|
|
|
|
|
|
|
রবীন্দ্রচর্চায় নতুন সংযোজন |
সৃজনের বিচিত্র পথে |
সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল তিন দশকেরও আগে। রবীন্দ্রগ্রন্থের অলংকরণ নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর পরিকল্পনায় সোমেন্দ্রনাথ বসু শামিল করে নিয়েছিলেন তরুণ আলোকচিত্রী অভীককুমার দে-কে। শুধু ছবি নয়, অনুসন্ধান চলে তথ্যেরও। পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যে আস্তে আস্তে জমে ওঠে সে পরিশ্রমের ফসল। প্রবন্ধ থেকে ছোট্ট বই। বিশ বছর পরে আবার নতুন উদ্যমে কাজে নামা, মাঝে চিত্রে রবীন্দ্রজীবনী স্মৃতির ছবি, নির্মলকুমার বসুর সাতচল্লিশের ডায়েরি-র মতো কাজ এই গবেষককে মান্যতা দিয়েছে।
নতুন পর্বেরও সূচনা হল প্রদর্শনী দিয়ে (২০১০), পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্তা অনুপকুমার মতিলালের উদ্যোগে। বিষয় আরও ব্যাপ্ত, ‘রবীন্দ্রসৃষ্টির অলংকরণ’। সেই বিষয়টিই এত দিনে বই আকারে প্রকাশ করছে প্রতিক্ষণ। |
|
রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও অলংকরণ, রবীন্দ্রগ্রন্থের বিভিন্ন সংস্করণের (মূলত বাংলা ও ইংরেজি) প্রচ্ছদ-অলংকরণ এই বইয়ের কেন্দ্রে। রবীন্দ্ররচনার উন্মেষপর্বে বাংলা বইয়ের অলংকরণ কোন পর্যায়ে ছিল, তার বিবরণ থেকে শুরু করে অলংকৃত রচনার সংশ্লিষ্ট বহু খুঁটিনাটি তথ্য সংকলন করেছেন অভীককুমার দে। আছে অন্যের ছবির সঙ্গে রবীন্দ্ররচনা ব্যবহারের কথাও-- বসুমতী প্রকাশিত ভবানীচরণ লাহার তোলা মডেলদের আলোকচিত্র সংকলন শোভা-য় তাঁর কবিতা ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হন রবীন্দ্রনাথ, যদিও সেটি ছিল ‘বিশ্বভারতী অনুমোদিত’। পরে নরেন্দ্র দেবের কাব্য-দীপালি বইতেও নারী-প্রতিকৃতির সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছিল রবীন্দ্র-কবিতার উদ্ধৃতি!
রবীন্দ্রসৃষ্টির অলংকরণ বাংলা বইপত্রিকার অলংকরণের এক বিশেষ ইতিহাসকে ধরে রাখল। বহু দুর্লভ ছবি এই বইয়ের সম্পদ। সঙ্গে বাঁ দিকে প্রচ্ছদে রবীন্দ্রনাথ অঙ্কিত ‘একাকিনী’ (বিচিত্রিতা) এবং ডানে নন্দলাল অঙ্কিত দ্য প্যারটস ট্রেনিং-এর প্রচ্ছদ।
|
কলকাতার পথনাম |
কেরল থেকে এসে কলকাতার প্রেমে মজেছিলেন পি থনকপ্পন নায়ার, সে পঞ্চাশ বছর আগের কথা। আশি পেরনো মানুষটি আজও সে মায়া কাটাতে পারেননি। লিখেছেন গোটা পঞ্চাশ বই, ঘেঁটেছেন কলকাতার ইতিহাসের বিচিত্র সব নথিপত্র। সংকলন করেছেন দুর্লভ লেখাপত্র। জাতীয় গ্রন্থাগারে এখনও তিনি নিয়মিত পাঠক। সিকি শতাব্দী আগে নায়ার কলকাতার পথনামের ইতিহাসের উপর এমনই এক নথি-সংকলন করেছিলেন আ হিস্টরি অব ক্যালকাটাজ স্ট্রিটস নামে। বিপুলায়তন সেই বইয়ে পুরসভার নথি, পত্রপত্রিকা ও অন্যান্য ইংরেজি সূত্র থেকে পথনামের তথ্য সংকলিত হয়েছিল। অনেক দিন ধরেই দুর্লভ এই বইটি সম্প্রতি পুনর্মুদ্রণ করেছে ‘পুঁথি পুস্তক’। সংযোজিত হয়েছে কিছু নতুন ছবি।
