কণ্ঠিরামের মরিয়া চিৎকারে পালাল ভালুক
মা ও তার দুই সন্তানের আক্রোশের মুখেও সাহস আর উপস্থিত বুদ্ধি হারাননি তিনি।
শনিবার সাত সকালে পুরুলিয়ার ঝালদায় কলমা জঙ্গলে লাগোয়া মাঠে কাজ করছিলেন কণ্ঠিরাম মাঝি। কুয়াশা ঢাকা মাঠ। কাজ করতে করতে এক সময়ে জঙ্গলের প্রায় দোরগোড়ায় এসে পড়েছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখেন, হাত বিশেক দূরে দাঁড়িয়ে এক মাদি ভালুক। সঙ্গে তার দুই ছানাপোনা।
বাচ্চাদের বাঁচাতেই মা-ভালুকটি থাবা উঁচিয়ে আক্রমণ করে বসে কণ্ঠিরামকে। গালে হাঁটুতে, পাঁজরে বসিয়ে দেয় তার ইঞ্চি আটেক লম্বা নখ। কিন্তু ছাড়বার পাত্র নন কণ্ঠিরামও। হাতের কুড়ুলটা মাথার উপরে বোঁ বোঁ করে ঘোরাতে থাকেন প্রৌঢ়। সঙ্গে তীক্ষ্ন স্বরে চিৎকার। কন্ঠিরামের এ হেন আচরণে ঘাবড়ে গিয়েছিল ভালুকটি। তাঁর ওই রণমূর্তি দেখে থাবা উঁচিয়ে এগিয়ে আসা ভালুকটি পিছিয়ে যেতে থাকে। তবে তাতেও ‘যুদ্ধ’ না থামিয়ে মা আর তার সন্তানদের এ বার তাড়া করেন তিনি। এ বার আর পাল্টা আক্রমণ নয়। রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হটতে থাকে ভালুকটি। আহত কণ্ঠিরামও এ বার গ্রামের রাস্তা ধরে। খানিকটা পিছু হটে শুরু করেন দৌড়। সেই সময়ে মাঠমুখী অন্য গ্রামবাসীরাই তাঁকে ভর্তি করেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।
জখম কণ্ঠিরাম মাঝি। সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
ঝালদা বন দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, কণ্ঠিরামের ‘বীরত্বের’ কথা। ঝালদার রেঞ্জ অফিসার সমীর বসু জানান, কলমার জঙ্গলে ভালুকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ‘কমন স্লথ বেয়ার’ বা ভালুক ছাড়াও চিতল হরিণ, সম্বর, এমনকী মাঝে মধ্যে চিতাবাঘেরও আনাগোনা রয়েছে ওই জঙ্গলে। তিনি বলেন, “কোনও প্ররোচনা ছাড়াই ভালুক আক্রমণ করে। এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে আবার ছানাপোনাও ছিল। ফলে তাদের রক্ষা করতে সে যে আক্রমণ করবে তা স্বাভাবিক।” আক্রমণ করার সময়ে ভালুক পিছনের দু’ পায়ে দাঁড়িয়ে তার গুটিয়ে রাখা নখ বের করে হামলে পড়ে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই নখের আঘাতেই প্রতিপক্ষকে ফালা ফালা করে দেয় সে। সমীরবাবু বলেন, ভালুকের সামনে পড়েও ঘাবড়ে না গিয়ে সাহস দেখানোর ফলেই প্রাণে বেঁচেছেন ওই গ্রামবাসী।
হাসাপাতালে শুয়ে কন্ঠিরামবাবু বলেন, “জঙ্গলের লাগোয়া এলাকায় আমাদের আবাদি জমি। সেখানেই কাজ করছিলাম। আচমকা দেখি একটি ভালুক আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছু বোঝার আগেই দু’পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে। তার দুই মাঝারি মাপের ছানারাও এগিয়ে আসছে আমার দিকে। বুঝলাম ভয় পেলে চলবে না। আমি এ বার চিৎকার শুরু করি। সেই সঙ্গে হাতের কাটারিটা মাথার উপরে তুলে ঘোরাতে থাকি।” ততক্ষণে মা-ভালুকটি আঁচড়ে দিয়েছে তাঁর হাতে-পাঁজরে। এ বার কাটারি নিয়ে তাড়া করেন কণ্ঠিরাম। তাঁর দাবি, এক ঘা বসিয়েও দেন মা ভলুকটির পায়ে। মারমুখী কণ্ঠিরামকে দেখে এ বার পিছু হটতে থাকে ভালুকটি।
কন্ঠিরামবাবুর ভাই আষাঢ়ি মাঝি বলেন, “দাদা ওই ভাবে বেশ কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়েছিল। তারপরে পিছু হটে ছুটতে থাকেন। সেই সময়ে মাঠে যাচ্ছিলেন অন্য গ্রামবাসীরা। তাঁরাই রক্তাক্ত দাদাকে উদ্ধার করে ঝালদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।” চোট গুরুতর থাকায় তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক চিকিৎসক বলেন, “তেমন বিপদ নেই বলেই মনে হচ্ছে। বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন ওই প্রৌঢ়।” মৃদু হেসে কণ্ঠিরামও বলছেন, “বরাত বলে বরাত, জোর বেঁচে গিয়েছি!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.