দুর্ভোগ নিশ্চিত মেনে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী
ফের কাজের দিনে রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ভোগের আশঙ্কা শহরবাসীর।
আজ, বৃহস্পতিবার ব্রিগেডে সভা করবে তৃণমূল। প্রধান বক্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কলকাতা নয়, সমর্থকরা আসবেন জেলাগুলি থেকেও। শিয়ালদহ, হাওড়া, শ্যামবাজার, সল্টলেক, হাজরা মোড় থেকে মিছিল যাবে সভাস্থলে। সেই অনুযায়ী যথেষ্ট পুলিশি বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের আশ্বাস, “সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সে জন্য সরকার যথেষ্ট বাসের ব্যবস্থা করবে।” তবু মিছিলের কারণে যানজট ও বাসের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ হয়তো পুরোপুরি এড়ানো যাবে না বলেই আশঙ্কা করছে পুলিশ।
সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী জনসাধারণের কাছে আগাম মার্জনা চেয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, “মানুষের অসুবিধার জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একটা দিনের জন্য মানুষ যেন আমাদের ক্ষমা করেন।”
কাজের দিনে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ অবশ্য নতুন কিছু নয়। বাম আমলে বারবারই কাজের দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির জেরে নাকাল হতে হয়েছে রাজ্যের মানুষকে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা কাজের দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাশ টানার কথা বলেছিলেন। ফলে তিনিই কেন কাজের দিনে সভা ডেকে নাগরিকদের দুর্ভোগে ফেলছেন, এই প্রশ্ন উঠছে। সভার ২৪ ঘণ্টা আগে তার ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, “নীতিগত ভাবে আমরা কাজের দিনে এই ধরনের জনসভা করার বিরোধী। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন, বর্ষা ইত্যাদি কারণে জনসভা করার দিন পাইনি।” মমতা এর আগে ব্রিগেডে সভা করেন ২০১১ সালের ২১ জুলাই। সেটিও ছিল বৃহস্পতিবার।
পড়ুয়াদের সমস্যায় না ফেলতে শহরের কয়েকটি স্কুল আগাম ছুটি ঘোষণা করেছে। যদিও যাত্রীদের ভোগান্তি শুরু হয়ে গিয়েছে বুধবার থেকেই। সভায় লোক আনার জন্য এ দিন থেকেই শহরের বিভিন্ন রুটের বাস নিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বাস মালিকরা অভিযোগ করেছেন। হুগলির কয়েকটি জায়গায় এ দিন যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস দখল করার অভিযোগ উঠেছে। আরামবাগ, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়ায় টিকিট কেটে বসে থাকা যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার ফলে প্রচুর যাত্রী বিপাকে পড়েন বলেও অভিযোগ।
আজ, বৃহস্পতিবার ভোগান্তি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা লালবাজারের কর্তাদের। ট্রাফিক কর্তারা জানিয়েছেন, মিছিলের জেরে আগে থেকে কোনও রাস্তা বন্ধ করা হবে না। কিন্তু সমর্থকরা মিছিল করে যাওয়ার সময় বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে। সমর্থকদের সিংহভাগই আসবে আজ। যদিও বুধবারই বিভিন্ন জেলা থেকে বহু সমর্থক শহরে পৌঁছে গিয়েছেন। অনেকে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে রাত্রিবাস করছেন। রাতে তৃণমূল সমর্থকদের একাংশের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামেও।
যুবভারতীর মাঠকে রাজনৈতিক দলের কোনও অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছিলেন পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। দলের সমর্থকদের স্টেডিয়ামে থাকা নিয়ে কী বলেছেন তিনি?