|
মহীনের ঘোড়াগুলি |
‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ আর তার জনক গৌতম চট্টোপাধ্যায় (১৯৪৮-’৯৯) বাঙালির স্মৃতিতে আজও জীবন্ত। তাঁকে আর তাঁর শিল্পিত স্বভাব নিয়ে স্মৃতিচারণ, নিবন্ধে ভরপুর নতুন ২০ (সম্পা: দিগন্ত রায় চৌধুরী এবং সব্যসাচী দত্ত)। পত্রটিতে প্রচ্ছদ ছাড়াও তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু স্কেচ করেছেন হিরণ মিত্র। জীবনপঞ্জির সঙ্গে রয়েছে অ্যালবামপঞ্জিও। রয়েছে সাক্ষাৎকার, যেখানে গৌতম বলেছেন ‘আমি আসলে লোকসংস্কৃতির প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষিত হই... আমি এই আঙ্গিকটার সঙ্গে প্রচলিত অন্য কোন নাট্য আঙ্গিকের মিল খুঁজে পাই না।’
|
ডোভার লেন |
৬২ বছরে পা দিয়েও কি তার জৌলুস কমেছে! মনে তো হয় না। এ বারেও ‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’ স্বমহিমায় ২২-২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে নজরুল মঞ্চে। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের দিকপাল শিল্পীরা ‘ডোভার লেন’ মঞ্চে থাকবেন। প্রবীণ ও নবীন শিল্পীদের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে শিল্পীতালিকা, যা ইতিমধ্যেই কলকাতা ও বহির্বঙ্গের উচ্চাঙ্গ সংগীতপ্রেমী শ্রোতাদের উৎসাহিত করেছে সারারাতব্যাপী এই অনুষ্ঠানে আসতে। বিদেশি শ্রোতারাও আসছেন। কিংবদন্তি শিল্পীদের পরবর্তী প্রজন্মের উপস্থিতি বাড়তি পাওনা। সন্তুরে শিবকুমার শর্মার পুত্র রাহুল শর্মা, সেতারে রবিশঙ্কর-কন্যা অনুষ্কা শঙ্কর ও সরোদে আলি আকবরের পুত্র আলম খান। এ বছরের সংগীতসম্মান সম্মাননা লাভ করবেন বিশিষ্ট সানাইশিল্পী আলি আহমেদ হুসেন খান। উদ্বোধন ২২ জানুয়ারি, সন্ধে সাড়ে সাতটায়। প্রধান অতিথি নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গোটা অনুষ্ঠানটির নিবেদনে ‘দেশ’।
|
শতবর্ষে |
কলকাতার স্কুলে ভর্তি হতে পিতা যাত্রাভিনেতা পঞ্চানন ঘোষের হাত ধরে জন্মভূমি কচুয়া গ্রাম ছেড়ে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের বাসায়। অসীম কৌতূহলে একদিন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি! ৯ বছরের বালককে কবিগুরুর আশীর্বাণী: ভাল হও, ভাল কর। বটানিক্যাল গার্ডেনে কিশোর-হৃদয় ক্ষতবিক্ষত বিখ্যাত বটবৃক্ষে নিষ্ঠুর দর্শনার্থীর কাটাছেঁড়া দেখে। তরুলতার প্রতি অনুরাগেই স্নাতক উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে। কুস্তি শেখা, সাহিত্য চর্চা, তালিম শাস্ত্রীয় সংগীতে, বেহালাবাদনে। ১৯৪০-এ দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের চাকরি ছেড়ে কলকাতায় শিক্ষকতা শুরু। সে সময় নিয়মিত কথিকা সম্প্রচার বেতারের ‘বিদ্যার্থীদের জন্য’-য়, প্রবন্ধ লেখা ‘দেশ’ পত্রিকায়। তাঁর হাত ধরেই ১৯৪৮-এ জন্ম ‘আসর’ পত্রিকার। ১৯৬০ থেকে কর্মক্ষেত্র কলকাতা বেতার। মজদুরমণ্ডলীর আসর-এর সেই সঞ্চালক সত্যচরণ ঘোষের (১.