গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বোমা-গুলি, কাটোয়ায় জখম যুবক
দিনের আলোয় দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বোমা-গুলির লড়াইয়ে অশান্ত হল কাটোয়া। জখম হলেন এক যুবক। রবিবার সকালে কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই দুষ্কৃতীরা পালায়। এলাকায় পুলিশি টহল রয়েছে।
এ দিন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ একটি ফাঁকা জমির দু’দিক থেকে বোমা-গুলি ছোড়া শুরু হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার পাশে হরিপুর গ্রাম থেকে ৩৫-৪০ জনের একটি দল বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক পেরিয়ে শহরে ঢোকে। তারা কেশিয়া মাঠপাড়ার ভিতরের দিকে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে ওই এলাকার একটি দল তাদের লক্ষ করে বোমা ছুড়তে থাকে। সঙ্গে চলে গুলি। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই ছিলেন কাটোয়া থানার দু’জন কর্মী। তাঁদের কথায়, “আমাদের চোখের সামনে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছিল। তার সঙ্গে গুলি।” পুলিশ যাওয়ার আগেই হরিপুর গ্রামের দিকে পালায় দুষ্কৃতীর দল। পুলিশ বর্ধমান-কাটোয়া রোড থেকে হরিপুর যাওয়ার রাস্তা দিয়ে মাঠে মাঠে তাদের তাড়াও করে। এর পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশ জানায়, বোমার ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময়ে কাটোয়ার হরিপুর গ্রামের ডাবলু শেখ নামে এক যুবক পড়ে গিয়ে জখম হয়েছে। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যদিও বাড়ির লোকজনের দাবি, খেতে কাজ করার সময়ে বোমার আঘাতে জখম হন ডাবলু।

বাড়ির দেওয়ালে বোমা ছোড়ার দাগ। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাঠপাড়ার রাস্তায় বোমার চিহ্ন স্পষ্ট। বেশ কিছু ঘর-বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে কুলুপ। ওই এলাকা থেকে কিছুটা এগিয়ে পাহারপুরে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির দেওয়ালে বোমার চিহ্ন। ছাদেও বোমা পড়েছে। বাড়ির ভিতরেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাড়ির কর্তা আঙুর শেখের অভিযোগ, “আমি বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। এমন সময়ে দেখি আমার বাড়ি লক্ষ করে এক দল দুষ্কৃতী বোমাবাজি করছে ও গুলি চালাচ্ছে। বাড়ির লোকেরা খুব জোর প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।” তাঁর স্ত্রী দিলু বিবি জানান, ২৫-৩০ জনের ওই দলে বড় বড় লাঠি ও বোমা হাতে অন্তত ১০-১২ জন মহিলা ছিল। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, কাটোয়ার ব্যবসায়ী রাজকুমার মণ্ডল খুন হওয়ার পরে এই সব দুষ্কৃতীরা শহর ছেড়ে পাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। এ দিন তারাই হামলা চালায়। তাঁদের অভিযোগ, গত শুক্রবার হরিপুর গ্রামের টোটন শেখ নামে যে যুবক মঙ্গলকোটে খুন হন, এ দিন হামলাকারীদের দলে তাঁর গোষ্ঠীর লোকজনও ছিল।
এলাকারই একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, টোটন শেখ খুনের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল রয়েছে কেশিয়ার মাঠপাড়ার এক দুষ্কৃতী দলের দিকে। অভিযোগ, এই দলটি মাঠপাড়ায় থেকে এলাকায় সাধারণ মানুষদের উপরে অত্যাচার করছিল। সে কারণে অনেকে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এলাকাছাড়ারা বাড়ি ফিরতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বেধে যায়। বাসিন্দাদের একাংশের মতে, ওই খুনের পরে পুলিশ তল্লাশি চালালে এ দিনের ঘটনা ঘটত না।

জখম ডাবলু শেখ।
তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামের অভিযোগ, “নিহত টোটন শেখকে কংগ্রেস নিজেদের সমর্থক বলে দাবি করেছিল। গ্রাম থেকে শহরে ঢুকে নিহতের গোষ্ঠীর লোকেরা হামলা চালায়। কাজেই কোন দল এই হামলা চালিয়েছে, তা আমরা না বললেও চলে। ওই এলাকায় আমাদের দলের একটি দফতরেও ভাঙচুর চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “এক দল দুষ্কৃতী দিনে তৃণমূল আর রাতে সিপিএম করে এলাকা সন্ত্রস্ত করে রেখেছে।” সিপিএম অবশ্য ঘটনার সঙ্গে কোনও যোগের কথা মানেনি।
জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফি বছরই তাদের গোলমালের জেরে দু’তিনটি খুনের ঘটনা ঘটে। তবে শহর এলাকা শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ দিনের ঘটনা নিয়ে কোনও পক্ষই অভিযোগ করেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.