বিষ্ণুপুরকে স্বাস্থ্য জেলা ঘোষণা করা হয়েছে ২০১১ সালে। তার পরেই বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালকে রূপান্তরিত করা হয় জেলা হাসপাতালে। শুধুমাত্র খাতায় কলমে জেলা হাসপাতাল হয়েছে। দু’বছর গড়িয়ে গেলেও তার বাস্তব রূপ বদলায়নি। নতুন বলতে শুধুমাত্র আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য একটি ‘বার্ন ইউনিট’ চালু হয়েছে। বাকি চিকিৎসা পরিষেবা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।
প্রতিটি বিভাগে চিকিৎসকের অভাব। ফলে দুর্ঘটনাজনিত কোনও অপারেশন বা বড় অসুখে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয় রোগীদের। তা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বহির্বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যেতে হয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের। সকলেরই ক্ষোভ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী থেকে সুইপার নেই, নিরাপত্তা কর্মী নেই। অথচ প্রতিদিন বিষ্ণুপুর ছাড়াও জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাস, তালড্যাংরা, ওন্দা এমনকী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থেকেও ৮০০-র বেশি রোগী আসেন। বহির্বিভাগে রয়েছে ২৪০টি শয্যা। সে তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম। |
চিকিৎসকের অপেক্ষায়। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
জয়পুর থেকে দাদাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে এসেছিলেন পরেশ দাস। তিনি বললেন, “অনেক খুঁজে একটা ট্রলি পেলাম। তাও পিছনের চাকা ভাঙা। লোক নেই। নিজেদের ঠেলে নিয়ে যেতে হচ্ছে।” রাতে নিরাপত্তা কর্মী একজন। শ্লীলতাহানি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে বিষ্ণুপুরে। টেকনিসিয়ানের অভাব রয়েছে এক্সরে ও প্যাথলজি বিভাগে। ফলে জরুরি পরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে বাধ্য হন রোগীরা। ওয়ার্ড মাস্টার একজন। তাঁর অবর্তমানে চালান কোনও এক স্বাস্থ্যকর্মী। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, “সব বিভাগে লোক এত কম, যে কাজ চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। জেলা হাসপাতাল ঘোষণা করে কী লাভ হল বুঝে উঠতে পারছি না।” অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নিবেদিতা মিশ্র বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, গ্রুপ ডি ও অন্যান্য বিভাগে কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানানো হয়েছে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরেশ দাস বলেন, “জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ এই সবে শুরু হয়েছে। সদ্য বার্ন ইউনিট চালু হয়েছে। আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানোর কাজ চলছে। ডাক্তার ও কর্মী সংখ্যাও দ্রুত বাড়ানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। আশা করছি সমস্যাগুলি শীঘ্রই মিটে যাবে।” |
চিকিৎসক সঙ্কট |
(১৯৯১ সালের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী
জেলা হাসপাতালের স্টাফ প্যাটার্ন হওয়া উচিৎ) |
• চিকিৎসক ৪০, নার্স ৯৫, গ্রুপ ডি ৯৪, সুইপার ২৮, এক্সরে টেকনিশিয়ান ৩, ব্লাড ব্যাঙ্কে মেডিক্যাল অফিসার ২ |
এখন রয়েছে |
• চিকিৎসক ৩২, নার্স ৭৫, গ্রুপ ডি ৪৩, সুইপার ১৪, এক্সরে টেকনিশিয়ান ১, ব্লাড ব্যাঙ্কে মেডিক্যাল অফিসার ০। |
(সূত্র: হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, নিবেদিতা মিশ্র) |
|