স্বামীজির সার্ধশতবর্ষপূর্তি
বর্ণময় শ্রদ্ধাঞ্জলি
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধশতবর্ষের সূচনাপর্বের মতো সমাপ্তিও কম বর্ণময় হল না। ‘ক্রিয়েটিভ ওয়েভ’-এর উদ্যোগে, আইসিসিআর-এর দুটি গ্যালারি জুড়ে চলছে বিমান দাস পরিকল্পিত বিশেষ প্রদর্শনী ‘দ্য স্যাফ্রন রেবেল— দি ওয়ান অ্যান্ড ওনলি স্বামী’। চিন্তামণি কর, প্রকাশ কর্মকার, বিপিন গোস্বামীর পাশাপাশি আছে নবীনদের কাজও (সঙ্গে ডান দিকে বিমল কুণ্ডুর ভাস্কর্য)। প্রায় আশিজন শিল্পীর এই প্রদর্শনী চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত (১১-৮টা)। এ দিকে স্বামীজি-প্রতিষ্ঠিত, ১৮৯৬ থেকে একটানা প্রকাশিত ‘প্রবুদ্ধ ভারত’-এর বিশেষ সংখ্যা ‘স্বামী বিবেকানন্দ অ্যান্ড ফিউচার চ্যালেঞ্জেস টু রিলিজিয়ন’-এ (সঙ্গে তারই প্রচ্ছদ) নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধের সঙ্গে আছে বহু বর্ণাঢ্য শিল্পচিত্র।
“এক বার বিবেকানন্দের সম্মুখেই তাঁহার একটা বক্তৃতার সুখ্যাতি করিতেছিলাম, সে আমাদের মুখে হাত চাপিয়া মুখ বন্ধ করিয়াছিল, এবং সেই সঙ্গে বলিয়াছিল, ‘তোরা যদি অমন কথা বলবি তো আমি দাঁড়াব কোথা? কার সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে সখ্যের সাধ মিটাইব!”
লিখেছেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বামীজির চার সমবয়সির দুর্লভ স্মৃতিকথার সংকলন স্বামী বিবেকানন্দ: চার সমবয়সীর রোমন্থন (সূত্রধর)। অন্যরা হলেন ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, জলধর সেন ও চুনীলাল বসু। আট দশক পেরিয়ে আজও সক্রিয় সাহিত্য-প্রতিষ্ঠান ‘রবিবাসর’ ১৯ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় ২২৩/১ বিধান সরণিতে এক বিশেষ অধিবেশনে শ্রদ্ধা জানাবে স্বামীজিকে। ‘বিবেকানন্দ ও বাংলা সাহিত্য’ বিষয়ে বলবেন উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ও সুনীল দাশ।
চমৎকার মৃদঙ্গ বাজাতেন স্বামী বিবেকানন্দ। নানা বোল সংগ্রহ করে তিনি সঙ্গীতকল্পতরু গ্রন্থে সংকলনও করেন। তা থেকেই ৩৪টি বোল বেছে বাজিয়েছেন চঞ্চল ভট্টাচার্য আর নিশান্ত সিংহ। সর্বানন্দ চৌধুরীর পরিকল্পনায় নির্মিত এই সিডি প্রকাশ করল রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার। উদ্বোধন থেকে বেরিয়েছে দেবাশিস দত্তর কণ্ঠে স্বামী বিবেকানন্দের লেখা, গাওয়া ও অন্যান্য ‘সাধন সঙ্গীত’ এবং স্বামীজি রচিত স্তোত্র, বাংলা-ইংরেজি কবিতা ও গানের সংকলন নিয়ে ‘ভয়েস অব পিস’।