২.১৯১৪-৯.৮.১৯৯৭) স্মরণে আনন্দ অবকাশ এবং জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির যৌথ উদ্যোগে ১ ফেব্রুয়ারি জীবনানন্দ সভাগৃহে দুপুর ২টোয় স্মৃতিচারণায় থাকবেন নানা জন। প্রকাশিত হবে স্মরণিকাও।
|
বিশেষ বক্তৃতা |
|
৫২ বছর আগে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুর পরিবারের কৃতী সদস্যদের নিয়ে সারা বছরই নানা অনুষ্ঠান করে রবীন্দ্রভারতী। এ বার কবির নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির শতবর্ষ উপলক্ষে শুরু হচ্ছে ‘বিশেষ বক্তৃতামালা’। সারা বছর ধরেই বক্তৃতা দিতে আহুত হবেন নানা বিশিষ্ট জন। প্রথম বক্তা সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক আশিস নন্দী, বিষয়: ‘সেল্ফ, অ্যান্টি-সেল্ফ অ্যান্ড ক্রিয়েটিভিটি’। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির উদয়শঙ্কর প্রেক্ষাগৃহে ২১ জানুয়ারি বিকেল ৪টেয়। পরে বক্তৃতাগুলি প্রকাশেরও পরিকল্পনা রয়েছে। অন্য দিকে আশিস নন্দী ‘প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতা’ দিলেন সদ্য। বিষয় ছিল: ‘মেমরি ওয়ার্ক’ (স্মার্ত সংস্কৃতি)। প্রশ্ন তুললেন ‘আধুনিকতা’ ও ‘প্রগতি’র চালু ধারণা নিয়ে, ‘সেকুলার’ রাষ্ট্রেও গণহত্যার প্রসঙ্গটি খেয়াল করিয়ে দিলেন। তাঁর আশা, এতদিন প্রান্তিক ও বিস্মৃত মানুষজনের স্মৃতির যে সমস্ত আপাত অকিঞ্চিৎকর ও নগণ্য ভাণ্ডারকে সচেতন ভাবে উপেক্ষা করে আসা হয়েছে, স্মার্ত সংস্কৃতির চর্চা তার পুনর্মূল্যায়নেও আমাদের বাধ্য করবে।
|
পথিকৃৎ |
সালটা ১৯৭১। কলকাতা থেকে কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পুব বাংলায় ঢুকে পড়েছিলেন ছবি তুলতে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ছবি তোলার সময়ে খবর এল, খানসেনারা আসছে। ঝোপের মধ্যে ক্যামেরা লুকিয়ে রেখে মাথায় হাঁড়ি চাপিয়ে নেমে পড়লেন কাছের পুকুরে। পঁচিশ মিনিট জলের তলায় থাকার পরে জানা গেল, খানসেনারা সরে গিয়েছে। ভিজে জুবজুবে হয়ে কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লেন। পূর্ব ভারতে মুভি-ক্যামেরা-র পথপ্রদর্শক, সেই দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায় চলে গেলেন ৮৬ বছর বয়সে। আজকের অনেক আলোকচিত্রী তাঁর ছাত্র। ঢাকায় জন্ম, দু’বছরেই চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৫৮-য় শুরু ছবি তোলা। ১৯৬৫ সালে কাঁধে তুলে নেন মুভি-ক্যামেরা। প্রায় ৪০ বছর যুক্ত ছিলেন দূরদর্শনের সঙ্গে।
|
পঞ্চাশে প্রাক্তনী |
