এক-একটি ডিমের দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা!
আর ওই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বার করতে পারলে প্রতিটি বাচ্চা বিকোতে পারে দেড় থেকে আড়াই লক্ষ টাকায়। যে-সে পাখি নয়। এর নাম ম্যাকাও!
কলকাতা ও শহরতলিতে ম্যাকাওয়ের ডিম ফোটানোর ব্যবসা খুলে ফেলেছেন শ’খানেক লোক। শুধু ম্যাকাও নয়, ফোটানো হচ্ছে কাকাতুয়া, ধূসর টিয়ার ডিমও। সেই ডিম ফুটিয়েই বছরে কোটি টাকার উপরে ব্যবসা করছেন অনেকে। এই তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা (ডব্লিউএলসিসিবি)। ওই সংস্থার আঞ্চলিক ডেপুটি ডিরেক্টর চতুর্ভুজ বেহরার হিসেব, গত দু’বছরে কলকাতা ও শহরতলিতে চোরাই বিদেশি পশু, সরীসৃপ ও পাখি নিয়ে ৫৮ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। |
বাগুইহাটির পশুপাখি ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে পাখিগুলিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয়
বন মন্ত্রকের বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মীরা। অঙ্কিত দত্তের তোলা ছবি। |
পশুপাখির চোরাকারবারের মতো এই ব্যবসাও অবৈধ। এই ধরনের কারবারিরা কতটা বেপরোয়া, বুধবার বাগুইআটির এক পশুপাখি ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়েই টের পেয়েছেন ডব্লিউএলসিসিবি-র কর্তারা। ওই বাড়ি থেকে তিনটি শিম্পাঞ্জি, পাঁচটি মার্মোসেট, ম্যাকাও, কাকাতুয়া এবং ধূসর টিয়া উদ্ধার করেছে ডব্লিউএলসিসিবি। সংস্থার কর্তাদের দাবি, ওই বাড়িতে আরও দু’টি শিম্পাঞ্জি আনা হয়েছিল। সেগুলি পাচার হয়ে গিয়েছে আগেই। ডব্লিউএলসিসিবি মাঝেমধ্যে এই ধরনের অভিযান চালালেও এত বড় ধরনের অভিযান খুব একটা হয় না। বেহেরার মন্তব্য, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ওই সব বিরল পাখির ডিম মূলত বাংলাদেশ ও নেপাল হয়ে এ দেশে ঢোকে। তার পরে সড়কপথে চলে আসে কলকাতায়। পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে এই শহরের বিভিন্ন জায়গায়। ডিম ফুটে বাচ্চা হলে সেগুলিকে কিছুটা
বড় করে ডিমের চার গুণ দামে পাচার করা হয়।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে কী ভাবে এত পশুপাখি পাচার হচ্ছে? এর মূলে কি নজরদারির অভাব?
আসলে এই ধরনের পাচার বন্ধ করার মতো তেমন কোনও কঠোর আইন নেই। শুধু শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি নজরে এলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যবস্থা নিতে পারে। বুধবার বাগুইআটিতে পশুপাখি বাজেয়াপ্ত করতে কেন্দ্রীয় শুল্ক বিভাগই উদ্যোগী হয়েছিল। তারাই ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আটক পশুপাখিগুলিকে তুলে দিয়েছে চিড়িয়াখানায়। রাজ্যের মুখ্য বনপাল সিতাংশুবিকাশ মণ্ডল বলেন, “এ-সব চোরাচালান আটকানোর মতো আইন আমাদের হাতে নেই। ফলে পাচার ঠেকানোর পরিকাঠামোও নেই। পশুপাখি সড়ক বা নদীপথে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢোকে। সীমান্তে শুল্ক দফতরের যে-বাহিনী থাকে, তাদেরই এটা দেখার কথা।”
ডব্লিউএলসিসিবি-র আঞ্চলিক ডেপুটি ডিরেক্টর বলেন, কোন কোন প্রাণী বিলুপ্তপ্রায়, তার তালিকা সব দেশের সীমান্তের পাহারাদার এবং শুল্ক দফতরের কাছে আছে। ওই তালিকার কোনও প্রাণীকে কোনও দেশই ব্যবসার জন্য আমদানি বা রফতানি করতে পারে না। কোনও দেশ একমাত্র গবেষণার জন্য তাদের আমদানি করতে পারে। বাগুইআটির ব্যবসায়ীর বাড়িতে পাওয়া পশুপাখির মধ্যে শিম্পাঞ্জি ও মার্মোসেট বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর আওতায় পড়ে।
ম্যাকাও এবং অন্য যে-সব পাখি ওই বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে, সেগুলো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় না-থাকলেও ওই সব পাখি আমদানি করতে হলে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেস্টের কাছে আবেদন করতে হয়। প্রাণীটি কোন দেশে কোন পরিবেশে থাকে, তার বয়স, লিঙ্গ, কত টাকায় কেনা হচ্ছে, ব্যবসায়িক কাজে আনা হচ্ছে কি না ইত্যাদি তথ্যের সবিস্তার বিবরণ দিতে হয়। তার পরে অনুমতি মিলতে পারে। বাগুইআটির ঘটনায় যে-ব্যবসায়ীকে শুল্ক দফতর আটক করেছিল, তাঁর কাছে ওই সংক্রান্ত বৈধ কাগজ ছিল না বলেই ডব্লিউএলসিসিবি-র দাবি। ওই সংস্থার অভিযোগ, কলকাতা ও শহরতলিতে যাঁরা এই ধরনের ব্যবসা করেন, তাঁদের মধ্যে খুব কম ব্যবসায়ীর কাছেই বৈধ অনুমতি রয়েছে। |