নৈরাজ্যে স্বতন্ত্র
সিরিয়াস সিনেমা পত্রিকা ‘কল্পনির্ঝর’-এর সম্পাদক সন্দীপ রায় ‘হিমঘর’-এর মতো কাহিনিচিত্র করে সাড়া ফেলেছিলেন, তথ্যচিত্রও করেছেন মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে। এ বারে তাঁর একশো মিনিটের তথ্যচিত্র প্রকাশ কর্মকার আর তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে— ‘নৈরাজ্যে স্বতন্ত্র প্রকাশ’ (সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায় নিবেদিত)। অম্লান দত্ত, শিবনারায়ণ রায়, তপন সিংহ, পার্থসারথি চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের কথায়; সমীর আইচ, সন্দীপ সরকার প্রমুখ শিল্পী ও শিল্প-সমালোচকের বিচারে; শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতে; স্বতঃস্ফূর্ত, সুস্পষ্ট আত্মকথনে নিজের সৃষ্টির রাজ্যে স্বরাট প্রকাশ কর্মকার রয়েছেন সারা ছবি জুড়ে। সঙ্গে আমন্ত্রণপত্রে তাঁর আত্মপ্রতিকৃতি, আর তাঁর ৮০ বছর নিয়ে কালীকৃষ্ণ গুহের পদ্য:
দীর্ঘপথের চলায়
এইটুকু যায় বলা—
প্রকাশ কর্মকার
মাপেন অন্ধকার।

ম্যাক্সমুলার ভবনে ছবিটি দেখানো হবে মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।

সৃজন কথা
১৯৭৯-তে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ৪৬ বছরের জীবন থেকে চলে গিয়েছিলেন— বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কিছু কাহিনি রচনার শেষে। তাঁর একটি স্কেচ এঁকেছিলেন দীপ্ত নামের এক কিশোর। দীপ্তর বাবা কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত ছিলেন দীপেন্দ্রনাথের বন্ধু। দীপেনকাকুর জন্য গভীর একক দুঃখ থেকেই ছবিটি আঁকা দীপ্ত-র। স্কুল শেষ হতে না হতেই দীপ্ত বাড়ি থেকে পালান— পাছে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে তাঁর ছবি আঁকা শেখা আটকানো হয়! খুঁজে পেতে ফিরিয়ে এনে তাঁকে ভর্তি করা হল ‘ইন্ডিয়ান কলেজ অব আর্টস’-এ। ১৯৮৩-’৮৮ সেখানেই। কয়েক বছর ছিলেন মধুপুরে, তিনি ও তাঁর স্ত্রী লীলা। কলকাতার অ্যাকাডেমি-তে তাঁর একক হয়েছে চার বার, দিল্লিতে ‘ললিতকলা’য়, হায়দরাবাদেও। ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টেয় ‘চিত্রকূট গ্যালারি’-তে ওঁদের দু’জনের আঁকা ছবির প্রদর্শনী শুরু করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দীপ্ত-র লেখা বই অনন্তের দিনলিপি, কবিতা গদ্যে ছবিতে স্মৃতিময়, আর লীলার লেখা একটি বই, ছবি নিয়ে, ছবির কথা, প্রকাশ করবেন দেবেশ রায়। সঙ্গের ছবিটি লীলার আঁকা। প্রদর্শনী ১৮ অবধি, ৩টে-৮টা।

ঐতিহ্যের পথে
ঐতিহ্যের পথে হেঁটে ১৫০ বছরে পা দিল কলকাতার সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ। ১৮৬৫-র ২৫ জানুয়ারি চার্চ মিশনারিদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দ্য ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ’। ২৫ সুকিয়া স্ট্রিট থেকে ১২ ওল্ড কলেজ স্কোয়ার হয়ে ৩৩/১ আমহার্স্ট স্ট্রিটে থিতু হয় কলেজ (১৯০৮)। ১৯১৪-য় নতুন নামকরণ হয় ‘সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ’। প্রাক্তনীদের মধ্যে বিপিনচন্দ্র পাল, নিশীথরঞ্জন রায়, নিমাইসাধন বসু, বিষ্ণু দে এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নাম উল্লেখযোগ্য। কলেজের ইতিহাসের বহু দুষ্প্রাপ্য নথি সংরক্ষিত রয়েছে এখানে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আর্টস কলেজ হিসেবে অ্যাফিলিয়েটেড এবং ভারতের অন্যতম প্রাচীন এই শিক্ষায়তনের ১৫০ বছরের অনুষ্ঠান শুরু ২৫ জানুয়ারি। অনুষ্ঠান এবং ‘ফার্স্ট ডে কভার’ উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও কলকাতার বিশপ অশোক বিশ্বাস। বছরভর আছে নানা অনুষ্ঠান। এ দিকে রামমোহন কলেজ পেরিয়ে এল অর্ধ শতাব্দী। একদা এশিয়ার বৃহত্তম কলেজ বলে অভিহিত ‘সিটি কলেজ’-এর মেয়েদের বিভাগ চালু হয় ১৯৪৩-এ। পরে ১৯৬১ সালে আটটি ভিন্ন নামে সিটি কলেজ বিভক্ত হয়, মেয়েদের বিভাগটির নাম হয় রামমোহন কলেজ। প্রাক্তন অধ্যক্ষা সাধনা সরকারের চেষ্টায় রামমোহন রায়ের পারিবারিক বাসভবনটি কলেজের হাতে এসেছে, তৈরি হয়েছে বিশেষ সংগ্রহশালা ও নতুন ভবন। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে স্মরণিকা (মুখ্য সম্পাদক: শাশ্বতী দাশগুপ্ত), নানা বিষয়ের লেখা ও ছবিতে সমৃদ্ধ সংকলনটিতে আছে অতীতের কিছু স্মৃতিও।

