খেলতে গিয়ে বাড়ি ফিরছিল না তিন বছরের ছেলে। ভর সন্ধেয় তাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন উদ্বিগ্ন মা। নির্জন মাঠে বছর উনিশের ওই তরুণীকে একা পেয়ে গ্রামেরই দুই যুবক ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। বর্ধমানের জামালপুরের শম্ভুপুরের এই ঘটনাটি প্রায় এক মাস আগের হলেও প্রভাবশালী অভিযুক্তপক্ষের ‘চাপে পড়ে’ এত দিন অভিযোগ করেননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নির্যাতিতা তরুণী। বৃহস্পতিবার সাহস করে তিনি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে শুক্রবার অভিযুক্ত সোহেল চৌধুরী ও সহিদুল আলিকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ধৃত সোহেল চৌধুরীর দিদি স্থানীয় বিরুগ্রাম পঞ্চায়েতের শম্ভুপুর আসনের তৃণমূল সদস্যা। নির্যাতিতা তরুণী যাতে থানায় না যান, তার জন্য তৃণমূলের তরফেই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ সিপিএমের মেমারি জোনাল কমিটির সম্পাদক সমর ঘোষের। জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক অবশ্য বলেন, “দলের কেউ জড়িত কি না জানি না। তবে, রাজ্য সরকার এই ধরনের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্তরা গ্রেফতারও হয়ে গিয়েছে।”
শনিবার ধৃত দু’জনকে বর্ধমান সিজেএম আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “যদিও ঘটনাটি এক মাস আগের, তবুও অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ নেওয়ার সময় রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে শনিবার। এ দিন তরুণীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় বর্ধমান সিজেএম আদালতে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই তরুণীর স্বামী কাপড় ফেরি করেন গ্রামে-গ্রামে। বছর তিনেকের একটি ছেলে রয়েছে দম্পতির। ২৪ ডিসেম্বর বিকেল বেলায় খেলতে বেরিয়েছিল ছেলে। সন্ধের পরও বাড়িতে না ফেরায় তাকে খুঁজতে বেরোন ওই তরুণী। অভিযোগ, নির্জন মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বছর কুড়ির সহিদুল ও বছর বাইশের সোহেল তাঁকে একটি মুরগি খামারে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।
সিপিএম নেতা সমরবাবুর অভিযোগ, “ঘটনার সময় ওই তরুণীর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। বিষয়টি চাপা দিতে ময়দানে নামেন তৃণমূলের লোকেরা। কিছু দিন আগে গ্রামে একটি গোপন সালিশি সভা বসান তাঁরা। ওই দুই অভিযুক্তকে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিস্তি হিসাবে তাঁরা ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েও দেন। কিন্তু সালিশি সভায় উপস্থিত তৃণমূলের কিছু নেতা সেই টাকা নিয়ে নেন। ২২ জানুয়ারি তরুণীর স্বামী বাড়িতে ফিরে ঘটনাটি জানতে পারলে থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”
অভিযোগ মেনে নিয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ পাল বলেন, “ধর্ষণকারীদের পাশে দল কোনও ভাবে দাঁড়াবে না। কারা সালিশি সভা বসিয়ে টাকা আত্মসাৎ করল, তা খুঁজে বার করার জন্য পুলিশকে বলেছি।” সমরবাবুর আরও অভিযোগ, “শনিবার আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই তরুণীর স্বামীকে মারধর করেছে তৃণমূলের লোকেরা। থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।” জামালপুর থানার দাবি, অভিযোগকারীর স্বামীকে মারধরের কোনও অভিযোগ আসেনি তাদের কাছে। |