পরিপাটি গদ্য লেখার সেই গুণটি তাঁর জীবনের প্রথম পর্বের কাহিনি হারানো ঠিকানা-তেও (আনন্দ) অমলিন। কলকাতার সুশিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে ওঠার বিবরণে স্বভাবতই মিশে আছে সমাজ-রাজনীতির ইতিহাস, বহু বিশিষ্ট মানুষের ছোট ছোট উজ্জ্বল সব ছবি। তাঁর কাছে পাঠকের দাবি: স্মৃতির ঝাঁপি থেকে আরও লেখা চাই।

রোগ মোকাবিলায়
অসুখ নিয়ে সচেতনতা গড়াই ওদের লক্ষ্য। একটি বইয়ের বিষয় স্ট্রোক-পরবর্তী রিহ্যাব। স্ট্রোকের ফলে তৈরি হওয়া পঙ্গুত্ব মানুষকে জীবনের মূলস্রোত থেকে অনেকটাই সরিয়ে দেয়। পঙ্গুত্বকে জয় করার হাতিয়ার আধুনিক রিহ্যাব। সে সম্বন্ধে স্ট্রোকের আগে ও পরে (দীপ) বইটিতে আলোচনা করেছেন ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাব বিশেষজ্ঞ ডা. মৌলীমাধব ঘটক। অন্য দিকে দ্য ক্রিটিকাল ক্যানসার ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক দীর্ঘ দিন চিকিত্‌সার পাশাপাশি কাজ করে চলেছে ক্যানসার আক্রান্ত মানুষ ও তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসন নিয়ে। ক্যানসারের চিকিত্‌সা ও কী ভাবে সেই সব পরিবার মূলস্রোতে ফিরবে, তা নিয়েই বইমেলায় আজ সন্ধেয় প্রকাশিত হবে ডা. অসীম চট্টোপাধ্যায়ের বই আ টোটাল স্ট্রাগল এগেনস্ট ক্যানসার (মুক্তমন)।

খেয়ালখুশি
সত্তর-আশি বছর আগে ছোটদের পত্রিকায় প্রায়শই চোখে পড়ত ননীগোপাল চক্রবর্তীর (১৯০৫-১৯৯০) নাম। কলমে তাঁর অপার বৈচিত্র: কবিতা, অ্যাডভেঞ্চার কি বিজ্ঞানের গল্প, অনুবাদ। ১৯৩৮-এ প্রথম বই শিকারী শশী ও লাঠিয়াল রামতনু, তার পর পাল্কীবুড়ো, চরকাবুড়ি, ফুরুত্‌-গুড়গুড়ি-র মতো গোটা পঞ্চাশ বই। তাঁর অনেক বই-ই এখন দুর্লভ। এ বার প্রকাশিত হচ্ছে রঙিন ছবিতে ঠাসা তাঁর ছড়া-কবিতার বই খেয়ালখুশি (এম সি সরকার)।


অধিকারের কথা
অধিকার আন্দোলনের দীর্ঘ দিনের কর্মী তিনি। বন্ধ ও রুগ্‌ণ কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে করতে তিনি ও তাঁর সহমর্মী আরও কয়েক জন তৈরি করেছেন ‘নাগরিক মঞ্চ’। মঞ্চের অন্যতম কর্ণধার নব দত্তের দীর্ঘ ২৫ বছরের সে কাজের পরিধি প্রসারিত হয়েছে আরও নানা অধিকার আন্দোলনের আঙিনায়। তারই নমুনা মিলল নাগরিক মঞ্চ থেকে প্রকাশিত তাঁর মানুষের অধিকার/ চলমান সংগ্রাম গ্রন্থে। শ্রমিক, পরিবেশ, খাদ্য, তথ্য, নারী ও শিশু, আদিবাসী ও বনবাসীদের জন্য বিভিন্ন আইন ও অধিকার থেকে শুরু করে নানা বিষয়ের আইন ও অধিকার নিয়ে একশোটি নিবন্ধের সংকলন এটি।

আত্মকথা
বাংলা আত্মকথার ধারাটি বিস্তৃত সেই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মচরিত থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অর্ধেক জীবন হয়ে। স্রষ্টার অভিজ্ঞতা, পরিবারের কথা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সমাজ-প্রেক্ষিত ইত্যাদির মধ্যে ফেলে আসা অতীত যেন বাস্তব হয়ে ওঠে। এই নিয়েই আলোচনা ‘কোরক’-এর (সম্পা: তাপস ভৌমিক) ‘বাংলা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা সংখ্যা’-য়। সম্পাদকের নিবেদন-এ যথার্থ মন্তব্য, ‘স্মৃতিকথা, জীবনকথা তো এক অর্থে বহমান সময়ের জীবন্ত নথি, যুগান্তরের চিহ্ন।’

গণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষায় গণবিজ্ঞান চর্চা প্রসঙ্গে যে মানুষটির নাম আসবেই, তিনি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উত্‌স মানুষ’ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে তাকে লালন করেছিলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি, স্টেট ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে ব্যালিস্টিক এক্সপার্ট ছিলেন আমৃত্যু। এ বার প্রকাশিত হল লেখালিখি (উত্‌স মানুষ সংকলন) বইটি, উত্‌স মানুষ ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধ, আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের লিখিত রূপ সহ।

অনুবাদে ঝুম্পা
আদতে লেখকের কোনও দেশ নেই, ভাষা নেই। বলছিলেন ঝুম্পা লাহিড়ি। সম্প্রতি প্রকাশিত হল তাঁর দ্য লোল্যান্ড-এর বাংলা অনুবাদ, নাবাল জমি (অনু: পৌলোমী সেনগুপ্ত, আনন্দ)। বাবা-মার সঙ্গে উপস্থিত লেখিকার হাতে বই তুলে দিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ঝুম্পার লেখায় এ শহর আসে এক চরিত্রের মতো। প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলাপচারিতায় শহর নিয়ে সেই নস্টালজিয়াতেই পাওয়া গেল তাঁকে।

বাংলা বই
হালেদের ব্যাকরণ থেকে হাল আমলের অফসেট বাংলা মুদ্রণের ইতিহাস এ বার বইমেলাতেই। পি সি চন্দ্র বুক মিউজিয়ামে একটি প্রদর্শনীতে। সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে দুষ্প্রাপ্য বই। প্রকাশিত হল একটি পুস্তিকাও, বাংলা বইয়ের গোড়ার কথা, পুরনো প্রচ্ছদ, টাইপের ছবি-সহ। এ দিকে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের মুখপত্র বইমেলা-র বিশেষ সংখ্যায় নারায়ণ দেবনাথের সাক্ষাত্‌কার। ‘কিঞ্জল’ পত্রিকা প্রকাশ করেছে নারায়ণ দেবনাথকে নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা।

সাহিত্যের ইয়ারবুক
এ বার বারো বছর হল সাহিত্যের ইয়ারবুক-এর, ২০১৪-র সংকলনটির নিবেদন-এ জাহিরুল হাসান জানিয়েছেন ‘এ হল সাহিত্যের সামাজিক সম্পত্তি।’ এ বারও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের শিল্পী-সাহিত্যিক-পত্রিকা-প্রকাশকের ঠিকুজি কুলুজি ইত্যাদি জরুরি তথ্যে সজ্জিত আবিশ্ব বাংলা সাহিত্যের এই বার্ষিক বিবরণী। জাহিরুলের আর-একটি উদ্যোগ বহুমুখী সাহিত্যকোষ-এ দুই বাংলার প্রয়াত লেখকদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসপঞ্জি, বানান, পরিভাষা, উদ্ধৃতি, প্রবাদ ইত্যাদি। জাহিরুলের অপর পরিশ্রমী উদ্যোগ মুসলমানকোষ। শব্দ-পরিসংখ্যান-ইতিহাস-নির্ঘন্ট ইত্যাদির সমাহারে রীতিমতো প্রয়োজনীয় এ-সংকলন। প্রকাশক পূর্বা।