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁরা বিভিন্ন বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন ১৯৬৪-তে। তারপর সবাই ছড়িয়ে পড়েন দেশবিদেশে। সংখ্যাটা ছিল ৫৩২। পঞ্চাশ বছর পর তাঁদের অনেকেই নানা ভাবে যোগসূত্র গড়ে তুলেছেন। আয়োজিত হয়েছে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এবং ড. ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে। সপরিবার অনেকেই আসবেন বিদেশ ও দেশের নানা জায়গা থেকে। আড্ডা, স্মৃতি রোমন্থনের পাশাপাশি সমসাময়িক সামাজিক ও প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হবে সেমিনার, আলোচনা, সংগীতানুষ্ঠান, নাট্যাভিনয়, বিভিন্ন প্রকাশনা। উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তন ডিন পীযূষ সোম, প্রধান অতিথি উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী।
|
দিলীপকুমার স্মরণ |
‘তাঁর গাওয়া শ্যামাসঙ্গীত অপূর্ব।... তাঁর গাওয়া তানসেন শুনে গ্রেগরিয়ান মেলডির সঙ্গে মিল পেলাম...’ ১৯২০ সালে দিলীপকুমার রায়ের গান শুনে মন্তব্য করেন রমাঁ রলা।ঁ পরে পন্ডিচেরির বাসিন্দা, পুণেতে হরিকৃষ্ণ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সেই কবি, ঔপন্যাসিক, সাধক, সুরস্রষ্টা এবং গায়ককে বাঙালি ভুলতে বসেছে। ২২ জানুয়ারি তাঁর ১১৭তম জন্মদিনে আইসিসিআরে তাঁকে নিয়ে বলবেন ইতিহাসবিদ লিওনার্ড গর্ডন। দ্বিজেন্দ্রলাল-পুত্র দিলীপ সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। সুভাষ এবং শরৎচন্দ্র বসু দু’জনকে নিয়ে লিওনার্ড রচনা করেন সুখপাঠ্য ব্রাদার্স এগেনস্ট রাজ। বুধবারের অনুষ্ঠানে থাকবেন শুভাপ্রসন্ন, দিলীপ রায়ের লেখা পাঠ করবেন বরুণ চন্দ। রাঘব এবং ঋদ্ধি গেয়ে শোনাবেন তাঁর গান। এ দিকে মহাজাতি সদনে ২৪ জানুয়ারি ৩টেয় বিশেষ অনুষ্ঠান ‘স্বাধীনতার প্রেক্ষিতে নেতাজির ভাবনা’। পৌরোহিত্যে রজতকান্ত রায়।
|
সংস্কৃতি ও ই |
ব্যবসা, শিল্প, বিশ্বায়ন ইত্যাদি নিয়ে এমন একটা উন্মাদনার সৃষ্টি করা হচ্ছে যে আমাদের বিচার-বুদ্ধি-বোধ বা সংস্কৃতি ক্রমশই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কিন্তু একটা নতুন শ্রেণিও উঠে আসছে, যারা শিক্ষায় প্রথম প্রজন্ম হিসেবে স্থান ও অধিকার লাভ করছে, যারা বইকে ধারণ করেই নিজেদের চিনতে বা বুঝতে চাইছে। তাদের কাছেই পৌঁছতে হবে বাংলা বই নিয়ে, তাতে বাঁচবে বাংলা সংস্কৃতিও।— বলছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর তত্ত্বাবধানেই ২৪ জানুয়ারি পার্ক স্ট্রিটের অক্সফোর্ড বুক স্টোরে বিকেল ৪টেয় আলোচনা: ‘বাংলা সংস্কৃতি, বাংলা বই’। বলবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় দীপেন্দু চক্রবর্তী স্বপ্নময় চক্রবর্তী প্রদীপ বসু অনিতা অগ্নিহোত্রী। ‘অনুষ্টুপ’-এর পত্রিকা ও অন্যান্য বই প্রকাশ উপলক্ষে এ আয়োজন। ২৩ জানুয়ারি সাড়ে তিনটেয় ওখানেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ করবেন অনুষ্টুপ-এর আর একটি বই, বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তীর থ্রিলার পাথরকুচি।
