অটোর দৌরাত্ম্য দমনে কঠোর হতে নির্দেশ সিপি-র
যাত্রীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ না পেলেও চলবে। অটোচালকেরা যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বা তাঁদের হেনস্থা করেছেন জানতে পারলে এ বার স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে। অটোচালকদের লাগামহীন দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশকে এই নির্দেশই দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। বুধবার লালবাজারের ক্রাইম কনফারেন্সে থানা এবং ট্রাফিক পুলিশ— দু’পক্ষকেই অটোচালকদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছেন সিপি।
লালবাজার সূত্রের খবর, সুরজিৎবাবু এ দিন তাঁর বাহিনীকে জানান, উপযুক্ত কাগজপত্র ছাড়া যে সব অটো শহরের রাস্তায় চলছে, তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতেই হবে, সেই সঙ্গে কোনও যাত্রীর সঙ্গে অটোচালকের খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ পেলে অবিলম্বে সক্রিয় হতে হবে পুলিশকে। এ নিয়ে কোনও ভাবেই আপস করা চলবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চলাকালীনই ট্যাংরা ও এন্টালিতে অটোচালক ও মালিকদের একাংশের হাতে প্রহৃত হয় পুলিশ। এমনকী, অটোচালকেরা রান্না করা খাবারও পুলিশের উর্দিতে ঢেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া, গত দশ দিনে তারাতলা, নিউ আলিপুর ও কড়েয়া এলাকায় অটোচালকদের হাতে দুই মহিলা-সহ বেশ কয়েক জন যাত্রী আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটেই দীর্ঘ দিন চুপচাপ বসে থাকার পরে শেষমেশ গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে বেচাল দেখলেই অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে পুলিশ। আর এই অভিযান যে চলবে, তা ক্রাইম কনফারেন্সে সিপি-র এ দিনের মনোভাবে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে লালবাজার।
একই সঙ্গে শহরে ধর্ষণের মামলাগুলির ক্ষেত্রে অভিযুক্তেরা হেফাজতে থাকাকালীনই যাতে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন বা ‘কাস্টডি ট্রায়াল’ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে তদন্তকারীদের নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, সিপি জানান, কোনও ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্তকারীরা গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন শাখা ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার মাধ্যমে দ্রুত তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ করে চার্জশিট দেবেন। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এই রকম কয়েকটি মামলায় দোষীদের দ্রুত শাস্তি হলে প্রভাব পড়তে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”
পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির মধ্যে গণধর্ষণের অভিযোগ ২০১২-র ফেব্রুয়ারি মাসে জমা পড়লেও ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত কাদের এখনও অধরা। তা ছাড়া, ২০১২ সালে কলকাতায় যেখানে ১২১টি ধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছিল, সেই জায়গায় ২০১৩ সালে ধর্ষণের মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১টি। অবশ্য লালবাজারের যুক্তি, আগের তুলনায় মহিলারা এখন অনেক বেশি করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন। ১৯ জানুয়ারি হাওড়ার এক তরুণীকে খিদিরপুরে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ধর্ষণকারীর সংখ্যা এক না একাধিক, তা নিয়ে অস্পষ্টতা এখনও কাটেনি। তবে তদন্তে পুলিশকে ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ অনেকটাই সাহায্য করেছিল।
কলকাতা শহর জুড়ে এখন ৪৬৪টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। মূলত যানবাহন চলাচলের বিষয়টি মাথায় রেখে ওই সব ক্যামেরা বসানো হলেও সিপি এ দিন অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রেক্ষিতে থানার ওসি-দের ক্যামেরাগুলির অবস্থান নতুন করে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের প্রস্তাব মতো কিছু ক্যামেরা এ দিক-ও দিক সরানোও হবে বলে জানিয়েছেন সিপি।
সেই সঙ্গে সিপি-র নির্দেশ, থানার ওসি, অতিরিক্ত ওসি-দের শুধু গাড়িতে নয়, এখন থেকে অনেকটা সময় পায়ে হেঁটে নিজের নিজের এলাকায় টহল দিতে হবে। এক অফিসারের বক্তব্য, “বহু ওসি ভাল করে সংশ্লিষ্ট থানার গোটা এলাকা দু’-তিন বছরেও চিনে উঠতে পারেন না। আবার শহরের অনেক ঘিঞ্জি এলাকায় গাড়িতে ঘোরা সম্ভব নয়। সিপি-র নির্দেশ কার্যকর হলে থানার অন্যান্য অফিসার ও পুলিশকর্মীরাও পায়ে হেঁটে এলাকার অনেকটা জায়গায় টহল দেবেন।” সিপি এ দিন ক্রাইম কনফারেন্সে জানান, ২০১২-র তুলনায় ২০১৩-য় ছিনতাইয়ের সংখ্যা একশোরও বেশি কমে গিয়েছে। পায়ে হেঁটে টহল বাড়ালে এই ধরনের অপরাধ আরও কমবে। তবে মঙ্গলবার জেমস লং সরণির কাছে মোটরবাইকে এসে হার ছিনতাই করে গুলি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। ২০১১-য় এ ধরনের অপরাধ পরপর ঘটলেও এখনও সেই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েনি।
এ দিনের ক্রাইম কনফারেন্সে শহরে একা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও দম্পতিদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর সংবলিত তথ্যপঞ্জি থানায় থানায় তৈরি করে নিয়মিত পুলিশ যাতে ওই প্রবীণ নাগরিকদের খোঁজ করে, সে বিষয়েও নির্দেশ দেন সুরজিৎবাবু। সেই সঙ্গে কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় এখনও যে পুলিশের নজর এড়িয়ে কিংবা মদতে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, সে কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়ে ওই কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, অটোর বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালীন পামারবাজার ও পিলখানায় পুলিশকে মারধরের অভিযোগে চার জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতদের নাম ছোট্টু, মহম্মদ ফকরুদ্দিন ওরফে ফেকু, সুরজিৎ পাত্র ও বাবাই নাথ। তাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। বুধবার ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে ট্যাংরার ডি সি রোড থেকে ছোট্টুকে এবং এন্টালির বিবিবাজার থেকে ফকরুদ্দিন-সহ তিন জনকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ফকরুদ্দিন অটো চালাত। বাকিরা অটোচালক না হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.