পরিচয়
মা-বাবা দু’জনেই সাহিত্য ভালবাসতেন, তারই অসচেতন প্রভাব পড়েছিল তাঁর অল্প বয়সের মনে। নিজের লেখালেখির উত্‌স সন্ধানে এমন স্বীকারোক্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর লিখতে চাওয়ার আর একটা অমোঘ কারণ রবীন্দ্রনাথ। লিখেছেন ‘আমার আশ্চর্য লাগে ভাবতে যে, একজন মানুষ যাঁকে আমি দেখিনি যাঁর কাছে আসিনি, যাঁর অস্তিত্ব আমার কাছে নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস আশ্রিত মাত্র... আমার কাছে এতটা জ্যান্ত থাকেন যে, চরম সংকটের মুহূর্তেও তাঁর কথা ভেবে বেঁচে থাকতে উত্‌সাহ পাই।’ সদ্য আশিতে পা-দেওয়ার মাসখানেক আগেই বেরিয়েছে সৌমিত্রর পরিচয় (প্রকাশ ভবন), এতে ওই লেখাটি-সহ ঠাঁই পেয়েছে আরও অনেক লেখা, যার মধ্যে রয়েছে তাঁর আত্মজীবনের নানা উপাদান, যা থেকে তাঁর বেড়ে-ওঠার প্রচ্ছন্ন ইতিহাসের চিহ্নগুলি চেনা যায়, ঠাহর করা যায় তাঁর প্রতিভার বহুমুখী স্ফুরণও। একজন অভিনেতা যেন শৈশব থেকে এ-পর্যন্ত নিজের প্রবণতা, প্রস্তুতি, আর পরিণতির কথা লিখে গিয়েছেন অনর্গল। অন্য দিকে তাঁর জন্মদিনে বেরল দু’টি ক্ষীণতনু প্রকাশনা। একটি মুখোমুখি-র বিশেষ নিবেদন, পৌলমী চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জন মিত্র সম্পাদিত। তাতে তাঁকে নিয়ে সত্যজিত্‌ রায়, শঙ্খ ঘোষ থেকে বয়ঃসন্ধির অভিনেতা ঋদ্ধি সেনেরও লেখা। সঙ্গে তথ্যপঞ্জি। অন্যটি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে ‘আর্ট অলিন্দ’র হে সায়ংকাল, তাতে নানা ছবি সৌমিত্রর নিজের, তাঁকে নিয়ে আঁকা, এবং তাঁর অভিনীত বিভিন্ন ছবির।
 
কবি ও শিল্পী
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত যদি স্পেনে জন্মাতেন, গোটা পৃথিবী তাঁকে আর-একজন বুনুয়েল বলেই চিনত। এক সাক্ষাত্‌কারে বলেছেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। আর বুদ্ধদেবের পছন্দের পরিচালক দুজন: বুনুয়েল ও তারকোভস্কি। তাঁর প্রথম ছবি ‘দূরত্ব’ (’৭৮) সম্পর্কে সত্যজিত্‌ বলেছিলেন ‘আ পোয়েটিক অ্যান্ড সেনসিটিভ ফিল্ম অন কনটেম্পোরারি ক্যালকাটা’। ওই সময়ে তাঁর প্রথম পর্বের ছবি নিয়ে, ‘নিম অন্নপূর্ণা’ তার অন্যতম, মুগ্ধতায় সরব হন ডেরেক ম্যালকম কি ডেভিড রবিনসন-এর মতো ফিল্মপ্রাজ্ঞ। তাঁর আজ অবধি প্রায় সব ছবিই, এবং তিনি নিজেও দেশে-বিদেশে সমান ভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত। যদিও কবিতা গোড়া থেকেই তাঁর চলচ্চিত্রযাত্রার নিত্যসঙ্গী, কিন্তু ‘ফেরা’ থেকে যেন তাঁর ছবির সঙ্গে কবিতার অচ্ছেদ্য গ্রন্থি। কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ গভীর এরিয়েল-এ (’৬৩), সাম্প্রতিকটি গুটগুটিয়ে চলেছে নীলপোকা (সপ্তর্ষি, ২০১০)। ‘আমার কবিতাতেও কিন্তু এসেছে স্বপ্ন, ম্যাজিক, এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটির ব্যাপারগুলো। বারবার। ছবিতেও বারবার আসে।’ বুদ্ধদেবের এই উক্তির সঙ্গে মেলানো যায় ফরাসি পরিচালক আল্যাঁ মাজার্স-এর মন্তব্য ‘বড় মাপের যে সব শিল্পী ও কবি এখনও কাজ করে চলেছেন সিনেমায়, বুদ্ধদেব তাঁদের অন্যতম।’ তাঁকে ঘিরে নানা জনের রচনা নিয়ে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ প্রকাশ করছে দ্য পোয়েট অব সেলুলয়েড, এই শিরোনামেই তাঁরা উদ্যাপন করছেন বুদ্ধদেবের (জ. ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪) সত্তর বছর পূর্তির জন্মদিন, সহযোগী আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব। ১১-১৩ ফেব্রুয়ারি গোর্কিসদনে দেখানো হবে তাঁর নতুন ছবি ‘আনোয়ার কা আজব কিস্সা’, ঠিক আগের ছবি ‘জানালা’, আর ‘আমি, ইয়াসিন ও আমার মধুবালা’। শুরুর দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাঁর সংবর্ধনা।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.