|
|
|
|
এক সুতোয় যে যাঁর ঘুড়িই ওড়ালেন সলমন ও মোদী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৪ জানুয়ারি |
এক জনের হাতে সুতো। আর এক জনের হাতে লাটাই। অথচ ঘুড়ি যেন দু’টো! এ ভাবেই আজ আমদাবাদের আকাশে ঘুড়ির প্যাঁচ খেললেন সলমন খান ও নরেন্দ্র মোদী। একটি ঘুড়ি যদি সলমনের নতুন ছবির সাফল্য কামনা, দ্বিতীয়টি তবে দিল্লির কুর্সিতে বসার স্বপ্ন। চলচ্চিত্র আর রাজনীতির জগতের সমান্তরাল দু’টি প্রত্যাশাই আজ এক মাঠে নিয়ে এসেছিল এই নেতা ও অভিনেতাকে। নিজের-নিজের লক্ষ্য পূরণে পরস্পরকে কাজে লাগালেন তাঁরা, কিন্তু মন খুলে সমর্থন দিলেন কি একে-অপরকে? সেই প্রশ্নকে ঘিরেই জল্পনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনীতির জগতে।
বিতর্কটা উস্কে দেওয়ার মূলে সলমন। চোখে সোনালি ফ্রেমের রোদ-চশমা, পর্দার চুলবুল পান্ডে-সুলভ ‘দাবাং’ নিয়ে যিনি পাশে দাঁড়ানো মোদীকে ‘ভাল মানুষ’ বলেন। কিন্তু একই সঙ্গে বলেন, “যোগ্যতম ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন। ঈশ্বর দেশের জন্য সেরা মানুষটিকে বেছে রেখেছেন, তিনিই বসবেন প্রধানমন্ত্রীর পদে।” পরক্ষণেই আগামী ছবি ‘জয় হো’-র নায়ক সলমন আবার পথ বাতলে দেন আম-ভারতবাসীর জন্যও। তা হল, প্রত্যেকে নিজের নিজের এলাকায় সবচেয়ে ভাল মানুষটিকে বেছে নিলেই, দেশ পাবে তার সেরা শাসককে। সলমনের মন্তব্যে সন্দেহ জাগে, কাদের কথা বলছেন সলমন! রাজনীতির ময়দানে এসেই সাড়া ফেলে দেওয়া আম আদমি পার্টি তো ঠিক এই কথাটাই বলে যাচ্ছে নিরন্তর! আর তাতেই তো মাত্র ন’মাসের চেষ্টায় তারা এখন দিল্লির ক্ষমতায়। এখন লোকসভা ভোটেও পথের কাঁটা বিজেপি-র। |
|
ভোটের প্রচার না ছবির প্রচার! ঘুড়ি উৎসবে পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী
ও সলমন খান।
মঙ্গলবার আমদাবাদে। ছবি: এপি। |
কারও ঘুড়ি না কেটেও তিনি যে নেতাদের মতোই সংলাপের প্যাঁচ খেলতে পারেন, সলমন তার প্রমাণ দিলেন এর পরই। ঘুড়ি উৎসবে আসা হাজার কয়েক দেশি-বিদেশি মানুষ, টিভি ক্যামেরা ও বুমের সামনে তিনি বলেন, “মোদী সাহেব গুজরাতে এত উন্নয়ন করেছেন, তাঁর ভবিতব্যে যা স্থির রয়েছে তা-ই হবে।... উনি আমার অত্যন্ত পছন্দের মানুষ।” এর পরেও নাছোড় সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফের বলেছেন, “আমি তো গুজরাতের লোক নই, মুম্বইয়ের লোক। তাই আমার কাছে যোগ্যতম প্রার্থী বাবা সিদ্দিকি এবং প্রিয়া দত্ত।”
তাঁর দাদা সঞ্জয় দত্ত এক সময় সমাজবাদী পার্টিতে ঝুঁকলেও প্রয়াত কংগ্রেস সাংসদ সুনীল দত্তের কন্যা প্রিয়া কিন্তু বরাবরই বাবার পথে থেকেছেন। কংগ্রেসের সাংসদ প্রিয়া ক’দিন আগেও রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এ-হেন প্রিয়ার নাম করেই সলমন বুঝিয়ে দেন, রাজনৈতিক ভাবে কাউকে সমর্থনের পথে হাঁটছেন না তিনি। তাঁর কথা বড় জোর নির্বাচন কমিশনের স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি যে কারও হয়ে প্রচার করতে আসেননি, হালকা রসিকতার মাধ্যমে সেটাও নিজের মুখেই সলমন স্পষ্ট করে দিয়েছেন এ দিন। তবে রসিকতার মধ্য দিয়েই। সলমনের কথায়, “আমি তো আমার (ছবির) প্রচারটাই করে উঠতে পারছি না ঠিক মতো!” সলমন যদি এই ধরি দর্শক না-ছুঁই ভোট নীতি নিয়েই থাকলেন, তবে তাঁর সঙ্গে মিলে মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উড়িয়ে আর লাভ কী হল বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর?
বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতারা, এমনকী রাজনীতির পর্যবেক্ষকরাও কিন্তু মনে করছেন, অবশ্যই কিছু লাভ হল মোদীর। কারণ তিনি জানেন, লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে হলে সমাজের বিভিন্ন অংশের ভোট টানতে হবে তাঁকে। কট্টর মুসলিমদের মন জয় করা যদি না-ও সম্ভব হয়, তবু সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক তুলে ধরতে পারলে, সমাজের বাকি অংশের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতি এলে, প্রয়োজনে নতুন শরিক দলকে পাশে পাওয়ার রাস্তাও সুগম করবে এটা। সে দিক দিয়ে দেখলে জনপ্রিয় তারকা সলমন খান ও কিছু হাসিখুশি মুসলিম মুখের পাশে মোদীর উপস্থিতিই রাজনৈতিক ভাবে জোরালো একটা বার্তা দিল বলে মনে করছে বিজেপি শিবির।
‘বিয়িং হিউম্যান’, সলমনের কালো গেঞ্জির ওপর উজ্জ্বল কমলা রং দিয়ে লেখা শব্দ দু’টি কী বার্তা দিল, তা তিনিই জানেন। তবে তাঁর আসার আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রচারে তৎপর ছিলেন মোদী। টুইট করে জানিয়েছেন তাঁদের দুপুরের খাবারের মেনু। আম আদমি পার্টি এখন সমাজের নানা স্তর থেকে সফল মানুষদের এনে প্রচারের মুখ করতে উদ্যোগী। আপ-এর নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেওয়া ক্যাপ্টেন গোপীনাথ, মল্লিকা সারাভাই, টিভি-সাংবাদিক আশুতোষ এমনই কিছু উদাহরণ। আপ-এর মোকাবিলায় মোদীও সেই পথেই হাঁটছেন। তাই ঘুড়ির সুতো যখন সলমনের হাতে, পাশে তখন মোদীর হাতে লাটাই।
|
মোদীর নামে |
মঙ্গলবার থেকে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে অর্থ সংগ্রহের কাজে নামল বিজেপি। দিল্লিতে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ আজ নিজে এক হাজার টাকা দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু করেন। প্রায় দশ কোটি পরিবারের কাছে গিয়ে দশ টাকা থেকে হাজার টাকা অনুদান করতে পারবে সাধারণ মানুষ। এই অর্থ সংগ্রহের পিছনে মোদীর লক্ষ্য হল, বিজেপির কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ স্থাপন করুন। কোন এলাকায় ভোটদানের ধরন কী হবে তারও ইঙ্গিত এই অভিযান থেকে পাওয়া যাবে বলে ধারণা বিজেপি নেতৃত্বের। |
|
|
|
|
|