অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও গোলমাল হয়নি। তাই আগামী বছর থেকে ভোট নেওয়ার কাজটাও অনলাইনে করার কথা ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। এ ভাবে ভোটদান নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনাও হয়েছে। এ বারের ছাত্রভোট মিটে গেলে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার কাজ অনলাইনে সারতে পারলে যে ছাত্রভোট অনেক নির্বিঘ্ন হত, শিক্ষা দফতরের কর্তারাও তা মানছেন। প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষের ভাবনাচিন্তাকে স্বাগত জানিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতায় এ বছর অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা গেলেও জমা নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “প্রেসিডেন্সির তুলনায় আমাদের ছাত্রছাত্রী অনেক বেশি। তাই কলকাতার পক্ষে অনলাইনে ভোট চালু করা কঠিন।” প্রেসিডেন্সির ছাত্র-সংখ্যা ২,৫০০। কলকাতায় ১৮ হাজার আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার। অনেক বেশি পড়ুয়া থাকায় তাঁদের পক্ষেও অনলাইনে ভোট চালু করা কঠিন বলে মনে করছেন যাদবপুরের কর্তারা। তবে এ বারের ভোটপর্ব মিটলে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা হতে পারে বলে জানান এক কর্তা।
মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া, প্রেসিডেন্সিতে এ বার দু’টোই হয়েছে অনলাইনে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত মঙ্গলবার জানান, আগামী বছর থেকে অনলাইনে ভোটদানের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীরাই এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সফ্টঅয়্যার তৈরি করতে পারবেন বলে প্রাথমিক ভাবে কথা হয়েছে। দরকারে এই কাজের আউটসোর্সিং-এর কথাও ভাবা হতে পারে।”
দেশে প্রথম অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা চালু করেছে গুজরাতের গাঁধীনগর পুরসভা। ২০১১ সালে। সেখানে যত জন অনলাইনে ভোট দেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই ভোট দেন। হয় বাড়িতে বসে নিজের কম্পিউটার থেকে বা ই-বুথ থেকে।
ছাত্র সংসদগুলির দখল নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের রেষারেষি লেগেই থাকে। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে সংসদ দখল নিষ্কণ্টক করার প্রবণতা বাম জমানায় ছিল এসএফআইয়ের। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-ও একই রোগে আক্রান্ত বলে অনেকের অভিযোগ। গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে হানাহানিতে প্রাণ হারান এক সাব-ইনস্পেক্টর। তার পরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন মাস ছয়েকের জন্য বন্ধ করে দেয় সরকার। সম্প্রতি সেই প্রক্রিয়া ফের শুরু হয়েছে।
পুলিশ-প্রশাসনকে যুক্ত করে নির্বাচনে শান্তি বজায় রাখার উপরে জোর দেওয়া হলেও অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার কথা বলেনি রাজ্য সরকার। কলেজ পরিচালন সমিতিগুলিও এই পদ্ধতিতে তেমন উৎসাহী নয়। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমিতিগুলি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। ছাত্র সংসদ নিজেদের ছাত্র সংগঠনের দখলে রাখতে সমিতির কর্তারাও অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করার বিরোধী। কারণ, বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা যদি বাধার মুখে মনোনয়নপত্র তুলতে না-পারেন, তা হলে সহজেই জয় পাওয়া যায়।
অধ্যক্ষ পরিষদ অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, কলেজগুলিতে নির্বাচন হয় নিজস্ব বিধি মেনে। অনলাইন প্রক্রিয়া চাইলে সেই বিধি পরিবর্তন করতে হবে। তার জন্য সময় দরকার। আগামী বছর অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রক্রিয়াটা অনলাইনে হলে অনেক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি যে এড়ানো যায়, প্রেসিডেন্সিই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। প্রেসিডেন্সি কলেজের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে অশান্তি, গোলমাল হয়েছে। প্রায় ফি-বছর ছাত্রভোটের আগে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের অপহরণের অভিযোগও উঠত। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরে অবশ্য এ বারেই প্রথম নির্বাচন হবে। অনলাইন পদ্ধতি অবলম্বন করায় এ-পর্যন্ত তাতে গোলমাল বাধেনি।
অনলাইনে ভোটদানের ব্যবস্থা হলে পড়ুয়ারা আপত্তি করবেন না?
টিএমসিপি, এসএফআই, আইসি-সহ সব ছাত্র সংগঠনই জানিয়েছে, দলে আলোচনা না-করে এ ব্যাপারে তারা কোনও মন্তব্য করবে না। তবে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেন, “এই পদ্ধতি রূপায়ণের আগে দেখতে হবে, সেটা কতটা নিরাপদ। এতে যদি জালিয়াতির সুযোগ বাড়ে, তা হলে সেটা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও করা দরকার।”
প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের দিক থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টস দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী বলেন, “অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীরা যথেষ্ট উৎসাহ দেখিয়েছেন।”
|