প্রান্তিক মানব
আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন ‘প্রান্তিক মানব’! দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে আরও অজস্র শিকড়ছেঁড়া মানবের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এসেছিলেন এ পার বাংলায়। হয়েছিলেন শিয়ালদহ স্টেশনের সাময়িক বাসিন্দা। অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের সুখ-দুঃখের সেই বৃত্তান্ত পরে বিধৃত হয়েছে তাঁর দ্য মার্জিনাল মেন প্রান্তিক মানব গ্রন্থ দু’টিতে। প্রফুল্ল চক্রবর্তীর প্রান্তিক মানব বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। প্রায় দু’দশক অমিল সেই বইটির পরিবর্ধিত সংস্করণ বার করছে দীপ প্রকাশন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন আমেরিকার সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে এই গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ১৫ জানুয়ারি। একই সঙ্গে উদ্বোধন হবে হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বাস্তু বইটিরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে, বেলা দেড়টায়।

হারানো চিঠি
আমাদের জীবন থেকে চিঠি হারিয়ে গেছে। এই সে দিন আনুষ্ঠানিক বিদায় নিল টেলিগ্রাম। তা নিয়ে বিলাপ কম হয়নি, বইও লেখা হয়েছে বেশ কয়েকটি। এ বার তারই অসামান্য শিল্পিত প্রকাশ হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টারে। ‘লস্ট ইন ট্রানজিশন’ প্রদর্শনীতে সারা দেশের জনা চল্লিশ শিল্পী লেটারবক্স আর পোস্টকার্ড নিয়ে তৈরি করেছেন বিচিত্র ভুবন, আছে তাঁদের হাতে লেখা চিঠিও। চিঠির জগৎ থেকে চিঠিহীন জগৎ, অনুভূতিময়তা থেকে আবেগহীনতায় রূপান্তরের পর্বে অতীতকে স্পর্শ করার নান্দনিক প্রয়াস নাড়া দিয়ে যায়। সঙ্গের শিল্পকর্ম: পার্থ দাশগুপ্ত।

বিতর্কিকা
গ্রন্থ সমালোচনার পূর্ণাঙ্গ পত্রিকা ‘বিতর্কিকা’ সাড়া ফেলেছিল প্রথম প্রকাশেই। তৃতীয় পর্যায়ের (সম্পা: অভ্র ঘোষ মিলন দত্ত তপস্যা ঘোষ। সেতু প্রকাশনী) সাম্প্রতিক সংখ্যার বিষয় ‘দেশভাগ’। অভ্র ঘোষ লিখেছেন, ‘বই বাছাইয়ের সময় আমরা স্পষ্টত দুটি ভাগ মাথায় রেখেছিলাম। এক, ইতিহাস। দুই, সাহিত্য।’ দেশভাগের নেপথ্যে যে রাজনৈতিক কূটকচালি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ধূর্ততা, সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি সে সব নিয়ে বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই বেরনো বইপত্রের আলোচনা প্রথম ভাগে। আর দ্বিতীয় ভাগে দেশভাগ নিয়ে সাহিত্য ও স্মৃতিমূলক বইয়ের আলোচনা। বিশিষ্ট জনের বিশ্লেষণী ও বিতর্কিত প্রবন্ধে ঋদ্ধ পত্রিকাটি বাঙালিকে আরও তর্কপ্রিয় করে তুলবে। বাড়তি পাওনা দেশভাগ নিয়ে গ্রন্থপঞ্জির সঙ্গে ‘বিতর্কিকা’-র আড্ডার সংবেদী রিপোর্ট।