|
জন্মদিনে |
‘... সৌমিত্রকে চিনতাম। পরে তাঁর অভিনয় দেখে চমৎকৃত হবার সুযোগ ঘটেছিল। সৌমিত্রর সঙ্গে দেশের অবস্থা এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনারও সুযোগ অনেক সময়েই ঘটেছে।... আরও বহু জন্মদিন তাঁর জীবনে আসবে সেটাই আমাদের কাম্য।’— লিখেছেন অমর্ত্য সেন। ১৯ জানুয়ারি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮০তম জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে মুখোমুখি-র উৎসবে যে প্রদর্শনী শুরু হল, তার ক্যাটালগ-এ রয়েছে এই চিঠিটি। সৌমিত্রর আঁকা ছবি, তাঁর নিজের ছবি, তাঁকে নিয়ে আঁকা যোগেন চৌধুরী রবীন মণ্ডল শুভাপ্রসন্ন আর অন্যদের ছবি, তাঁর অভিনীত ফিল্মের পোস্টার-বুকলেট-লবিকার্ড ইত্যাদি নিয়ে প্রদর্শনী (কিউরেটর: জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য) গতকাল বেলা ১টায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে প্রদর্শনীর উদ্বোধনে ছিলেন যোগেন চৌধুরী শুভাপ্রসন্ন রবীন মণ্ডল ও সন্দীপ রায়। চলবে ২১ অবধি, ৩-৮টা। সঙ্গে সত্যজিতের আঁকা ‘অশনি সংকেত’-এ গঙ্গাচরণ-রূপী সৌমিত্র (রে সোসাইটি-র সৌজন্যে)।
|
জীবনঢুলি |
|
বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার অন্তর্গত পরানপুর গ্রামের গরিব ঢাকি জীবনকৃষ্ণ দাস পরিচিত ছিলেন ‘জীবনঢুলি’ নামে। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মতুয়া সম্প্রদায়ের এই মানুষটির জীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে পাকিস্তানি সেনা আর তাদের অনুগামী রাজাকারদের অত্যাচার-গণহত্যায়। চূড়ান্ত অপমান-লাঞ্ছনা নিয়েও কী ভাবে বেঁচেছিলেন, বা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিজের শিল্পকে, তা নিয়েই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেলের নতুন কাহিনিচিত্র ‘জীবনঢুলি’। সঙ্গের ছবিতে জীবনের চরিত্রে শতাব্দী ওয়াদুদ। এ দেশে প্রথম দেখানো হবে কলকাতায়, গোর্কি সদনে ২৭ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায়। বিশিষ্ট রুশ চলচ্চিত্রকার লেভ কুলেশভের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আয়োজন আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের। ২৮-৩০ অবধি দেখানো হবে তিনটি রুশ ছবিও।
|
মণিভূষণ |
