দিল্লিতেও পরিবর্তন চাই, ব্রিগেড থেকে ডাক মমতার
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে সরাসরি ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য তাঁর স্লোগান দিল্লিতেও পরিবর্তন চাই। যে স্লোগানে ভর করেই পৌনে তিন বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তাঁর সরকার। যে স্লোগানকে সামনে রেখেই কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নিয়ে টানাপোড়েনের ধাক্কায় তৃণমূলের বাৎসরিক ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ গত বছর শেষ পর্যন্ত হয়নি। তার বদলে লোকসভা ভোটের আগে এ বার ব্রিগেডকেই সমাবেশের জন্য বেছে নিয়েছিলেন মমতা। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বৃহস্পতিবার ব্রিগেডের জমায়েত হয়েছে ‘ঐতিহাসিক’। যুব কংগ্রেসে থাকাকালীন ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্রিগেডের যে সভা থেকে মমতা তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজিয়েছিলেন, ভিড়ের বহরে এ দিনের সমাবেশ তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, “আমাদের রেকর্ড আমরাই ভাঙি! আবার রেকর্ড গড়ি! ২৫ নভেম্বরের রেকর্ড আমরা আজ ভেঙে দিলাম। দিল্লিতে জয়ী হলে আবার ব্রিগেড করে এই রেকর্ডও ভেঙে দেব!” |
ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক। |
দিল্লিতে পরিবর্তন আনার জন্য আপাতত মমতার লক্ষ্য রাজ্যে যত বেশি সম্ভব লোকসভা আসন জেতা। যার জন্য এ দিনের সমাবেশ থেকে রাজ্যের ৪২টি আসনেই তৃণমূলকে জেতানোর আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “আমাদের খাটো করে দেখা বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, কোনওটারই জায়গা নেই। আমাদের লড়াই কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে। লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যত বেশি লোকসভা আসনে আমাজদের জেতাবেন, দিল্লিতে বাংলার গুরুত্ব তত বাড়বে।” রাজতন্ত্র বলে এক দিকে যেমন কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, তেমনই নাম না-করে বিঁধেছেন নরেন্দ্র মোদীকেও। বলেছেন, “দাঙ্গার মুখ চাই না! দাঙ্গার সরকার চাই না!”
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের অবশ্য বাখ্যা, তৃণমূল নেত্রী এ দিন কৌশলে যা বলেছেন, সবই নীতিগত ভাবে। পরিবর্তন বলতে বোঝাতে চেয়েছেন নীতির পরিবর্তনের কথা। দিল্লি চলো বলতে তিনি বোঝাতে চাইছেন, কেন্দ্রে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ক্ষমতা হাতে রাখতে। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য যত বেশি সম্ভব আসন তৃণমূলের ঝুলিতে থাকতে হবে। এবং সেই জন্যই যা যা করলে বেশি আসন ঘরে আসতে পারে, তার সব পথই এখনও তিনি খোলা রেখেছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ওই অংশ। তাই লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল শেষ পর্যন্ত কোনও দলের সঙ্গে সমঝোতায় যাবে কি না, তা নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তৃণমূল নেত্রী এ দিন অবশ্য কৌশলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গেই তিনি এখন যোগাযোগ রেখে এগোতে চান। তাঁর কথায়, “দরকারে আমরা একটু পিছনে থাকব। অন্যদের এগিয়ে দেব। ওরা কাজ করবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তৃতায় অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টেট-দুর্নীতি, দলের নেতাদের একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য, ছাত্র-ভোটে লাগাতার সংঘর্ষ এ সব সাম্প্রতিক বিষয়ে বিশেষ কোনও কথা শোনা যায়নি। মহিলা নির্যাতনের ‘একটা-দু’টো ঘটনা নিয়ে হইচই’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশিই, মন্তব্য করেছেন, “দামাল ছেলেরা একটু দুষ্টুমি করবেই!” মুখ্যমন্ত্রীর এমন কথায় নৈরাজ্যই প্রশ্রয় পাবে বলে সমালোচনায় সরব হয়েছে সিপিএম-সহ বিরোধীরা।
সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশের জেরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল শহর। সকাল থেকেই শহরের রাস্তায় বাস, ট্যাক্সি, অটো খুবই কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের পুরো চাপ গিয়ে পড়ে মেট্রো রেলে। সেখানেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ফলে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। লাখ পাঁচেক লোক শহরে আসার অনুমান ছিলই। সেই মতো প্রশাসনিক তত্পরতাও ছিল। শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছে। তবে, নিয়ন্ত্রণ করার মতো যানবাহনই চোখে পড়েনি।
সমাবেশ শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা রেখেছিলেন: “আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা। তিন বছর আগে আমরা বাংলায় শান্তি, উন্নয়ন ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিলাম। আমরা সবাই মিলে বাংলায় পরিবর্তন এনেছি। ‘বাংলা যা আজ ভাবে, ভারতবর্ষ ভাবে আগামী কাল’—বাংলা সব সময় দেশকে পথ দেখিয়েছে।”
দুপুর দেড়টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ভাষণ দিতে ওঠেন। ব্রিগেড সমাবেশর জন্য বুধবার রাত থেকেই
