২০ লক্ষ টাকা জরিমানা
গুড়াপের নার্সিংহোমে
চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই প্রসবের সময়ে মারা গিয়েছিলেন এক বধূ। সাত বছর আগের ওই মামলার রায় দিয়ে শুক্রবার হুগলির ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল গুড়াপের একটি নার্সিং হোম এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ক্ষতিপূরণের মোট অঙ্কের মধ্যে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের কল্যাণ তহবিলে জমা পড়বে।
অভিযোগকারী তপন কুমার কোলের বাড়ি গুড়াপের খরুয়া গ্রামে। ২০০৬ সালের ২৬ মার্চ গর্ভবতী স্ত্রী মীনাক্ষী দেবীকে গুড়াপ স্টেশন রোডের দিব্যালোক নার্সিংহোমে ভর্তি করান তিনি। প্রসবের পর মারা যান মীনাক্ষী দেবী। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন তপনবাবু। ২০০৬ সালের ওই ঘটনায় শুক্রবার আদালত রায় দিল, মৃতার পরিবারের মানসিক যন্ত্রণা, হয়রানি, উদ্বেগ এবং আর্থিক ক্ষতির জন্য চিকিৎসক প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়কে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মৃতার স্বামীকে। একই কারণে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমকে দিতে হবে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। এ ছাড়াও মামলা চালানোর খরচ হিসেবে ওই নার্সিংহোম এবং চিকিৎসককে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ ব্যবসা চালানোর শাস্তি হিসাবে আরও সাড়ে চার লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মোট ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পাবেন অভিযোগকারী। সেই সঙ্গে এক মাসের মধ্যেই সমস্ত টাকা মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ৯ শতাংশ হারে সুদ ধার্য করা হবে।
কী চিকিৎসা বিভ্রাট ঘটেছিল? তপনবাবুর দাবি, চিকিৎসক প্রণববাবুরর পরামর্শেই তিনি স্ত্রীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যান। অভিযোগ, নার্সিংহোমের উপরেই প্রণববাবু থাকলেও রোগিণীকে দেখতে আসেন প্রায় এক ঘণ্টা পরে। পরে তিনি জানান, মহিলার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। স্বাভাবিক প্রসব হবে। বিপদের আশঙ্কা নেই। সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ শয্যাতেই পুত্রসন্তান প্রসব করেন মীনাক্ষী দেবী। অভিযোগ, তখনও তাঁর কাছে কোনও চিকিৎসক বা নার্স ছিলেন না। বারবার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানালেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেননি। রক্তক্ষরণে নেতিয়ে পড়ছিলেন প্রসূতি। তপনবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওই অবস্থাতেই স্ত্রীকে হাঁটিয়ে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্ট্রেচার ছিল না। অপারেশন থিয়েটারেও নোংরা টেবিলে চিকিৎসা চলছিল। এরই মধ্যে অবস্থা খারাপ হয় সদ্যোজাতেরও। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল ও কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সে সুস্থ হয়।”
তপনবাবু জানান, অপারেশন থিয়েটার থেকে বার করার পরে স্ত্রী-র অবস্থা আরও খারাপ হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অন্যত্র স্থানান্তর করতে বলেন তাঁকে। স্ত্রীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এর পরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানান তপনবাবু। অভিযোগ খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য দফতর নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থাও নিয়েছিল। স্ত্রী-র মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে আইনি চিঠি পাঠান তপনবাবু। কিন্তু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেননি। ওই বছরের অগস্ট মাসে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন তপনবাবু। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এবং নথিপত্র দেখে আদালত জানিয়ে দেয়, ঘটনায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। আদালত এ-ও মনে করে ওই প্রসূতির মৃত্যুতে শুধু পরিবারের ক্ষতি হয়েছে তা-ই নয়, নার্সিংহোমের অপ্রতুল পরিকাঠামো এবং পরিষেবার গাফিলতির মাসুল দিতে হয়েছে প্রসূতির সদ্যোজাত শিশুটিকেও। এ দিন রায় শোনার পরে তপনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আদালতের ভূমিকাকে স্বাগত জানাই। অনেকেই চিকিৎসার গাফিলতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু অভিযোগ জানাতে সাহস করেন না। এই রায় তাঁদের পথ দেখাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.