|
|
|
|
আই লিগের লাস্ট বয় এ বার ভারত সেরা
রতন চক্রবর্তী • কোচি
চার্চিল ব্রাদার্স-৩ (বলবন্ত, আলেস, সাবানা)
স্পোর্টিং ক্লুব-১ (ভিক্টোরিনো) |
কেরলের ‘বিস্ময় বালক’ পনেরো বছরের শাহিদ সফর পান্ডিকাডের ফুটবল জাগলিং দেখে কোচি স্টেডিয়াম বুঁদ। উচ্ছ্বাসে উদ্বেল। বিরতিতে টানা দশ মিনিট বল তাঁর শরীরের নানা জায়গায় ঘুরল। পা থেকে পিঠ, কোমর থেকে মাথা-মাটিতে বল পড়ল না। বল নাচাতে নাচাতে জামা খুলছে-পরছে ক্লাস নাইনের ছেলেটা।
সেই বিস্ময়ের সঙ্গে পাল্লা দিল ফাইনালের ফলও— আই লিগের ‘লাস্ট বয়’ এ বার ভারতের সেরা ক্লাব। কোনও ম্যাচ না হেরেই। ভারতীয় ফুটবলে যা কখনও হয়নি। শাপমুক্তি ঘটল চার্চিল ব্রাদার্সের। ক্লাবের পঁচিশ বছরের ইতিহাসে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হল গোয়ার পারিবারিক ক্লাব। চার বার সেমিফাইনালে উঠেও যা অধরা ছিল। ফেড কাপও পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।
সাবানা-লেনিরা এখনও তিন মাসের মাইনে পান। আই লিগে টিমটার মনোবল চলে গিয়েছিল তলানিতে। টিডি সুভাষ ভৌমিক ছিলেন না পুরো টুর্নামেন্টে (তাঁর মাতৃবিয়োগের জন্য অবশ্য কালো ব্যাজ পরে নেমেছিল চার্চিল)। সেই দলকে নিয়েই মারিয়ানো ডায়াস যা করলেন, তা চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। শক্ত গ্রুপ থেকে উঠে এসে সেমিফাইনালে ‘হাই প্রোফাইল’ মোহনবাগানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন।
ভারতীয় ফুটবলে যে ক’জন নতুন বিদেশি কোচ এসেছেন তাঁদের মধ্যে স্পোর্টিং ক্লুবের অস্কার ব্রুজোকে অনেকেই প্রচুর নম্বর দিচ্ছেন। তাঁর স্ট্র্যাটেজি, টিম গেমের জন্য। স্পেনের সেই কোচের সমস্ত ট্যাকটিক্সকে শনিবারের ফাইনালে ভোঁতা করে দিলেন মারিয়ানো। গোয়াকে সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন করলেও অনেকে তাঁকে পাত্তাই দিতেন না। কটাক্ষ করে বলা হত, ‘মাঠে বাটি বসানো কোচ।’ মানে সহকারী। মাত্র দু’জন বিদেশি নিয়ে ঠান্ডা মাথার সেই ভদ্রলোক-ই নতুন করে স্বদেশি কোচের জয়ধ্বজা উড়িয়ে দিলেন ভারতীয় ফুটবলে। নিখুঁত অঙ্ক করে একের পর এক টুর্নামেন্টের সেরা দলকে হারিয়ে। যে সব ফুটবলারকে নিয়ে তিনি চার্চিলকে ভারত সেরা করলেন, সেই রাজু, বলবন্ত সিংহ, থাংজাম, বালমুচু, আলেসদের কে চেনে? দু’কোটির ওডাফা ওকোলি চারটে গোল করেছেন, আর পঞ্জাবের ছেলে তিরিশ লাখের বলবন্তও করেছেন চার গোল। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা সময় ছাড়া দাঁড়াতেই পারেনি স্পোর্টিং ক্লুব। উল্টে চার্চিলের অন্তত তিনটে সহজতম সুযোগ নষ্ট হল। গোলপোস্টে লেগে ফিরল সাবানার শট। দু’টো বল গোললাইন থেকে ফেরান স্পোর্টিং ডিফেন্ডাররা।
ম্যাচের পর লেনি, উলফ, ডেঞ্জিলরা যখন চার্চিল ফ্ল্যাগ নিয়ে দৌড়োচ্ছেন তখন সে দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন কোচ মারিয়ানো। “আমার স্বপ্ন সার্থক। কোচিং জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত। ফুটবলার হিসাবে ফেড কাপ জিতেছি। সালগাওকরের হয়ে। কোচ হিসাবেও চার্চিলকে চ্যাম্পিয়ন করলাম।” মারিয়ানো গর্ব করতেই পারেন। ভারতীয় ফুটবলে খুব কম কোচেরই যে ফুটবলার-কোচ হিসাবে ‘ভারতজয়ী’ হওয়ার কৃতিত্ব আছে। |
|
|
|
|
|