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ শহরে এসে পৌঁছন। এ দিন সকালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মিছিল করে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন ব্রিগেডে এসেছিলেন। শিয়ালদহ থেকে মৌলালি, এ জে সি বোস রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণি হয়ে মানুষ ব্রিগেডমুখী হয়েছেন। দক্ষিণ শহরতলী থেকে রাসবিহারী, হাজরা, আলিপুর, ডি এল খান রোড হয়ে মিছিল করে মানুষ ব্রিগেডের দিকে এগিয়েছেন। অন্য দিকে, শহরের উত্তর প্রান্ত থেকে শ্যামবাজার, মহাত্মা গান্ধী রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে মিছিল এগিয়েছে। সময় যত গড়িয়েছে, মিছিলের কলেবরও তত বেড়েছে। বাইরে থেকে আসা মানুষের জন্য হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে অতিরিক্ত খাবারের দোকানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গাড়ি রাখার জন্য ছিল নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। তবুও এড়ানো যায়নি বিশাল যানজট। সব মিলিয়ে সমাবেশ শুরুর আগেই চূড়ান্ত নাকাল হয় শহর কলকাতা। |
ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ল
সংবাদ সংস্থা |
ভর্তুকিযুক্ত গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা ৯ থেকে বেড়ে হল ১২। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি জানান, এপ্রিল মাস থেকেই এই নয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডার পেতে হলে আধারকার্ড বাধ্যতামূলক নয়। কিছু দিন আগেই ভর্তুকিযুক্ত গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। প্রথমে রাজি না হলেও রাহুলের চাপে ভর্তুকি দেওয়া গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে তেল মন্ত্রক। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
|
পরেশ বড়ুয়া-সহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ বাংলাদেশে
সংবাদ সংস্থা |
চট্টগ্রাম আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে উঠছেন মতিউর রহমান নিজামি। ছবি: এপি। |
অস্ত্র মামলায় আলফার প্রাক্তন প্রধান পরেশ বড়ুয়া ও জামাতে ইসলামির প্রধান মতিউর রহমান নিজামি-সহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল বাংলাদেশের এক আদালত। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা এই মামলায় একই সঙ্গে ফাঁসির আদেশ হয়েছে এনএসআইয়ের প্রাক্তন প্রধান মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম, প্রাক্তন শিল্প সচিব নুরুল আমিন, বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুফতোজ্জামান বাবরের। অস্ত্র আইনের অন্য ধারায় অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। ৫০ জন অভিযুক্তের মধ্যে বাকি ৩৬ জনকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
২০০৪-এর ২ এপ্রিল মধ্য রাতে কর্ণফুলি ইউরিয়া সার কারখানার কাছে ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্র আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে ছিল রকেট লঞ্চার, এ কে ৪৭ রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, সাব মেশিনগান, রিভলভার, পিস্তল এবং প্রায় এক কোটি রাউন্ড গুলি। অস্ত্রগুলি মাছের ট্রলারে করে লুকিয়ে আনা হচ্ছিল। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে সে দিন ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন লুফতোজ্জামান বাবর। পরবর্তী চার বছরের বিএনপি জমানায় তেমন ভাবে এগোয়নি তদন্ত। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে বার বার। এর পর ২০০৮ সালে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয় সেনাশাসিত অন্তর্বর্তী সরকার। |
পৃথক তেলঙ্গনার বিল প্রত্যাখ্যান করল অন্ধ্র বিধানসভা
সংবাদ সংস্থা |
পৃথক তেলঙ্গনা রাজ্য তৈরির বিল প্রত্যাখ্যান করল অন্ধপ্রদেশ বিধানসভা। বৃহস্পতিবার, তেলঙ্গনা অঞ্চলের বিধায়কদের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যে অন্ধ্র বিধানসভার স্পিকার কে মনোহর ঘোষণা করেন, মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডির আনা তেলঙ্গনা বিরোধী প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে। সীমান্ধ্র অঞ্চলের ১৭৫ জন বিধায়ক এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তেলঙ্গানা অঞ্চলের ১১৯ জন বিধায়ক প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দেন। যদিও, তেলঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতির সভাপতি কে চন্দ্রশেখর রাও-এর ছেলে কেটি রামা রাও-এর দাবি, ফেব্রুয়ারিতে লোকসভার অধিবেশনে তেলঙ্গনা রাজ্য তৈরির বিলটি পাশ হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় গত ১২ ডিসেম্বর সংবিধানের তিন নম্বর ধারা মেনে মতামত জানার জন্য বিলটি অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় পাঠিয়েছিলেন। |
জয়ললিতার বিরুদ্ধে আয়কর সংক্রান্ত মামলা চালানোর নির্দেশ দিল সুপরিম কোর্ট
সংবাদ সংস্থা |
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও এস শশীকলার বিরুদ্ধে আয়করের খতিয়ান জমা না করার জন্য মামলা চালানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলটি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ জারি করে, আগামী চার মাসের মধ্যেই এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। এ দিন মামলার উপর স্থগিতাদেশও খারিজ করে দেশের শীর্ষ আদালত।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আয়করের খতিয়ান জমা না দেওয়ায় ১৯৯৬-’৯৭ সালে আয়কর দফতর জয়ললিতা, শশীকলা ও শশী এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। এর আগেও নিম্ন আদালতে মামলা খারিজের আবেদন নাকচ হয়েছে। ২০০৬ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টও এই একই আবেদন খারিজ করে। এর পরই সুপ্রিম কোর্টে মামলা খারিজের আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। |