সবজান্তা
‘আমার স্ত্রী দীপা প্রথমে এ নাটকের রূপান্তর করবেন ভেবেছিলেন, হয়ে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। আমাদের বাড়িতে ওটা পড়েছিল বলে আমি অনুবাদে হাত দিই, দীপাও সাহায্য করেন ওঁর ভাবনা দিয়ে।’ বলছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ব্রিটিশ নাট্যকার জ্যাক পপলওয়েল-এর ‘বিজি বডি’ অবলম্বনে ইতিমধ্যেই তাঁর রূপান্তর ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে এবং হচ্ছে মুখোমুখি-র ‘সবজান্তা’। ইদানীং বাংলায় এমন ‘ক্রাইম-কমেডি’র জুড়ি মেলা ভার, সরস রহস্যে বুঁদ হয়ে থাকছেন দর্শক। ‘ওতে আমার করার কোনও চরিত্র নেই, দ্বিজেন (বন্দ্যোপাধ্যায়) চমৎকার তাঁর চরিত্রে, আর পৌলমীও ভারী ভাল।’ সৌমিত্রর কন্যার কাছেও ‘চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং, আগাগোড়া বাঙাল ভাষায় কথা বলে সে। ফলে রীতিমতো খাটতে হয়েছে আমায়, সফিসটিকেশনও ভাঙতে হয়েছে। আর বাবা সব সময় চরিত্রটাকে বুঝতে নাটকটাকে বিটুইন দ্য লাইনস পড়তে বলেছিলেন।’ সঙ্গে নাটকটির একটি দৃশ্য। সৌমিত্রর আশিতে পা দেওয়ার জন্মদিনে, ১৯ জানুয়ারি দুপুর ৩টেয় অ্যাকাডেমিতে নাটকটির অভিনয়।

গ্রন্থ চর্চা
গ্রন্থ নিয়ে বাঙালির চর্চা বড় কম দিনের নয়, কিন্তু গ্রন্থ চর্চার পত্রিকা কোথায়? এ বার বাংলা মুদ্রণের সূচনার সালটিকে শিরোধার্য করে বই-পুথির বিচিত্র ভুবনকে পাঠকের দরবারে হাজির করল ১৭৭৮ গ্রন্থচর্চা (প্রধান সম্পা: অশোক উপাধ্যায়, চার্বাক প্রকাশন)। ছাপা বই যে ই-বইকে আরও কিছু দিন ঠেকিয়ে রাখতে পারবে, বই-ভাবনার এই সুদর্শন ষাণ্মাসিকটি দেখলে সেই আশা জাগে। আলাদা আলাদা বিভাগে সাজানো সম্ভারে আছে অক্ষরশিল্প, লিখনশিল্প, মুদ্রণসংস্কৃতি, বই-ভাবনা, পত্রিকা-দর্পণ, বই সজ্জা ইত্যাদি। গ্রাফিক ডিজাইনার বিনয় সরকারের কথা যেমন জানা যায়, তেমন আশ্চর্য হতে হয় আদি পর্বের বাংলা মুদ্রণ ও অলংকরণের হুবহু প্রতিরূপ দেখে। ‘বসুমতী’-র সঙ্গে গিরিশচন্দ্র ঘোষের বই ছাপার চুক্তিপত্রটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধার, তেমনই উল্লেখযোগ্য অবনীন্দ্রনাথ-কৃত ‘হারামণি’র প্রচ্ছদ। বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সারা পত্রিকার অঙ্গসজ্জা লক্ষণীয় এবং ব্যতিক্রমী।