এক দিকে জীবনের প্রতি তাঁর সুগভীর বিশ্বাস, ‘পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণে/ বরণীয় বীজমন্ত্রে বারংবার নবজন্ম আসে’, অন্য দিকে, ‘ছুটে যাই ফিন্কি-দেওয়া শস্যের লুন্ঠন-ধ্বংসে/ ভোটপত্র লুটায় পশ্চাতে/ ট্যাঙ্কের ঘর্ঘর শব্দে/ দমকলে খলখল দিগন্তরেখায় লাল জলে/ চক্ষুষ্মান খড়্গ ভেসে ওঠে কৌতূহলে।’ ব্যক্তিগত যন্ত্রণাকে নয়, সমষ্টির রূঢ় বাস্তবকে নিজের ভেতরে গ্রহণ করেছিলেন সদ্য প্রয়াত কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য (জন্ম ১৯৩৮)। ১৯৬২-২০১১, এই অর্ধশতকে ২৪টি কাব্যগ্রন্থে বারবার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাবানের দিকে তর্জনী তুলেছেন তিনি। |
|
অক্ষরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্তের অনায়াস অধিকারে, কবিতার ছন্দের সঙ্গে ও শানিত গদ্যের মিশেলে নিজস্ব স্বর ও ব্যঞ্জনায় এই পণ্যপ্রবণ, ধুরন্ধর, নষ্ট সমাজকে কবিতার ভাষায় প্রশ্ন করেছেন, কবিতাকে পাথেয় করেই উচ্চারিত হয়েছে তাঁর স্পষ্ট রাজনৈতিকতা। তাই তাঁর ‘শ্রীপঞ্চমী’ কবিতায় উঠে আসে, ‘সমস্ত লম্পট দার্শনিক গুপ্তচর গণতন্ত্রী আর মূর্খ শিক্ষামন্ত্রীর ছেঁড়া মাথায় তৈরি হল তাঁর কণ্ঠহার’, অথবা ‘একটি শ্লোগানের জন্ম’ বলে ওঠে, ‘‘যখন দেখি ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ তখন বুঝতে পারি/ বিষয়টা সহজে হবার নয়।” সদ্য প্রকাশিত মণিভূষণ সংকলনটি (সম্পা: সুনন্দ অধিকারী, কোরক প্রকাশন) কবির ৭৫তম জন্মবর্ষের আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ। তাঁর কবিতাযাপনের নানা দিকের প্রতি চোখ খুলে দেয় এই বই। তাঁর স্মরণে আজ, ২০ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় কলেজ স্ট্রিটে বই-চিত্র সভাঘরে আসবেন মণি-প্রাণিত বন্ধু ও পাঠকরা। ২৫ জানুয়ারি স্মরণসভা বাংলা আকাদেমিতে। সঙ্গের ছবিটি তুলেছিলেন পুলক চন্দ।
|
ভুলিনি কিছু |
তথাপি আসল সত্য এইখানে; ভুলে না যাওয়ার/ নানা দুঃখ মনে না থাকার সেও কিছু কম নয়;/ অথচ ভুলিনি কিছু মনেও রাখিনি।’ ‘সঙ্গ, নিঃসঙ্গতা, তারাপদ রায়’ নামে একটি কবিতায় লিখেছিলেন তারাপদ রায়। মৃত্যুর মাত্র সাত বছরের মধ্যে এক রকম অন্তরালে চলে গিয়েছেন সেই লেখক। অথচ হাসির গল্প, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, উপন্যাস এবং অবশ্যই কবিতায় এক আশ্চর্য রম্যতার সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে এলাসিন গ্রামে জন্ম ১৯৩৬-এ। গ্রামেই পড়াশোনার শুরু। ১৯৫১-য় উচ্চশিক্ষার জন্য এ শহরে আসা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু, তার পরে মহাকরণে সরকারি চাকরি। কিন্তু এ নিতান্ত তথ্যপরিচয়। আসল সত্য পত্রিকা-অফিসের সেই সব উজ্জ্বল আড্ডা আর একের পরে এক লেখার পরিচয়ে। শ্রেষ্ঠ হাসির গল্প, চারাবাড়ি পোড়াবাড়ি, বাংলাদেশের হৃদয় হতে, নীল দিগন্তে তখন ম্যাজিক, তোমার প্রতিমা, ছিলাম ভালোবাসার নীল পতাকাতলে স্বাধীন...পরম রমণীয় সব রচনায় আজও বেঁচে আছেন তারাপদ রায়। এ বার সেগুলি নিয়েই খণ্ডে খণ্ডে রচনাসমগ্র প্রকাশের আয়োজন। বইমেলার আগেই প্রকাশিত হল তারাপদ রায় রচনাসমগ্র ১ (সম্পাদনা নিমাই গরাই, লালমাটি)। প্রতিটি বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ ও গ্রন্থ-প্রসঙ্গ সহ সযত্ন প্রকাশনা। |
