দূষণ ও চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্যে নির্দিষ্ট সময়ের দেড় মাস আগেই কুলিক পক্ষিনিবাস ছেড়ে পরিযায়ীরা চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তর দিনাজপুরের একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের নালিশ, বনকর্মীর একাংশের গাফিলতি ও নজরদারির অভাবেই পক্ষিনিবাসে দূষণ ও চোরাশিকারিদের দাপট বাড়ছে। তাই পরিযায়ীও এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগে কুলিক ছেড়েছে।
বন দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, এ বছর ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে প্রবল শীত ও টানা কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। পরিযায়ী পাখিরা সেই আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারায় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ধীরে ধীরে ছানাদের নিয়ে পক্ষিনিবাস ছেড়েছে। বন দফতরের আর একটি অংশ অবশ্য বলেছেন, পরিযায়ীরা অন্য বছরের তুলনায় এ বছর দু’মাস আগেই প্রজনন শেষ করায় আগেই পক্ষিনিবাস ছেড়ে চলে গিয়েছে। রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত বলেন, “পক্ষিনিবাসে দূষণ ও চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য রুখতে দফতরের কর্মী ও আধিকারিকদের নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। পরিযায়ী পাখিরা এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগে কেন পক্ষিনিবাস ছেড়ে চলে গেল তা জানতে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” |
ফাঁকা পড়ে পক্ষিনিবাসের গাছগুলি। কুলিকে তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি। |
প্রতি বছর জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরণ, করমোন্যান্ট, ইগ্রেট-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কুলিকে আসে। প্রজননের পর ফ্রেব্রুয়ারি মাস নাগাদ তারা ছানাদের নিয়ে ফিরে যায়। গত বছর ৬৫৩১১টি পরিযায়ী পক্ষিনিবাসে এসেছিল। তারা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পক্ষিনিবাস ছেড়ে গিয়েছে।
স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি জানিয়েছে, বন দফতরের কিছু কর্তার গাফিলতি ও কর্মীদের নজরদারির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরেই পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় চোরাশিকারিরা বেজি, কচ্ছপ, কাঠবিড়ালি ও খরগোশ শিকার করছে। তারা পক্ষিনিবাসের গাছে উঠে পরিযায়ী পাখিদের ডিমও চুরি করছে। বন দফতরের তরফে পক্ষিনিবাস চত্বরে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক নিষিদ্ধ করা হলেও কর্মীদের নজরদারি না থাকায় ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই পর্যটকরা উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিকে মাতেন। পক্ষিনিবাসের নানা এলাকায় কাগজ ও থার্মোকলের থালা, গ্লাস-সহ বিভিন্ন আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও সেগুলি সাফাই করা হচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতি থাকার অনুকূল না হওয়ায় পরিযায়ীরা সময়ের আগে পক্ষিনিবাস ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছে।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই রায়গঞ্জে প্রবল শীত ও টানা কুয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে। তাপমাত্রা ৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এ আবহাওয়ায় পক্ষিনিবাসের কুলিক নদী ও জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের মাছ, শামুক, সাপ ও কীট পতঙ্গের মতো খাবার মিলছে না। এই কারণেই তারা এ বার নির্দিষ্ট সময়ের আগে পক্ষিনিবাস ছেড়ে চলে গিয়েছে বলে বনকর্তাদের ধারণা।
আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিও। পিপল ফর অ্যানিম্যালের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়ার অভিযোগ, “বন দফতরের কর্তারা নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে মিথ্যে কথা বলছেন। দূষণ ও চোরা শিকারিদের দাপটেই এ বছর পরিযায়ী পাখিরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে পক্ষিনিবাস ছেড়ে চলে গিয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য ও পর্যটকদের স্বার্থে আমরা বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই আন্দোলনে নামছি।” পিপল ফর অ্যানিম্যাল ২-এর জেলা সম্পাদক অজয় সাহা বলেন, “এক মাসের মধ্যে পক্ষিনিবাসে দূষণ ও চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাগীয় বন দফতর ঘেরাও ও প্রশাসনিক কাজ অচল করা হবে।” |