সিপিএমের বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহে ধাক্কা
শাসক থেকে চলে আসতে হয়েছে বিরোধীর আসনে। বিস্তীর্ণ এলাকায় সংগঠনে ধস নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেল সিপিএমের বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহের কর্মসূচি। ‘ঘরছাড়া’ কর্মীদের সাহায্য করতে ও বিভিন্ন মামলার খরচ জোগাড়ে জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহে নেমেছিল সিপিএম। পুরভোট থাকায় মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম শহরে কর্মসূচির সময় ছিল ৩ থেকে ১২ জানুয়ারি। আগে এই ধরনের কর্মসূচিতে সহজেই ৪-৫ কোটি টাকা উঠে আসত। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত ৫০ লক্ষ টাকাও সংগ্রহ হয়নি। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটিরও বেশি। পরিস্থিতি দেখে ১৬ থেকে ৩১ জানুয়ারি ফের অর্থ সংগ্রহের ডাক দিয়েছে জেলা সিপিএম।
কেন অর্থ সংগ্রহে সাড়া মিলল না? সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “সর্বাত্মক আক্রমণ চলছে। নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও প্রতিকূলতার জন্য বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্মের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হচ্ছে।” একই সঙ্গে দীপকবাবুর দাবি, “অর্থ সংগ্রহে সাড়া মিলেছে। দলের কর্মীরা যাঁদের কাছে গিয়েছেন, তাঁদের সকলেই সাহায্য করেছেন। কিছু এলাকায় কর্মীরা পৌঁছতে পারেননি, সেটা অন্য ব্যাপার।”
বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহ সিপিএমের পুরনো কর্মসূচি। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। রাজ্যে পালাবদলের পর জেলা সিপিএমের তহবিলে চাপ বেড়েছে। শুধু ‘ঘরছাড়া’ কর্মীদের সাহায্য নয়, বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমার খরচও ওই তহবিল থেকে দিতে হচ্ছে। দলের জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, “যে সব মামলায় একাধিক জোন এলাকার কর্মীরা যুক্ত, সেই সব মামলার খরচ জেলা থেকে বহন করা হয়।” গেল বছরও পরিস্থিতি ‘প্রতিকূল’ ছিল। তাও ওই বছর বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহ কর্মসূচি থেকে ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি সংগ্রহ হয়েছিল। এ বার পরিস্থিতি কেন তার থেকেও খারাপ, ইতিমধ্যে দলের অন্দরে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সিপিএমের জেলা কমিটির ওই সদস্যের স্বীকারোক্তি, “রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন এই কর্মসূচি নিয়ে সে ভাবে ভাবতেই হত না। দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই ভাবতে হচ্ছে! এখন অর্থ সংগ্রহ অভিযানে তেমন সাড়া মেলে না। এক সময়ে যাঁরা স্বেচ্ছায় অর্থ সাহায্য করতেন, এখন তাঁদের কাছ থেকে সামান্য অর্থই মিলছে। ফলে, জেলা পার্টির তহবিলে চাপ বাড়ছে।” ওই সদস্য জানাচ্ছেন, “জেলা পার্টির তহবিল মূলত পার্টির আভ্যন্তরীণ সংগ্রহের উপর নির্ভরশীল। জেলা কমিটির সদস্য, জোনাল ও লোকাল কমিটির সম্পাদকগণ ও জেলা কমিটির প্রত্যক্ষ অধীনে থাকা লোকাল কমিটি ও শাখা কমিটির সদস্যদের একদিনের লেভি ও একদিনের আয় তহবিলে জমা পড়ে। এ ছাড়া, বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদ- বিধায়কদের ভাতা, পেনশন, কমিটি সভা, অধিবেশন ভাতা, জেলা পরিষদের সদস্যদের ভাতা এই তহবিলে জমা নেওয়া হয়।”
পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএমকে এখন বহু মামলার খরচ চালাতে হয়। যেমন, দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলা, নেতাই মামলা, ছোট আঙারিয়া মামলা। জেলায় সব মিলিয়ে ১৪টি কঙ্কাল মামলা রয়েছে। এই সব মামলায় অভিযুক্ত দলের শতাধিক নেতা-কর্মী। সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, “মামলার খরচ সামলাতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি যা তাতে জেলা পার্টির আর্থিক ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজকর্ম সচল রাখার প্রয়োজনে জেলাকে আর্থিক দায়দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আগের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আরও বেশি আর্থিক দায়দায়িত্ব সমগ্র পার্টির উপর পড়বে। ফলে, জেলা তহবিলে চাপ বাড়বে।” ‘চাপ’ যে বাড়বে, তা নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন। কিন্তু, সমস্যার সমাধান হবে কী ভাবে, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। রাজ্যে পালাবদলের আড়াই বছর পরও কেশপুর-গড়বেতার মতো পুরনো ঘাঁটিতে দল মাথা তুলতে পারছে না।
লালগড়ের জেলায় সিপিএমের মোট ৩৩টি জোন কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ১২-১৩টি জোন কমিটিতেই দলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সংগঠন পুনর্গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-যুব-মহিলা এবং কৃষকদের গুরুত্ব দিতে চাইছে সিপিএম। যাঁরা নিষ্ক্রিয়, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জোন এলাকায় লোকাল কমিটি ধরে ধরে সদস্যদের কাজের পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, কে বা কারা নিষ্ক্রিয়। অব্যাহতি নিয়ে তাঁদের মতামতই বা কী। শাখা সম্পাদকদের ব্যক্তিগত কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। নতুন এজি সদস্য করার জন্য তালিকা তৈরির উদ্যোগ চলছে। সঙ্গে যাঁরা শক্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এলাকায় সংগঠনের ক্ষতি করছেন, তাঁদেরও চিহ্ণিত করা হচ্ছে। ‘সন্ত্রাস- অত্যাচারের’ মধ্যেও যাঁরা মাথা উঁচু করে পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সাহসের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে সংগঠনে এবং পার্টির কাজকর্মে যুক্ত করা হচ্ছে। তাও সার্বিক পরিস্থিতির তেমন হেরফের হচ্ছে না। সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, “বিস্তীর্ণ এলাকায় সংগঠনের ভীত আলগা হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহের কর্মসূচি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তা মজবুত হতে আরও সময় লাগবে! রাতারাতি কিছু হবে না! ” অবশ্য তাঁর দাবি, “সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভয়ভীতি কাটিয়ে সতর্কতার সঙ্গে রাজ্য, জেলা এবং জোনাল কমিটির গৃহীত কর্মসূচিগুলো পালন করার মধ্য দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করা অবশ্যই সম্ভব। কারণ, জনগণ দলের সঙ্গে আছেন।” এই আত্মবিশ্বাসই যে ভরসা!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.