|
|
|
|
দ্বিশতবর্ষে ভারতীয় সংগ্রহশালা |
ভারতীয় সংগ্রহশালার ঠিকানা তখনও এশিয়াটিক সোসাইটির ভবন, চৌরঙ্গির উপর চোখধাঁধানো নতুন বাড়ি সবে মাথা তুলেছে ওয়াল্টার গ্র্যানভিলের নকশায়, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। ১৮৭৪ সাল। বন্ধু ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্রকে সোসাইটির মিউজিয়াম দেখাতে নিয়ে এসেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পায়ে তালতলার চটি, তাই রক্ষী ঢুকতে দিল না তাঁকে। তাই নিয়ে সে কালে কম হইচই হয়নি। কিন্তু এর মাত্র দশ বছর পর নতুন বাড়িতে নির্বিবাদে মিউজিয়াম দেখে এলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তার পর এসেছেন কত মানুষ। ১৮১৪-য় এশিয়াটিক সোসাইটির পুরনো বাড়িতে সংগ্রহশালার সূচনা, ১৮৭৮-এ নিজস্ব ভবনে প্রত্নতত্ত্ব সহ কয়েকটি গ্যালারি সাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত হল। পরবর্তী ১৩৫ বছরের ইতিহাস নিঃসন্দেহে বর্ণময়। এশিয়ার সব থেকে পুরনো এই সংগ্রহের ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র এখনও ঈর্ষণীয়। ১৯৩০ ও ১৯৪৯-এ দু’বার সংগ্রহ দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু প্রবল প্রতিবাদে তা সম্ভব হয়নি। এখনও বাইরে থেকে যাঁরা কলকাতায় আসেন, তাঁদের অন্যতম অবশ্য-দ্রষ্টব্য এই সংগ্রহশালা। |
|
দুশো বছর উদ্যাপনে খোলনলচে বদলের চেষ্টা চলছে সংগ্রহশালায়। বহিরঙ্গে নবায়ন হয়েছে, ভিতরের গ্যালারির সংস্কারের কাজ চলছে। গান্ধারশিল্প, প্রত্নতত্ত্ব, মানবজাতির ক্রমবিকাশ, অলংকরণশিল্প ও বস্ত্রশিল্প, মুদ্রা-র নতুন গ্যালারিগুলি ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা দিবসের সকালেই এক বিশেষ অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, থাকছেন রাজ্যপাল কে আর নারায়ণন, জানালেন সংগ্রহশালার অধিকর্তা বি বেণুগোপাল। সে দিনই প্রকাশিত হবে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ফার্স্ট ডে কভার ও বিশেষ ডাকটিকিট। তৈরি হচ্ছে কাফেটেরিয়া ও সুভেনির শপ। আর সে দিন বিকেল সাড়ে চারটেয় আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণ দেবেন প্রবীণ ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, বিষয় ‘মিউজিয়াম: থট্স অন ইট্স পাস্ট অ্যান্ড ফিউচার’। সংগ্রহশালা সাধারণের জন্য খোলা হবে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। দুশো বছর উপলক্ষে সারা বছর ধরেই আছে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। সঙ্গের ছবিটি ১৯৫২ সালে তোলা। |
|
|
|
|
|
|