থামল ব্যাঞ্জোর জাদু, প্রয়াত পিট সিগার
পাঁচ তারের ব্যাঞ্জো এই জিয়নকাঠি ছুঁইয়েই মার্কিন লোকসঙ্গীতকে নয়া জীবন দিয়েছিলেন তিনি। তার পর আজীবন আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের গান গেয়েছেন। অবশেষে সে স্বরও থামল। জীবনের নিয়মেই। মারা গেলেন পিট সিগার।
নাতি কিটামা ক্যাহিল জ্যাকসন জানাচ্ছেন, নিউ ইয়র্কের প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে দু’মাস ধরে ভর্তি ছিলেন পিট। চলছিল চিকিৎসা। তার পর সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ সব শেষ। মারা গেলেন এই লোকসঙ্গীতশিল্পী। অঙ্কের হিসেবে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
কিন্তু বয়সই কি সব? তাই যদি হবে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন মুলুকের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অভিষেক অনুষ্ঠানে কী করে ব্যাঞ্জোয় ঝড় তুললেন তিনি? কিংবা সে বছরের মে মাসেই নিজের ৯০তম জন্মদিনে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়্যারে হাজির প্রায় ১৫ হাজার শ্রোতাকে কোন জাদুতে মাতিয়ে রাখলেন পিট? উত্তরটা নিজেই দিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “এ দুনিয়া যে উৎকৃষ্ট সঙ্গীতের খনি, সেটা বোঝানোই আমার কাজ।” এমন গান যা কি না সব অর্থেই এই বিশ্বকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে, সে গানের হদিস দিতেই তাঁর আজীবন সঙ্গীত-সাধনা।
আর তাই বোধহয় তাঁর গানে বার বার ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের কথা, রাজনৈতিক ভাঙাগড়ার কাহিনি। জীবনের বেশ কিছুটা সময় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য থাকায় ১৯৬১ সালে এক বছরের জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়। ছাড়া পাওয়ার পরও বেশ কিছু বছর বিপুল শ্রোতার সামনে গান করার সুযোগ পাননি। তাঁর তেরো বছর পুরনো ব্যান্ড দা ‘উইভার্স’ তো আগেই ভেঙে গিয়েছে। ব্যান্ডের বাকি তিন সদস্য লি হায়েস, রনি গিলবার্ট এবং ফ্রেড হেলারম্যান সকলের সঙ্গেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন। তথ্য বলছে, এঁদের সঙ্গেই ‘গুডনাইট আইরিন’, ‘অন টপ অব ওল্ড স্মোকি’, ‘ইফ আই হ্যাড আ হ্যামার’-এর মতো গান বেঁধেছিলেন পিট। সেই তাঁদের ছাড়া কী করে থাকবেন তিনি?
পিট অবশ্য জানিয়েছিলেন জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরের সময়টাই ছিল তাঁর জীবনের সেরা সময়। “সে সময় একটার পর একটা কলেজে গান করছিলাম। ছোটদের বোঝাচ্ছিলাম এ দেশেই এমন সঙ্গীত রয়েছে যা কখনও রেডিওতে বাজানো হয় না।” শুনলে অদ্ভুত লাগে। তবে শিক্ষক বাবা-মার সন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়া পিট যে দিন স্রেফ ব্যাঞ্জোর টানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছিলেন, সে দিনই বোঝা গিয়েছিল, ‘স্টারডম’ নয়, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাই তাঁর লক্ষ্য। আর তাই বোধহয় ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে ইরাকের যুদ্ধ, ওয়াল স্ট্রিট দখল অভিযান থেকে হাডসন নদী বাঁচাও আন্দোলন সব কিছুই ফিরে এসেছে তাঁর গানে।
আশার কথা একটাই। দেরিতে হলেও দুনিয়া এই প্রতিভাকে কুর্নিশ জানিয়েছে। কলকাতাও বাদ যায়নি। ব্যাঞ্জোর আওয়াজে আর জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতের আবহে একাধিক বার মহানগরীকে মাতিয়েছিলেন তিনি।
নিজের কৃতিত্ব অবশ্য মানতেন না তিনি। তারই একটা প্রমাণ আছে ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গানটিতে। পিট বলেছিলেন, “আমি শুধু আসল গানের উইল শব্দের জায়গায় শ্যাল করেছিলাম। অবদান বলতে ওটুকুই।”
দুনিয়া জানে, সে ছোট্ট অবদানই মার্কিন নাগরিক আন্দোলনকে কতটা জোরদার করেছিল। এ জোরের নামই পিট সিগার যে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.