মানুষের মন জয় করে রবিবার শেষ হল প্রথম নদিয়া মহোৎসব। আর এপারের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পীদের পাশাপাশি আলাদা করে দাগ রেখে গেলেন ওপার বাংলার লালনগীতির শিল্পীরা। কাঁটা তারের বেড়ার বাধা মিশে গেল দুই বাংলা।
গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত নদিয়া মহোৎসবে এসেছিলেন বাংলাদেশের ছেঁউরিয়া আখড়ার লালনগীতির শিল্পীরা। তাঁদের গান যেমন কৃষ্ণনগরের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায় তেমনই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন ওপার বাংলার শিল্পীরাও। এই শিল্পীদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন এপার বাংলার জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড দল ‘মরুদ্যান’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’।
প্রথম দিন শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সচেতনার উপর নাটক ‘চাঁদের পাহাড়’, দার্জিলি-এর ‘স্নো লায়ন ড্যান্স’ আনন্দ দিয়েছে শিশুদের। তবে সব কিছুকে ম্লান করে দিয়ে শহরের মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়ে গেলেন ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হরিহরণ। শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে তার গান হৃদয় ছুঁয়ে যায় সকলের। দ্বিতীয় দিনে ফকিরি গান, কবিগান, কীর্তন লালনগীতি পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্যের পাশাপাশি কাশ্মীরের শিল্পীদলের লোকনৃত্য হয়ে উঠেছিল এই মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। তবে সন্ধের পর মঞ্চে বাংলা ব্যান্ড ‘মরুদ্যান’ উঠতেই যেন মেলার পরিবেশটাই পাল্টে যায়। আর সেই ধারা বজায় রেখে রাতে মঞ্চে ওঠেন বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। |
লালনগীতিতে দর্শকদের মাতালেন বাংলাদেশের ছেঁউরিয়া আখরার সদস্যরা
(বাঁ দিকে)। দর্শকদের মাতিয়েছিল বাংলা ব্যান্ড ‘মরুদ্যান’ও। —নিজস্ব চিত্র। |
তার সুরের তালে যেন নেচে ওঠে গোটা মাঠ। ধরমপুরের বোলান গান, সাঁওতালি নৃত্য চণ্ডালিকা, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের উপর নৃত্য আলেখ্য, মৃদংগম লহরা, বর্ধমানের রণপা নৃত্য, মূকাভিনয় দেখতে দুপুর থেকেই মাঠে ভিড় জমতে থাকে।
রাতে অপেক্ষার অবসান করে মঞ্চে ওঠে বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু। তালে তালে নেচে ওঠে সকলে। তবে সব কিছুকে যেন ছাপিয়ে যায় গোটা ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শান। তাঁর একটার পর একটা জনপ্রিয় গান মাতিয়ে দিতে থাকে কৃষ্ণনাগরিকদের।
মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠনের পাশাপাশি অন্যতম প্রধান আকর্ষন ছিল নদিয়ার হস্তশিল্প, ঘূর্ণীর মাটির পুতুল ও বুলান শিল্প, শান্তিপুর-ফুলিয়ার বয়ন শিল্প, কাঁসা-পিতল শিল্পের প্রদর্শনী ও বিপনণ কেন্দ্র। এছাড়াও বাঁকুড়ার ডোকরা ও মাটির পুতুল, বর্ধমানের শোলার কাজ, মুর্শিদাবাদের সিল্কের শাড়ি,বীরভূমের নকশিকাঁথা, কোচবিহারের শীতলপাটি, পূর্ব মেদিনীপুরের মাদুর ও গয়নাবড়ি মেলার বিশেষ আকর্ষণ।
মেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা শাসক পি বি সালিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী উৎসাহেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী বছর যাতে এই উৎসব আরও সুন্দর ভাবে করা যায় তার চেষ্টা করা হবে।” শুক্রবার এই মেলার উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তথ্য প্রযুক্তি ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর প্রথম বছরের এই নদিয়া মহোৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছিল কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালা রায় এর নামে। ফের এক বছরের অপেক্ষা কৃষ্ণনগরবাসীর। |