মন্ত্রীর বক্তব্য, “যুবভারতীর মাঠের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই মাঠে কোনও প্যান্ডেল করতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। মাঠে থাকার জন্য তাঁদের কাছ থেকে কিছু ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে।”
এ দিন দুপুরে সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ব্রিগেডে যান লালবাজারের কর্তারা। ময়দানের কোন কোন দিক দিয়ে মিছিলকারীদের সভায় ঢোকানো হবে, সেই সময় কোন কোন রাস্তায় সাময়িক ভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র জানান, সভার কথা মাথায় রেখে গোটা শহরে চার হাজারেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ময়দান এলাকায় অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমও খোলা হচ্ছে। ভিড়ে নজরদারি চালাতে ওড়ানো হবে উড়ুক্কু যান (ইউএভি)। এ দিন বিকেল থেকেই ব্রিগেড চত্বরে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ব্রিগেডে সভা শুরু বেলা বারোটায়। লালবাজার জানিয়েছে, সভামুখী ভিড়ের কথা মাথায় রেখে ভোর ছ’টা থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। শিয়ালদহ, শ্যামবাজার, হাজরা থেকে সমর্থকরা মিছিল করে এবং বাস বা ছোট ট্রাকে চেপে আসবেন। তার জেরে ব্রেবোর্ন রোড, এ পি সি রোড, এ জে সি বসু রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সি আই টি রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, ডি এল খান রোড, লেনিন সরণিতে যান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। আর তার জের গিয়ে পড়তে পারে মহাত্মা গাঁধী রোড, কলেজ স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, স্ট্র্যান্ড রোডে। যানজট ছড়াতে পারে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায়।
এই যানজটের কথা মাথায় রেখেই শহরের বিভিন্ন স্কুল এর মধ্যেই ছুটি ঘোষণা করেছে। অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, এ দিন সকাল থেকেই কিছু স্কুল এসএমএস করে ছুটির কথা জানিয়ে দিয়েছে। ছুটির কথা জানানো হয়েছে পুলকার চালকদেরও। কাজের দিনে যাঁরা ট্রেনে চেপে অফিস-কাছারি যাবেন, তাঁদেরও নাকাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শহরতলি ও জেলা থেকে সমর্থকরা ট্রেনে চেপে আসার ফলে সেখানেও ভিড় লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ইতিমধ্যেই প্রচুর বাস তুলে নিয়েছেন বাস মালিকেরা। সাধারণ দিনেই রাস্তায় সে ভাবে বাসের দেখা মেলে না। পুলিশ সূত্রের খবর, সভায় আসার জন্যও বহু বাস নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে আজ রাস্তায় কতগুলি বাস নামবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বাস মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট-এর নেতা দীপক সরকার বলেন, “খুব খারাপ পরিস্থিতি। সব রুট থেকেই প্রচুর বাস তৃণমূল নেতারা তুলে নিচ্ছেন। এই কারণে বৃহস্পতিবার অনেক রুটেই বাস চলবে না।” দীপকবাবুর সঙ্গে একমত জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “জেলাগুলিতে বুধবার থেকেই বাস নেই। সবই এখন ব্রিগেডমুখী। বাস মালিকরা অনিচ্ছুক হলেও কিছু করার থাকে না। শাসক দলের নেতাদের কথা মানতেই হয়।”
একে মিছিলের জেরে যানজট, তায় বাসের অভাব। অনেকেই আজ মেট্রো ধরে গন্তব্যে পৌঁছতে চাইবেন। অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে এর আগে একাধিক বারই ব্যাহত হয়েছে মেট্রোর পরিষেবা। এ বারও পাতালপথে তেমনটা হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ফলে পথে যথেষ্ট বাস নামানোর আশ্বাস দেওয়া পরিবহণমন্ত্রীও মানুষে দুর্ভোগের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য, “বৃহস্পতিবার যদি সব মানুষের গন্তব্য ব্রিগেড হয়, তা হলে সরকার আর কী করবে!”

সাত ক্যামেরায় সম্প্রচার, টুইটও
ব্রিগেডের সভা সম্প্রচারের সুবিধার্থে নিজেরাই সাতটি ক্যামেরা বসাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই ছবি অনলাইনে সম্পাদনা করে দেওয়া হবে টিভি চ্যানেলগুলিকে। তারা চাইলে ব্যবহার করতে পারবে সেই ছবি। যাঁরা কাজের তাড়ায় টিভি-র সামনে থাকতে পারবেন না তাঁদের জন্য থাকছে টুইটার। সকাল এগারোটা থেকেই সমাবেশের নিয়মিত আপডেট মিলবে টুইটারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.