কিছু দিন আগেও যে সব এলাকা মাওবাদীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল, সেখানকার বাসিন্দারাই এ বার পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মান এনে দিলেন। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কৃতিত্বের জন্য দেশের সেরা ৯ জেলার মধ্যে স্থান পেল বাঁকুড়া। খাতড়া মহকুমায় ১৩৮টি আম বাগান তৈরি করে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের পুরস্কার জিতল এই জেলা। আজ, রবিবার, দিল্লির বিজ্ঞানভবনে বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতীর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তারা। জেলার প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছেন শান্তি শবর, সরস্বতী হেমব্রমও। রানিবাঁধ ব্লকের লিপিগিরি গ্রাম পঞ্চায়েতের এই দুই শবর মহিলা সভায় জানাবেন, আমবাগান কেমন করে তাঁদের জীবন বদলে দিয়েছে।
একশো দিনের কাজের নিরিখে দেশের সেরা ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিকাতেও রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বাঁকুড়ারই কোতুলপুর ব্লকের লেগো গ্রাম পঞ্চায়েত এই পুরস্কার পাচ্ছে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বিশেষ সাফল্যের জন্য প্রতি বছরই কেন্দ্রীয় সরকার পুরস্কার দেয়। এ বছর বাঁকুড়া এবং বর্ধমান, এই দুটি জেলা প্রাথমিক তালিকায় ছিল। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল দুটি জেলা পরিদর্শন করে জানিয়ে দেয়, বাঁকুড়াই জিতল।
দিল্লিতে নিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর খুলবে জানান, বাঁকুড়ার রাণীবাঁধ, রায়পুর, সিমলাপাল ও সারেঙ্গা ব্লকগুলি এতদিন মাওবাদী অধ্যুষিত ছিল। ২০০৯-১০ সালে যেখানে মাত্র ১২.৫১ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল, সেখানে ২০১২-১৩ সালে ২১.৮২ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। মহিলাদের কাজে যোগ দেওয়ার হার ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে।
তবে বাঁকুড়া নজর কেড়েছে আরও একটি কারণে। নানা সরকারি প্রকল্প, এবং একাধিক দফতরের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার নিদর্শন তৈরি করেছে এই জেলা। রাজ্যের এনআরইজিএস কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার জানালেন, জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন এবং একশো দিনের প্রকল্প, এই দুটি সরকারি প্রকল্পের সমন্বয় করে গ্রামের মানুষের রোজগার বাড়াচ্ছে এই জেলা। বাঁকুড়ার এই এলাকায় স্বাভাবিক নিয়মে কৃষিকাজ হওয়া দুষ্কর। বিকল্প চাষের সন্ধান করতে গিয়ে জেলা প্রশাসন আমবাগান তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। গাছের চারা বিতরণ থেকে শুরু করে বাগান পরিচর্যা, পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উদ্যানপালন দফতরও। এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সঙ্গে নিয়ে, জীবিকা মিশন, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প এবং একশো দিনের প্রকল্পকে কাজে ৩৫০ হেক্টর অনুর্বর জমি লিজ নিয়ে ১৩৮টি আমবাগান তৈরি হয়েছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের হিসেব, এর ফলে আট বছর পর থেকে ওই এলাকার পরিবার পিছু বছরে ১.৬ লক্ষ টাকা আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের সুসুনিয়া পাহাড়ে ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্পটিও তৈরি হয়েছে ১০০ দিনের প্রকল্পে। এতেও যুক্ত করা হয়েছে জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন, এবং সেই সঙ্গে পর্যটন দফতরকে। ‘সহভাগী পরিকল্পনা’-র এটি একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন, মনে করেছে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল। দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘যেভাবে বিভিন্ন দফতরকে সঙ্গে নিয়ে এই জেলায় প্রকল্পটি রূপায়িত হয়েছে তার প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।’’
|
গ্রেফতার প্রধান
নিজস্ব সংবাদদাতা • ইন্দাস |
এক তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগে সিপিএমের এক পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার সকালে বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার শাসপুরের ঘটনা। শাসপুরের পঞ্চায়েত প্রধান দিলীপ রায় এবং তাঁর ছেলে শ্রীধর রায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় তৃণমূল নেতা চণ্ডী ঘোষাল অভিযোগ দায়ের করেন। সিপিএমের দাবি, ওই দু’জনকে তৃণমূল নেতাই মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিছেন। |