অন্য রকম
গ্রামে যাত্রার আসর বসেছে। বউ আর বন্ধু রুদ্রকে নিয়ে যাত্রা দেখতে এসেছে গোপাল। যাত্রা দেখে আপ্লুত গোপাল নিজেই এক সময় উঠে পড়ে মঞ্চে। খুব উচ্ছ্বাসপ্রবণ আর একটু ন্যালাখ্যাপা গোছের গোপাল। বেশ বোলচাল মারে। বাইরের লোক এ ভাবে গোপালকে চিনলেও ভেতরে ভেতরে সে শান্ত, এক জন পর্যবেক্ষক। বন্ধুকে এক দিকে ভালবাসে অন্য দিকে ঘৃণা করে। সম্প্রতি এই রকম একটি বর্ণময় চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেল ব্রাত্য বসুকে (সঙ্গের ছবি)। দক্ষিণ কলকাতায় ভবানী সিনেমার পেছনে এক শীতের সন্ধেয় শুটিং হয়ে গেল যাত্রার দৃশ্যটির। মতি নন্দীর উপন্যাস পুবের জানালা অবলম্বনে সঞ্জয় নাগ বানাচ্ছেন তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘পারাপার’। তারই একটি চরিত্র গোপাল। “মতি নন্দীর গল্প আর সঞ্জয় নাগের চিত্রনাট্যের কারণে ছবিটা করছি। উপন্যাসটা পড়ে চরিত্রটাও খুব মনে ধরল।” জানালেন ব্রাত্য। ছবিটা আসলে ১৪ বছর জেল খেটে বেরোনো এক আসামির গল্প। জেল থেকে বেরিয়ে সে মানিয়ে নিতে পারে না স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে। সেখান থেকেই গল্প অন্য দিকে মোড় নেয়। রুদ্র’র ভূমিকায় দেখা যাবে বাংলাদেশের অভিনেতা রুবেলকে। রুবেল এই প্রথম কলকাতায় ছবিতে অভিনয় করছেন। এ ছবিতে একসঙ্গে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও পাওলি দামকে।

নক্ষত্র
নক্ষত্রপতনই বটে। ‘নক্ষত্র’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা-প্রাণপুরুষ, বাংলা থিয়েটারের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব শ্যামল ঘোষ প্রয়াত হলেন ৮১ বছর বয়সে। বহুরূপী-এলটিজি বা শম্ভু মিত্র-উৎপল দত্তর রাজত্বকালে একদল নবযুবক শহরে গড়ে তুলেছিলেন ‘গন্ধর্ব’ নাট্যদল। তাঁদের সাহসী বিচরণ নাট্যের নানা ক্ষেত্রে— কাব্যনাট্য রচনা ও চর্চা, পত্রিকা প্রকাশনা, শ বা লোরকার নাট্যানুবাদ, নাট্য-প্রযোজনায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গণনাট্য-নবনাট্যের বাইরে এক নতুন হাওয়া। আর সেখানে নাটের গুরু ছিলেন শ্যামল ঘোষ। তার পর ‘গন্ধর্ব’ ছেড়ে ‘নক্ষত্র’। শ্যামল আবিষ্কার করলেন কবি-নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়কে, তাঁর ‘মৃত্যুসংবাদ’, ‘চন্দ্রলোকে অগ্নিকাণ্ড’, ‘ক্যাপ্টেন হুর্রা’ নাটকের মঞ্চায়নে। তা ছাড়াও স্মৃতিতে অমলিন ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’ (দ্য রেইনমেকার) বা শুভেন্দু সেনের ‘নয়নকবীরের পালা’ এবং আরও অনেক। অভিনয়, মঞ্চচিত্রণ বা পোশাক পরিকল্পনায় নতুন নাট্যভাষা রচনার নিরন্তর প্রয়াস ছিল তাঁর। জীবিকার তাগিদে যোগ দেন যাত্রায়। আবারও ফিরে এসেছিলেন থিয়েটারে। ‘নাভানা’ প্রকাশনায় চাকরি করেছেন, দক্ষ ছিলেন লে-আউট এবং ডিজাইনে। তাঁর নক্ষত্র প্রকাশনা রাজা অয়দিপাউস বা সওদাগরের নৌকা— চোখ ও মন দুই-ই কাড়ে। তথ্যচিত্রনির্মাতা এবং আকাশবাণীর কৃতী অভিনেতা। অনেক গীত রচনা করেছেন। কলমের ভাষাও যে কতটা জোরালো ছিল তাঁর, স্মৃতি সত্তা নাট্য গ্রন্থে ছড়িয়ে রয়েছে সে প্রমাণ। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা সংস্কৃতির আখ্যান ধরা আছে এতে। সম্প্রতি এর ‘প্রতিক্ষণ’ সংস্করণ প্রকাশিত হল। তাঁর স্মরণে নাট্যকর্মী এবং গুণগ্রাহীরা মিলিত হবেন তপন থিয়েটারে, আজ সন্ধ্যা ৬ টায়।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.