দলবেঁধে গিয়েছেন শপিং মলে। লাল-কালো কুর্তিটা ভারী পছন্দ হলেও দেখেই দিব্যি বুঝছেন কোনও ভাবেই তাতে আঁটবেন না। অগত্যা সেই বিরস মুখে বাড়ি ফেরা। বন্ধুরা সব নতুন কেনা জামা নিয়েই মশগুল। শুধু
আপনিই বাদ!
তুমুল কাজের চাপে মোটা হওয়া নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়? ফলে দিন দিন বাড়ছে বাড়তি মোটা অর্থাৎ প্লাস সাইজ হয়ে ওঠার সমস্যা। এবং জামাকাপড় কিনতে গিয়ে নাজেহাল হওয়াটাও চেনা ছবি হয়ে উঠছে ক্রমশই। কী পরব, কোনটাতে একটু রোগা দেখাবে ভেবে আকুল হয়েই দেরি হয়ে যাচ্ছে পার্টি-বিয়েবাড়িতে।
কিন্তু মোটা বলে কি সাজবেন না? নিশ্চয়ই সাজবেন এবং ফ্যাশন মেনেই বলছেন শহরের ডিজাইনারেরা। তাঁদের মতে, ভারতীয় চেহারার গড়ন এমনিতেই মোটার দিকে। কমবয়সে রোগা থাকলেও পঁচিশ পেরিয়ে আস্তে আস্তে মোটা হতে থাকেন বেশির ভাগই। তা বলে যা হয় কিছু পরলেই হল, এমনটা ভাবার কোনও প্রয়োজন নেই। একটু ভেবেচিন্তে সাজলে তাঁরাও হয়ে উঠতে পারেন যথেষ্ট ট্রেন্ডি, যথেষ্ট নজরকাড়া। এমনিতেও সাইজ জিরো-র বদলে কার্ভি শরীরের কদর ফিরছে ভারতীয় ফ্যাশনে। র্যাম্প থেকে টলিউড-বলিউড দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন
কার্ভি সুন্দরীরা।
ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বলছেন, “এ ধরনের চেহারায় স্ট্রেট কাটের, আরামদায়ক ফিটের পোশাকে রোগা দেখাবে। আঁটোসাঁটো পোশাকে পেট-কোমরের বাড়তি মেদ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরা উচিত নয় বেশি ঢিলেঢালা, বেলুন ড্রেসের মতো ফোলা-ফোলা পোশাকও। তাতে আরও মোটা দেখায়। একই কারণে শীতের পোশাকে লেয়ারিং-এর বদলে একটা সোয়েটার বা জ্যাকেট পরাই ভাল। ছেলেরা খোলা জ্যাকেটের বদলে বোতাম আঁটা জ্যাকেট পরুন। তাতে পেটের বাড়তি মেদ ঢাকা যাবে। মেয়েরা এড়িয়ে চলুন শর্ট ড্রেস। কারণ, এ ধরনের চেহারায় খোলা পা ভাল দেখাবে না। এথনিক পোশাকের ক্ষেত্রে তাঁত, সিল্কের ভারী শাড়ি নয়, বাছুন জর্জেট, শিফনের মতো হাল্কা শাড়ি। তবে স্লিভলেস ব্লাউজ একেবারেই নয়। আর ছেলেরা পরুন ঢিলেঢালা কুর্তা।”
অভিষেকের পরামর্শ, “বড় বড় প্রিন্ট, হরাইজন্টাল স্ট্রাইপ, কনট্রাস্ট রং এড়িয়ে চলুন। বাছুন কালো, খয়েরীর মতো গাঢ় রঙের শেড। সলিড কালারের একরঙা পোশাকে রোগা দেখাবে। মানাবেও ভাল।”
এখানেই ভিন্নমত ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা। তাঁর মতে, মোটা বলেই কালো বা অন্য গাঢ় রঙের পোশাক ছাড়া পরা যাবে না, এমন নয়। মানালে যে কোনও রং-ই পরা যায়, তবে প্রিন্ট যেন হয় ছোট। এবং অবশ্যই পোশাকের কাটছাঁট যেন চেহারার সঙ্গে মানানসই হয়। চন্দ্রাণী বলেন, “মেয়েরা পরতে পারেন ট্রাউজার্স, পালাজো-টপ। করসেট পরলে ভাল দেখাবে। পরা যায় লং স্কার্ট, কাফতান বা ম্যাক্সি ড্রেসও। তবে শাড়ির সঙ্গে পরুন থ্রি কোয়ার্টার্স বা ফুলহাতা ব্লাউজ। আর ছেলেরা পরুন প্যান্ট-র্শাট, লম্বা ঝুলের কুর্তা বা পাঞ্জাবী। টাইট টিশার্ট চলবে না একেবারেই। তাতে পেটের মেদ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।”
কিন্তু সমস্যাটা যে সেখানেই। প্লাস সাইজে ইচ্ছেমতো পোশাক চাইলে যেতে হবে দর্জির কাছে। কিংবা দ্বারস্থ হতে হবে ডিজাইনারদের। পছন্দসই রেডিমেড পোশাক কিনতে হলে প্লাস সাইজ ক্রেতাদের ভরসা শুধু নামী বিপণি চেনের ‘ফর অল’ সেকশনে নানা ধরনের পশ্চিমি পোশাক, কুর্তা, সালোয়ার স্যুট, প্যান্ট, শার্ট ইত্যাদি।
সম্প্রতি রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে একটি বুটিক নিয়ে এসেছে প্লাস সাইজের রেডিমেড পোশাক। বুটিকের কর্ত্রী, ডিজাইনার দেবীপ্রিয়া গুহের দাবি, শহরে এমন বুটিক এই প্রথম। তিনি জানান, প্লাস সাইজের মেয়েদের জন্য তাঁর বুটিকে রয়েছে ডেনিম, জর্জেট, সিল্কের তৈরি নানা ধরনের ফ্যাশনেবল গাউন, টপ, ক্যাজুয়াল ও ফর্মাল ওয়্যার। এ ছাড়া, মাপ দিয়ে পছন্দমতো পোশাক বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। কিন্তু রেডিমেড পোশাকের এ সুযোগ আপাতত মেয়েদের জন্যই।
ছেলেদের জন্য নয় কেন? দেবীপ্রিয়া বলেন, “যে পোশাকটা কিনবেন, সেটা আর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না সেই ভাবনা থেকেই বুটিকে আসেন মানুষ। এই চাহিদাটা ছেলেদের থেকে মেয়েদের মধ্যেই বেশি। তাই তাঁদের জন্যই এমন একটা বুটিক খোলার কথা ভেবেছিলাম। তবে ছেলেদের কথাও মাথায় রয়েছে। ইচ্ছে আছে আগামী বছর ছেলেদের জন্যও রেডিমেড পোশাক তৈরি করব।” |